রোগীকে বেশি ওষুধ দেয়া ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট

প্রকাশ | ২০ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

বিবিসি বাংলা
দেশে ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে লেখার অস্পষ্টতা এবং রোগীকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ওষুধ দেয়া নিয়ে নানা অভিযোগের মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সারাদেশে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তারা বিষয়টির তদারকি করবে। স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এ নিয়ে আইনকানুন না থাকায় ডাক্তারদের অনেকেই ওষুধ কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখছেন এবং রোগীর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ওষুধ দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখছেন। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, চিকিৎসক এবং রোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে অল্প সময়ের মধ্যে তারা একটি আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রেসক্রিপশনে লেখার অস্পষ্টতার বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল দুই বছর আগে (২০১৭ সালে)। আদালত চিকিৎসকদের স্পষ্ট এবং পড়ার উপযোগী করে প্রেসক্রিপশন বা ব্যবস্থাপত্র লিখতে বলার পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তা তদারকি করতে বলেছিল। এছাড়া চিকিৎসকদের অনেকে রোগীকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ওষুধ দিয়ে প্রেসক্রিপশন ভারী করে দিচ্ছেন, এটিকে এখন বড় অভিযোগ হিসেবে সামনে আনছেন স্বাস্থ্য অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, অনেক চিকিৎসক ওষুধ কোম্পানির স্বার্থ দেখে প্রেসক্রিপশন লিখছেন। বেসরকারি সংগঠন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্ণধার ড. জাফরউলস্নাহ চৌধুরী বলেন, কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকায় পরিস্থিতি উদ্বেগজনক দিকেই এগোচ্ছে। 'সরকারের কোনোরকম নীতিমালা নেই। অন্যদেশে যেমন ধরেন, ব্রিটেনে রোগীদের জন্য যত প্রেসক্রিপশন লেখা হয়, সেগুলো র?্যানডম বাছাই করে প্রেসক্রিপশন অডিট করা হয়। এর বেসিসে হেলিথ সার্ভিস থেকে ডাক্তারকে প্রতি মাসে চিঠি লিখে ভুল থাকলে তা ধরিয়ে দেয়া হয়। 'কিন্তু আমাদের দেশে এ কাজটা হয় না। ফলে ওষুধ কোম্পানির স্বার্থকে তারা দেখে।' কিছুদিন আগে কুষ্টিয়ায় ৩৫ বছর বয়স্ক এক নারী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন। তার নানা বিষয়ে ডায়াগনসিস করার পর তাকে জ্বরের ওষুধ ছাড়াও ছয়টি ওষুধ দেয়া হয়েছিল; কিন্তু অসুস্থতা যখন বাড়ছিল, তখন তিনি ঢাকায় এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ কমিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু এ ব্যাপারে তাকে অনেকদিন ভুগতে হয়েছে।' ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক মালিহা রশিদ বলেন, অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগ চিহ্নিত করার পরই সে জন্য সুনির্দিষ্ট ওষুধই দিয়ে থাকেন। 'রোগটা যখন চিহ্নিত করা যায়, তখন ওই রোগের সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা করাটাই আমি ভালো মনে করি। এছাড়া যারা অভিজ্ঞ ডাক্তার, তাদের প্রেসক্রিপশনের সাইজ অত বড় করার কারণ নেই।' যদিও চিকিৎসকদের অনেকে বিষয়গুলো মানতে রাজি নন। কিন্তু বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বা বিএমএর এক কর্মকর্তা ড. জামালউদ্দিন বলেন, প্রয়োজনের বেশি ওষুধ দেয়ার বিষয় এলে, তখন নৈতিকতার প্রশ্ন আসে। এসব বিষয়ে কোনো অভিযোগ না এলে তাদের অ্যাসোসিয়েশনের কিছুই করার নেই।' একই সাথে তিনি বলেন, 'অনেক সময় ডাক্তার একটা বা দুইটা ওষুধ লিখলে, তাতে রোগীরা সন্তুষ্ট হতে চায় না। তারা মনে করে, কী ডাক্তার যে কম ওষুধ দিল। এমন অভিজ্ঞতা আমার আছে। ফলে বেশি ওষুধ লেখা- এটা দুই দিকেই সাইক্লোজিক্যাল একটা বিষয়ও থাকে।' এদিকে জেলা প্রশাসকদের সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক মানুষের উদ্বেগের বিষয় তুলে ধরে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব বাবলু কুমার সাহা বলেন, 'ডাক্তারদের এ ধরনের নির্দেশনা আমরা দিয়ে থাকি, যাতে রোগীর ওপর বারডেন বা চাপ না হয়। যে ওষুধটি তাকে দেয়ার কথা, সেটিই যেন দেয়া হয়। ইভেন অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে একটা কথা হচ্ছে, হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। সে ব্যাপারেও আমরা নির্দেশ দিয়েছি যে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা যাবে না।' কিন্তু এটি মনিটরিংয়ের কোনো ব্যবস্থা আছে কি-না, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, 'এ বিষয়েও মন্ত্রী বুধবার সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দিয়েছেন, যাতে করে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমেও বিষয়গুলো তদারকি করা হয়।' কোনো আইন বা নীতিমালা না থাকার প্রশ্নও যে আসছে, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে বাবলু কুমার সাহা বলেন, 'স্বাস্থ্যসেবা এবং সুরক্ষা নামে একটি আইন প্রক্রিয়াধীন আছে। এটি আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছিলাম। তারা কিছু বিষয়ে সংশোধনীর জন্য ফেরত পাঠিয়েছে। আমরা সেগুলো সংশোধন করে এখন দ্রম্নত আবার ভেটিংয়ের জন্য পাঠানোর চেষ্টা করছি।' 'এই আইন পাস হলে রোগী এবং চিকিৎসক উভয়েরই নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।' তবে এর খসড়ায় কিছু বিষয়ে চিকিৎসকদের সংগঠনগুলো আপত্তি ছিল এবং সেগুলো নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনা চলছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।