রাবেয়া জেগেছে রোকেয়া এখনো অচেতন
প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
রাবেয়া জেগে ওঠেছে, মাকে চিনতে পেরে কোলে উঠতে চেয়েছে। তবে ওর বোন রোকেয়া এখনও অচেতন, তাকে রাখা হয়েছে ভেন্টিলেশনে।
বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির একদল চিকিৎসক ৩৩ ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাবনার জোড়া মাথার এই দুই বোনকে আলাদা করেন গত ২ আগস্ট।
দফায় দফায় ৪৪ ধরনের অস্ত্রোপচারের মধ্যে দিয়ে তাদের আলাদা করার কাজটি শেষ হয়, যার মধ্যে কয়েকটি হয় হাঙ্গেরিতে।
শনিবার ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিন বছর বয়সি এই দুই বোনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে এসে চিকিৎসকরা বলেন, জটিল এসব অস্ত্রোপচার খুবই ঝঁকিপূর্ণ, তবে এখন পর্যন্ত তারা সফল।
এমন কোনো জটিলতার মুখে তাদের পড়তে হয়নি, যা অনুমিত ছিল না। তবে এ পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে তাতে চিকিৎসকরা 'আশাবাদী'।
রাবেয়া শুক্রবার সকালে চোখ মেলেছে জানিয়ে তাদের মা তাসলিমা খাতুন চোখ মুছেতে মুছতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'ও আম্মু বলে ডেকেছে, কোলে নিতে বলেছে।'
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় মূলগ্রাম ইউনিয়নের শিক্ষক দম্পতির সন্তান রাবেয়া ও রোকেয়ার জন্ম ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই। বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা খাতুন ওই এলাকার অমৃতকুন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
এই দুই বোনের চিকিৎসায় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় তারা রাবেয়া-রোকেয়াকে আলাদা জীবন দেয়ার কঠিন চেষ্টায় হাত দেন। আর এই চেষ্টায় তাদের সঙ্গী হয়েছেন হাঙ্গেরির একদল চিকিৎসক।
কেবল হাঙ্গেরির অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল ফাউন্ডেশনের (এডিপিএফ) এই চিকিৎসকরই এ জটিল কাজে হাত দিতে রাজি হয়েছিলেন।
সামরিক চিকিৎসা মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ফসিউর রহমান জানান, জোড়া মাথার শিশুদের আলাদা করার জন্য বিশ্বে এ ধরনের অস্ত্রোপচার হয়েছে এ পর্যন্ত ১৭টি। তার মধ্যে মাত্র পাঁচজোড়া শিশু এখনও বেঁচে আছে।
রাবেয়া-রোকেয়াকে আলাদা করার পর তাদের ত্বক ও টিশু যাতে দ্রম্নত বেড়ে উঠতে পারে সেজন্য 'ইমপস্ন্যান্টিং এক্সপান্ডার' নামের নতুন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিশ্বে প্রথম।
সিরাজগঞ্জের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিলস্নাত বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এ অস্ত্রোপচার একটি 'মাইল ফলক'।
তিনি বলেন, 'এই দিনটা আমরা সব সময় স্মরণ করব। পৃথিবীতে এ ধরনের অস্ত্রোপচার খুব কম হয়েছে। সেগুলোর একটি আমাদের হাত দিয়ে হলো। বাংলাদেশের জন্য এটা অনেক বড় অর্জন।'
চিকিৎসাপেশা থেকে রাজনীতিতে আসা এই সংসদ সদস্য বলেন, 'আমরা কখনও ভাবিনি এ ধরনের অস্ত্রোপচার সম্ভব। কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উৎসাহ আর নির্দেশনাতেই এটা সম্ভব হয়েছে।'