ডেঙ্গু: আরও এক হাজার ৪৬০ জন হাসপাতালে

তিনজনের মৃতু্য

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আগের মাসের তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও গত কয়েকদিনের বিচারে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তিল হার কমেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, গত দুদিন ধরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে। ১৭ আগস্ট শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪৬০ জন ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭২১ জন; তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ১ হাজার ৯৩৩ জন। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৫১ হাজার ৪৭৬ জন। আগস্টের মাঝামাঝিতে পুরো জুলাই মাসে দ্বিগুণের বেশি রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরপর আগস্টে তা আরও বাড়ল। আগস্ট ডেঙ্গুর মৌসুম হলেও মশা নিধনে নানা তৎপরতায় পরিস্থিতির উন্নতি আশা করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার। তিনি বলেন, "মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতাও বেড়েছে। এসব কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।" গত জুলাই মাসে ১৬ হাজার ২৫৩ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আগস্ট মাসের প্রথম ১৬ দিনেই সেই সংখ্যা ৩৩ হাজার ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হিসেবে চলতি বছর এপ্রিলে ৫৮ জন, মে মাসে ১৯৩ জন, জুনে ১৮৮৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। জুলাই মাসে তা এক লাফে ১৬ হাজার ২৫৩ জনে পৌঁছায়। অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যে ১ হাজার ৪৬০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার মধ্যে ঢাকায় ৬২১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৮৩৯ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শনিবার দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭ হাজার ৮৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৪ হাজার ৪৩ জন, ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৮১৩ জন। সরকার চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করা হলেও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৩৫ জনের মৃতু্যর তথ্য পাওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতেই সবচেয়ে বেশি ২১৯ জন নতুন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৭০ জন, খুলনা বিভাগে ১০৯ জন, রংপুর বিভাগে ৪৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ১০৫ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩৮ জন, সিলেট বিভাগে ১৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৪ জন ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু নিয়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার হাসপাতালগুলো থেকে ৬০৫ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে ৭১৯ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ফরিদপুরে কলেজ ছাত্রের মৃতু্য ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ছয়দিন চিকিৎসা শেষে এক কলেজ ছাত্রের মৃতু্য হয়েছে। শনিবার সকাল পৌনে ১০টার সময় দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমন বশার রাজ (২২) নামে এক শিক্ষার্থী মারা যায়। তার বাড়ি মাগুড়া জেলার চাঁদপুর গ্রামে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বুলু জানান, গত ১২ আগস্ট বিকালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সুমন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়। সুমনের ডেঙ্গু ইনফেকশনটা ব্রেনে হ্যাটাক করে, এতে তার মৃতু্য হয়। সুমনের পিতা মিজানুর রহমান জানান, তার পরিবারের তিন ছেলের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। গত ৭ আগস্ট সুমন বাবাকে জানায় তাকে মশায় কামড় দিয়েছে। পরে মাগুড়া হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষা করলে সেখানে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। পরে তাকে ১২ আগস্ট ফমেকে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে আরও একজনের মৃতু্য ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনোয়ারা বেগম (৪৫) নামের এক নারী মারা গেছেন। শুক্রবার সকাল পৌনে ১১টায় তাঁকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন বলে তার স্বজনরা জানান। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। মনোয়ারা বেগমের বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে। তার স্বামীর নাম সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'বেশ কিছুদিন ধরেই মনোয়ারার জ্বর ছিল। স্থানীয় ভাগলপুর হাসপাতালে তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার সময় অবস্থার অবনতি হলে গত মঙ্গলবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। চিকিৎসারত অবস্থায় আজ সকালে তিনি মারা যান।' বাচ্চু মিয়া জানান, মনোয়ারার স্বজনেরা বলেছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা গেছেন। পরিবারের সদস্যরা লাশ নিয়ে গেছে। মারা গেল ৬ মাসের আয়য়াজুর রাজধানীর শিশু হাসপাতালে ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে ৬ মাস বয়সী আয়য়াজুর রহমান নামে একটি শিশু মারা গেছে। শুক্রবার রাত ১টা ২৫ মিনিটে শিশুটি মারা যায়। ১৪ তারিখে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ নিয়ে শিশু হাসপাতালে ১১ শিশু ডেঙ্গুতে মারা গেল। হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহীন শরীফ এ তথ্য জানিয়েছেন।