একই পরিবারের ৬ জন

কুমিল্লায় তিন বাহনের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত

ওই পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য রিফাতকে (১০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
কুমিলস্নার লালমাই উপজেলার জামতলী এলাকায় রোববার দুপুরে বাসের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সিএনজিচালিত সেই অটোরিকশা -ফোকাস বাংলা

কুমিলস্নায় বাসের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে একই পরিবারের ৬ জনসহ ৮ জন নিহত হয়েছে। রোববার দুপুর ১২টার দিকে কুমিলস্না-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের লালমাই উপজেলার জামতলী এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। ওই পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য রিফাতকে (১০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। একই পরিবারের ৬ জনের মৃতু্যর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দুর্ঘটনার পর পালিয়ে গেছে বাসের চালক। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জেলার লাকসামগামী তিশা পরিবহনের একটি বাস জেলার লালমাই উপজেলার জামতলীতে পৌঁছার পর একটি মাইক্রোবাসের সঙ্গে প্রথমে সংঘর্ষ হয়। এরপর বাসটি কুমিলস্না শহরগামী সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে চাপা দেয়। এতে অতিরিক্ত যাত্রীবাহী ওই সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে নেয়ার পর একই পরিবারের ৬ জনসহ ৮ জনের মৃতু্য হয়। নিহতরা হচ্ছে, কুমিলস্নার নাঙ্গলকোট উপজেলার ঘোড়াময়দান গ্রামের মৃত আবদুর জব্বারের ছেলে জসিম উদ্দিন (৪৫), জসিম উদ্দিনের মা সাকিনা বেগম (৭০), স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪০), ছেলে শিপন (২৩), ছেলে হৃদয় (১৫), মেয়ে নিপু আক্তার (১৩) ও হোটেল বয় একই গ্রামের হোসেন মিয়ার ছেলে সায়মন (১৫) এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক একই উপজেলার করপাতি গ্রামের মৃত জিতু মিয়ার ছেলে জামাল হোসেন (৩৫)। জসিমের পরিবারের একমাত্র জীবিত সদস্য রিফাতকে (১০) উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিহত জসিম উদ্দিনের ভাই মো. মহসিন জানান, তার ভাই জসিম উদ্দিন, মা, স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ে নিয়ে কুমিলস্না নগরীর গাংচরে ভাড়া বাসায় থাকতেন এবং তিনি পাশের গোয়ালপট্টিতে রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করতেন। কোরবানির ঈদের ছুটিতে সপরিবারে বাড়িতে আসেন। ঈদের ছুটি শেষে সবাই মিলে সিএনজি অটো রিকশাযোগে কুমিলস্না যাচ্ছিলেন। এদিকে দুর্ঘটনার খরব পেয়ে কুমিলস্না পুলিশ সুপার সৈয়দ মো. নুরুল ইসলাম, হাইওয়ে কুমিলস্না অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার কাজ তদারকি করেন। কুমিলস্নার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুলস্নাহ আল মামুন সাংবাদিকদের জানান, বাসচালকের ভুলের কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে নারী ও শিশুসহ ওই পরিবারের সদস্যরা উঠেছিলেন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিলস্না মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বাস চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। মোটরসাইকেল কেড়ে নিল কলেজছাত্রের প্রাণ এদিকে লক্ষ্ণীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্ণীপুওে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ড্রেনে পড়ে ইব্রাহিম খলিল নামে এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছে। রোববার সকালে শহরের জেবি রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ইব্রাহিম দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ও পৌরসভার বাঞ্চানগর এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে। দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে শনিবার বিকালেই মোটরসাইকেলটি কিনে দেয় তার পরিবার। আর গতকাল সেটিই তার প্রাণ কেড়ে নিল। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে বের হয় কলেজছাত্র ইব্রাহিম খলিল। পরে বাসার সামনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ড্রেনে পড়ে যায়। এ সময় গুরুতর আহত হয় সে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. জয়নাল আবেদীন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মৃতু্যর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়স্বজনসহ সহপাঠীদের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। গোপালগঞ্জে ২ জন নিহত গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় এক বৃদ্ধসহ দুইজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরো একজন। রোববার দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মুকসুদপুর উপজেলার রাগদি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকায় ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মুকসুদপুর উপজেলার রাগদি ইউনিয়নের ডোমরাকান্দি এলাকার নুরুল মোড়ল (৭০) ও কাশিয়ানী উপজেলার বরাশুর গ্রামের তাহের শরীফের ছেলে হাবিব শরীফ (৪০)। ফরিদপুরের ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানিয়েছেন, নুরুল মোড়ল বাড়ির সামনের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বরিশাল থেকে ঢাকাগামী সুগন্ধা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস তাকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে তিনি ঘটনাস্থলে নিহত হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরাদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। অপরদিকে, কাশিয়ানী থানার ওসি মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, হাবিব শরীফ. মোটরসাইকেল চালিয়ে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া থেকে গোপালগঞ্জ আসছিলেন। এ সময় মোটরসাইকেলটি রাতইল এলাকায় পৌঁছালে খুলনা থেকে ঢাকাগামী একটি বাসের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলে চালক হাবিব শরীফ মারা যান এবং আরোহী এনায়েত হোসেন আহত হন। পরে স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। আহত এনায়েত হোসেনকে (৪৯) গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।