সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এনআইসিইউ নেই

শিশু রোগীরা বিপাকে

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মিরপুর দারুস সালামের বাসিন্দা শারমিন আকতার (১৯) গত ১৩ জুলাই প্রসব বেদনা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের গাইনি অবশ ইউনিটের ৩০১০ নং 'হাইরিস্ক প্রেগনেন্সি ওয়ার্ডে' ভর্তি হন। ওই দিনেই তিনি হাসপাতালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু নিউমোনিয়াজনিত কারণে নবজাতক শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) ভর্তি করার পরামর্শ দেন। তবে সোহরাওয়ার্দীতে এনআইসিইউ ইউনিট না থাকায় শিশুটির বাবা ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ কয়েক জায়গায় যান। সেখানেও এনআইসিইউ ফাঁকা না থাকায় হাসপাতালের এক চিকিৎসকের পরামর্শে শ্যামলীর নূরজাহান টাওয়ারে অবস্থিত ঢাকা ট্রমা সেন্টারে নিয়ে যান। তবে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় ভর্তির দুইদিন পর শিশুটি মারা যায়। শিশুর নানী সীমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে আক্ষেপ করে যায়যায়দিনকে বলেন, 'এতবড় সরকারি হাসপাতালে এনআইসিইউ সাপোর্ট না থাকায় অন্য চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি করাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। দুইদিনে ২৭ হাজার টাকাও খরচ হয়েছে। অথচ আমার মেয়ের প্রথম সন্তানকেই বাঁচাতে পারলাম না।' গত ১৪ জুন নোয়াখালীর মাইজদী সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা ৮ দিন বয়সী এক নবজাতককে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রেফার করেন। নবজাতকের অভিভাবক আব্দুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালে আসার পর ডাক্তাররা বাচ্চার এনআইসিইউ সেবার দরকার বলে জানান। এখানে এই চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় মগবাজারের রাশমনো প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে দুইদিনে সাড়ে ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়। এছাড়া পূর্ব রাজাবাজার থেকে আসা গাইনি অবশ ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসাধীন আরেক প্রসূতির স্বজন রাজিয়া সুলতানা যায়যায়দিনকে বলেন, গত রবিবার তার বোনের প্রসব বেদনার কারণে হাসপাতালে আনার পর শয্যা না পেয়ে অন্য রোগীদের মতো বারান্দায় বিছানা পাতেন। দুইদিন পর তার বোন একটি স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু একদিনের নবজাতককে নিয়েই খোলা বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। এমন জায়গায় থাকলে বাচ্চার জন্ডিস হওয়া, এমনকি এনআইসিইউ সাপোর্টও লাগতে পারে জানিয়ে একজন চিকিৎসক তাদেরকে বাড়ি চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, ১৯৬৭ সালে (উইকিপিডিয়ায় ১৯৬৩) রাজধানীর শেরে-বাংলা নগরের এই চিকিৎসাকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে তৃতীয় পর্যায়ের (টারশিয়ারি লেভেল) হাসপাতালটিতে বেশকিছু আধুনিক চিকিৎসার সমন্বয় ঘটলেও এনআইসিইউ বা 'নিবিড় নবজাতক পরিচর্যাকেন্দ্র' না থাকায় গুরুতর অসুস্থ শিশুদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পরও 'নিবিড় নবজাতক পরিচর্যাকেন্দ্র' (এনআইসিইউ) না থাকায় সেবা বঞ্চিত হচ্ছে শিশুরা। অথচ 'নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট' চালু থাকলে এমন ভোগান্তি পোহাতে হতো না। এদিকে শিশু ও নবজাতক মেডিসিন ইউনিটে এনআইসিইউ'র বিকল্প হিসেবে কী কী সেবা দেয়া হয় জানতে চাইলে ওয়ার্ডটিতে দায়িত্বরত কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স যায়যায়দিনকে বলেন, এনআইসিইউ ইউনিট না থাকায় গুরুতর অসুস্থ শিশুর জন্য ১০টি ইনফ্যান্ট ওয়ার্মার, ২টি সিপ্যাপ মনিটর ও ১৪টি ফটোথেরাপি মেশিন দিয়ে আপাতত কাজ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে গাইনি অবশ বিভাগের রেজিস্টার ডা. শারমিন যায়যায়দিনকে বলেন, নবজাতক থেকে শুরু করে ১২ বছর বয়সিদের শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে প্রয়োজন সাপেক্ষে তাৎক্ষণিক এনআইসিইউ সেবা লাগতে পারে। এখানে বড়দের জন্য আইসিইউ সেবা থাকলেও শিশুদের এনআইসিইউ ব্যবস্থা নেই। বর্তমানে ৮৫০ শয্যার বিপরীতে শিশুদের চিকিৎসায় ১১ নং শিশু ও নবজাতক (মেডিসিন) ওয়ার্ডে ৭৫টি শয্যা ও ১৩ নং শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে ১৩টি বেড রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১২০ থেকে ১৫০ জন শিশু ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর বাইরে গাইনি অবশ ইউনিটে প্রসূতি মায়েদের সঙ্গে নবজাতক শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে। সবশেষে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম বড়ুয়ার কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করে তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালের জায়গা কম হওয়ায় এনআইসিইউ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ভার্টিক্যাল এক্সটেনশন (ভবন সম্প্রসারণ) পরিকল্পনায় এটি আছে। কাজ শেষ হলে কার্যক্রম শুরু হবে। এছাড়া লিভার ও কিডনি ট্রান্সপস্নান্টসহ আধুনিক অন্যান্য বিভাগ চালু হবে। তখন আর কোনো রোগীকে ফিরে যেতে হবে না।