কালের সাক্ষী মহেড়া জমিদারবাড়ি

প্রকাশ | ১৭ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া জমিদারবাড়ি - যাযাদি
ব্রিটিশ শাসন নেই, নেই জমিদারের দুর দমনীয় প্রতাপ, শুধু আছে তাদের স্মৃতি বিজড়িত কীর্তি। তেমনি একটি স্থাপত্য নিদর্শন হলো মির্জাপুর মহেড়া জমিদারবাড়ি। টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ মাইল পূর্ব-দক্ষিণে এবং মির্জাপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মহেড়া জমিদার বাড়ি। মহেড়া জমিদার বাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জমিদারদের শাসন ও শোষণের ইতিহাস নিয়ে। এই জমিদার বাড়িতে রয়েছে সু-বিশাল ৩টি প্রধান ভবন। সাথে রয়েছে কাচারিঘর, নায়েব সাহেবের ঘর, গোস্থাদের ঘর, প্রার্থনার জন্য মন্দির এবং জমিদারদের দাস-দাসীদের থাকার জন্য কয়েকটি ঘর। ভবনগুলোতে রয়েছে সুউচ্চ প্রাচীর। বাড়িতে প্রবেশের জন্য রয়েছে দুটি প্রবেশদ্বার। সামনে রয়েছে গোসল করার জন্য বিশাল দীঘি। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞের মতে ভবনগুলোর নির্মাণশৈলী রোমান, মোঘল, সিন্দু খেকুদের সাথে মিল রয়েছে। চুন সুরকি আর ইটের সমন্বয়ে ভবনগুলোর কারুকাজ যে কোনো দর্শনার্থীর মন কেড়ে নেয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৯০ দশকের পূর্বে জমিদার বাড়িটির পত্তন ঘটে। কালীচরণ সাহা ও আনন্দ সাহা নামে দুই ভাই কলকাতায় লবণ ও ডালের ব্যবসা করে প্রচুর টাকা-পয়সা রোজগার করে চলে আসেন মহেড়া গ্রামে। মহেড়া গ্রামে তারা ১ হাজার ১৭৪ শতাংশ জমির ওপর এ সুবিশাল বাড়িটি নির্মাণ করেন। দৃষ্টিনন্দন এই জমিদার বাড়ির রয়েছে এক কষ্টের স্মৃতি। ১৯৭১ সালের ১৪ই মে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকবাহিনী মহেড়া জমিদার বাড়িতে হামলা করে এবং জমিদার বাড়ির যোগমায়া রায় চৌধুরীসহ পাঁচজন গ্রামবাসীকে চৌধুরী লজের মন্দিরের পেছনে একত্রে দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। তার মধ্যে স্থানীয় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পন্ডিত বিমল কুমার সরকার, মনিন্দ্র কুমার চক্রবর্তী, অতুল চন্দ্র সাহা এবং নোয়াই বণিক ছিলেন। ইতিহাস কলঙ্কিত সেই রক্তের দাগ এখনো লেগে আছে মহেড়া জমিদার বাড়িতে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বায়েজীদের নেতৃত্বে এক পস্নাটুন মুক্তিযোদ্ধা জমিদার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেন।