দুর্ভাগ্য, আন্দোলন করতে পারছি না: ফখরুল

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুক্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন -যাযাদি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মতো আন্দোলন করতে না পারাকে তাদের 'দুর্ভাগ্য' বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন কোনো আন্দোলন করতে পারছি না যার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বের করে নিয়ে আসতে পারব। আমরা জানি আইন-আদালতের ভূমিকা কী, তারা কী করছে, আর কী করছে না। তাই সুসংগঠিত হয়ে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তাকে মুক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।' বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত চলছে দেশকে পরনির্ভরশীল করার। যে চক্রান্তে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে। তিনি আরও বলেন, পাট শিল্প ধ্বংসের পর সরকার চামড়া শিল্প ধ্বংস করছে। তিনি বলেন, 'ঈদের পর চামড়া আসে। চামড়া শিল্পের মাধ্যমে আমরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। সেটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে এই সরকার, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে। এক সময় পাট শিল্প ধ্বংস করা হয়েছে, আজকে ধ্বংস করা হচ্ছে চামড়া শিল্পকে।' বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'সুদূরপ্রসারী যে ষড়যন্ত্র, যে চক্রান্ত বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করার, সেই কাজ বহু দূর এই সরকার এগিয়ে নিয়ে গেছে। তারা শুধু জনগণের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে তাই নয়, এ দেশকে পরনির্ভরশীল করার জন্য সেই চক্রান্তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করছে।' এবার ঈদের দিন থেকেই সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কম দামে চামড়া কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসতে থাকে। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া থাকা টাকা দেননি- এই যুক্তি দেখিয়ে আড়তদাররা চামড়া কেনা বন্ধ রাখলে সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করে। চামড়া সংরক্ষণের নিজস্ব কোনো ব্যবস্থা ফড়িয়া আর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের থাকে না। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নামমাত্র দামে চামড়া কিনেও পাইকারদের কাছে বিক্রি করতে না পেরে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। দিনাজপুরে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে বাজারে ফেলে চলে যান মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রামেও লাখ খানেক পশুর চামড়া সড়কে ফেলে দেয়া হয়, পরে সেগুলো সরিয়ে মাটিচাপা দেয় সিটি করপোরেশন। এর মধ্যেই বিএনপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, কাঁচা চামড়ার দাম নামিয়ে দিয়ে 'পাশের দেশে পাচার' করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে, আর এর পেছনে রয়েছে 'ক্ষমতাসীন দলের এক নেতার সিন্ডিকেট'। এমন পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার বিকালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিবৃতিতে কাঁচা চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত আসে। চামড়ার বাজারে কেউ কারসাজি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া মুক্ত থাকলে দেশের অর্থনীতিকে এভাবে 'ফোকলা করে ফেলা' সম্ভব হতো না। এ কারণেই 'ইচ্ছাকৃতভাবে' তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দন্ড নিয়ে দেড় বছর ধরে কারাবন্দি। অসুস্থতার জন্য কয়েক মাস ধরে তিনি রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। আগে খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা হতো ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যাকান্ডের দিনে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিতর্কিত একটি অধ্যায় হয়ে আছে। এবার ১৫ আগস্ট কোনো কর্মসূচি না রেখে তার পরদিন দোয়া মাহফিলের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। সেই অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক জীবন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, 'গণতন্ত্রের জন্য তিনি সারাজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হচ্ছে রাজপথে। তিনি স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে জনগণকে সংগঠিত করেছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না, একজন গৃহবধূ যিনি রাজনীতি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিলেন। 'যখন তার ওপর দায়িত্ব এসে পড়েছে, তখন তিনি (খালেদা জিয়া) জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। এই নেত্রী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু কারাবরণই করেননি, তার সবচেয়ে প্রিয়জনদের হারিয়েছেন।' মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃতু্যর পর অনেকেই মনে করেছিলেন যে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। খালেদা জিয়াই তখন সামনে এসে 'বিএনপির পতাকাকে তুলে নিয়ে জনগণকে সংগঠিত' করেন। এই পরিক্রমায় দীর্ঘদিনের আবাসস্থল থেকে খালেদা জিয়ার 'উচ্ছেদ' হওয়া, বিদেশে তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃতু্য এবং বড় ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনে 'নির্বাসিত' জীবনের কথাও অনুষ্ঠানে বলেন ফখরুল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ বছর দায়িত্ব পালনের সময় খালেদা জিয়াই দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের 'ভিত্তি' গড়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের যত উন্নয়ন দেখা যায় তার ভিত্তি বিএনপি সরকারগুলোর আমলেই হয়েছে, জিয়াউর রহমান তা শুরু করে গেছেন।' দোয়া মাহফিলে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি ও দীর্ঘজীবন কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন নেতাকর্মীরা। অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, জ্যেষ্ঠ নেতা শামসুজ্জামান দুদু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, নূরে আরা সাফা, শিরিন সুলতানা, ওবায়দুল ইসলাম, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইশরাক হোসেন, নিপুণ রায় চৌধুরী, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, অঙ্গসংগঠনের আনোয়ার হোসেইন, সাইফুল আলম নিরব, মোরতাজুল করীম বাদরু, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ?ভুঁইয়া জুয়েল, আবুল কালাম আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।