গাজীপুরে নারীর খন্ডিত লাশ দাম্পত্য কলহেই খুন

প্রকাশ | ১৫ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আসপাডা মোড় এলাকায় সোমবার রাতে ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ভেতর থেকে পলিথিনে মোড়ানো সুমা আক্তার ওরফে সুমির (২৩) খন্ডিত লাশ উদ্ধারের পর মঙ্গলবার গভীর রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকা থেকে সুমির খুনি স্বামী মামুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বুধবার দুপুরে তার কার্যালয়ে এ ব্যাপারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, শ্রীপুর থানার ওসি মো. লিয়াকত আলী, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজীব কুমার সাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় পুলিশ সুপার জানান, মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে কবিরপুর এলাকার ফুপাত ভাইয়ের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মামুন জানায়, দাম্পত্য কলহের জেরেই মূলত তাকে খুন করা হয়েছে। প্রায় দেড় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। এটি ছিল তাদের উভয়েরই দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই উভয়ের মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দেয়। পারিবারিক কলহ এবং সুমির কাছে থাকা ৪০ হাজার টাকা লোপাট করার জন্যই মামুন গার্মেন্ট ছুটির দিন বৃহস্পতিবার সুমিকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক পাঁচ কেজি এবং ২৫০ গ্রাম ধারণক্ষমতার পলিথিন, একটি চাকু, তিনটি ট্রাভেল ব্যাগ ও ঘুমের ওষুধ কিনে ঘরে রাখে মামুন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হালিমের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রুটি দিয়ে তাকে খাওয়ানো হয়। পরে সুমি অচেতন হয়ে পড়লে বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। তার মৃতদেহ ওই বাড়ির গোসলখানায় নিয়ে গিয়ে ধারাল চাকু দিয়ে প্রথমে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করা হয়। পরে শরীরের (বিভিন্ন অংশের) শুধু মাংসের পাঁচটি খন্ড করে তা পলিথিনে ভরে বসতঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়। তার দেহের অবশিষ্ট ১০টি টুকরা দুটি বড় ট্রাভেল ব্যাগের ভেতর ভরে এবং শুক্রবার ভোরে ও সন্ধ্যার পর সুযোগ বুঝে মামুন বসতঘরে তালা আটকে পর্যায়ক্রমে (ব্যাগ দুটি) পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী এলাকায় ব্রিজের নিচে শীতলক্ষ্যার শাখা বানার নদীতে ফেলে দেয়। এর আগে বৃহস্পতিবার সুমি ঈদের আগে বেতন পেয়েছে। এদিন সুমি তার বাবাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিল, শুক্রবার তারা বাড়ি ফিরবেন। শুক্রবার মামুন আবার তার শ্বাশুড়িকে জানায়, সে সুমিকে বাড়ির উদ্দেশে গাড়িতে তুলে দিয়েছে। সে বিকালের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে যাবে। সুমি বাড়িতে না পৌঁছার কারণে সুমির ছোট বোন বৃষ্টি ও তার স্বামী নবী হোসেন শনিবার শ্রীপুর উপজেলার আসপাডা মোড় এলাকার সুমির ভাড়া বাসায় যান। বাসায় গিয়ে তালাবদ্ধ দেখে বাড়ির মালিক নইম উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকেন। ঘরে কাউকে না পেয়ে ঘরে নতুন তালা আটকে চলে আসার সময় মামুনের সঙ্গে তাদের দেখা হয়। এ সময় সুমির কথা জানতে চাইলে মামুন জানায়, সুমিকে বাড়িতে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তুলে দিয়েছে। এরপরই সে চলে যায়। কিন্তু শনিবার ও রোববারও সুমি বাড়িতে না ফিরলে বৃষ্টির বান্ধবী সাথী আক্তারকে নিয়ে আবার আসপাডা বাসায় যায়। পরে ঘরের তালা খুলে ভেতরে ঢুকলে দুর্গন্ধ এবং ড্রেসিং টেবিলের নিচ দিয়ে মেঝেতে রক্ত গড়াতে দেখতে পায়। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে তারা পলিথিনে ভরা মাংসের খন্ড দেখতে পেয়ে ডাক-চিৎকার দেয় এবং বিষয়টি পুলিশে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে রাতে ওই মাংসের খন্ড উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।