বাগেরহাটে জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ

প্রকাশ | ১৮ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

ইসরাত জাহান, বাগেরহাট
বাগেরহাট পৌর শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং মাঠ পর্যায়ের নদী ও খালের নাব্যতা না থাকায় শহরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আর মাঠ পর্যায়ে প্রায় ২৫০টি মৎস্য ঘেরসহ নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। এতে জনজীবনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত একটানা ৬ ঘণ্টার বিরামহীন বর্ষণে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। জেলার তিনটি পৌরসভা ও উপজেলাগুলোর নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে সকাল থেকেই শহরের রাস্তাঘাট ছিল ফাঁকা। গড় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের ফলে প্রতিদিন খেটে খাওয়া মানুষেরা কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে পারেনি। কৃষিতেও প্রভাব ফেলেছে এ ভারী বর্ষণে। এদিকে, নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে জনদূর্ভোগ হয়েছে। বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে নামতে না পারায় বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সরেজমিনে দেখা গেছে বাগেরহাট সদর উপজেলার গোটাপাড়া, কাড়াপাড়া, ষাটগম্বুজ, ডেমা, রাধাবলস্নব, কাশিমপুর ও বাগেরহাট পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা বৃষ্টির পানিতে পস্নাবিত হয়েছে। বাগেরহাট পৌরসভার খারদ্বার, বাসাবাটি, হাড়িখালী, নাগের বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, বাগেরহাট শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা দীর্ঘবছর ধরে অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। শহর সংলগ্ন ভৈরব ও দড়াটানা নদীতে ভাটিতে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে, অথচ, শহরের বৃষ্টির পানি নামছে না। এটাই বাস্তবতা। বাগেরহাট পৌরসভার সামনের সড়ক, শালতলা মোড়, মিঠাপুকুর পাড়ের সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বাগেরহাট পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাশেম শিপন বলেন, ঘুম থেকে উঠেই ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের জন্য নিজেই কাজ শুরু করি। পৌরসভার পক্ষ থেকেও অনেক কর্মী এ কাজে নিয়োজিত ছিল। আশা করি বৃষ্টি কমলে দ্রম্নত পানির ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে মানুষ। পৌরসভার প্যানেল মেয়র ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ বাকী তালুকদার বলেন, শহরের পানি নেমে যাওয়ার খালগুলি কেটে স্বাভাবিক করতে পারলে এ দুভোর্গ হতো না। সকাল থেকে আমি নিজেই লোকজন নিয়ে যৌনপলস্নীসহ আমার ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য শ্রমিক নিয়ে কাজ করছি। বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহিতুল ইসলাম পল্টন বলেন, বৃষ্টিতে রাস্তায় হাঁটু পানির কারণে আমাদের এলাকার জনসাধারণের চলাচলে খুব সমস্যা হচ্ছে। বাড়ি-ঘরে পানি উঠে গেছে। এক প্রকার পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। কাড়াপাড়া এলাকার ঘের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে আমার ঘেরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ঘের ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, ২০০ থেকে ২৫০টি মাছের ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এ বৃষ্টি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে সহস্রাধিক মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমরা মৎস্য চাষিদের নেট দিয়ে নিজ নিজ ঘের নিরাপদ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আফতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাগেরহাটে বছরের সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে কিছু পানের বরজ ও সবজি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রম্নত পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমে যাবে।