হারিয়ে যাচ্ছে মাটির 'বেহালা'

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মো. কামাল হোসেন, বিশ্বনাথ
সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিয়া সেতুতে মাটির বেহালা বিক্রি করছেন এক বৃদ্ধ - যাযাদি
গ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠীর নিজস্ব জীবন প্রণালীর মাধ্যমে শতকের পর শতক ধরে যে বহুমুখী ও বিচিত্র ধর্মীয় সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাই বাঙালির লোকসংস্কৃতি নামে অভিহিত। বাঙালির সংস্কৃতির মধ্যে উলেস্নখযোগ্য হচ্ছে লোকসংস্কৃতি। আর সেই লোকসংস্কৃতিতে রয়েছে নানা রকমের বাদ্যযন্ত্র। ইদানিং সেই বাদ্যযন্ত্র আর দেখা যায়না। 'আউল বাউল লালনের দেশে মাইকেল জ্যাকসন আইলরে-আমার স্বাধের সারিন্দা কান্দেরে...'। হ্যা, বলছিলাম সেই লোকসংস্কৃতির বাদ্যযন্ত্র মাটির বেহালার কথা। এখন আর এই আধুনিক দেশে নেই সেই পুরনো ঐতিহ্য লোকসংস্কৃতি মাটির বেহালা। যে বেহালা, একতারা বা দুতারা দিয়েই এদেশের লালন-হাসন-রাধারমন-শাহ আব্দুল করিম থেকে শুরু করে যত বাউল সম্রাট আছেন সবাই এইসব বাদ্যযন্ত্র দিয়ে আমাদের দেশীয় লোকসংস্কৃতির মধ্যে যাত্রা করেন। কিন্তু আধুনিকতার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের বাঙালির লোকসংস্কৃতির অন্যান্য বাদ্যযন্ত্রসহ মাটির বেহালা। গানে-সুরে নেই আগের মত প্রাণ। ধীরে ধীরে নিমজ্জিত হচ্ছে আমাদের লোকসংস্কৃতি। সরেজমিন দেখাযায়, সিলেটের বিশ্বনাথে সেরকমই হাসান আলী উরপে হাসান পাগলা নামের সত্তর বছর বয়সী একজন মাটির বেলাহা বাদকের সন্ধান। তিনি বিশ্বনাথের বাসিয়া সেতুর উপর মাটির বেহালায় লোকগীতির সুর তুলে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন। নিজম্ব ও চিত্তবিনোদনের জন্য মানুষও কিনতে আগ্রহী। হাসান পাগলার দেশের বাড়ী সুনামগঞ্জের বিশম্ভরপুর উপজেলায়। তিনি বিশ্বনাথে স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে থেকে উপজেলার বিভিন্ন বাসা-বাড়ীতে বসবাস করে আসছেন। তার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে সবাই বিয়ে করে আলাদা থাকেন এবং স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট্ট একটি সংসার। প্রতিদিন এই মাটির বেহালা তৈরি করেন এবং সেটি বিভিন্ন বাজার ও সিজনাল ওরস মাহফিলে রাতে বা দিনে বিক্রি করে থাকেন। আর তাতে যা আয় করেন তা দিয়ে দুটানায় চলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর ছোট্ট সংসারজীবন। কিন্তু চাহিদা থেকেই যায় হাসান পাগলার। হাসান বলেন, সেই বেহালা বানাতে তার অনেক টাকা খরচ হয়। বেহালা এবং বাজানোর জন্য চড় বানাতে বাশ, তার ও সুতা কিনতে হয়। যা তার পক্ষে হিমশিম খেতে হয়। একটি বাশ কিনতে তার দুই থেকে তিনশত টাকা লাগে। কিন্তু তার ইচ্ছা বাজারে একটি জায়গায় বসে এই লোকসংস্কৃতির বাদ্যযন্ত্র তৈরি করে বিক্রি করতে চান। এতে তার বাড়তি টাকার প্রয়োজন যাহা তার আমুলে নেই। তিনি আরো বলেন 'সর্বাঙ্গে ব্যথা-ঔষধ দিব কোথা।' বিষয়টা অনেকটা এরকমই। তবে ঔষধ দেবার আগে ব্যথাটা কোথায় জানা দরকার। এখন আমাদের মাঝে আছে শুধু হারানোর সুর, আর কিছুই নেই, প্রযুক্তির যুগে সব শেষ, কোথায় আমাদের লোকসংস্কৃতি? তিনি আরো বলেন, বৃদ্ধ শরীর নিয়ে হাপিয়ে উঠেছেন। বাজারে বাজারে ও ওরুসে গিয়ে আর এসব বিক্রি করতে তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তার দাবি বাঙালির ঐতিহ্য এই লোকসংস্কতিকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের জাগ্রত হতে হবে আমাদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।