স্মরণকালের ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে পশ্চিম রেল

প্রকাশ | ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ট্রেনের অপেক্ষায় স্টেশনে ক্লান্ত যাত্রীরা -যাযাদি
ঈদযাত্রার মতো ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতেও ট্রেনযাত্রীদের ভোগান্তির শেষ নেই। রাতের ট্রেনে ঢাকায় ফিরে যারা সকালে অফিস বা ক্লাস ধরার পরিকল্পনা করেছিলেন, তাদের হাজিরা খাতায় পড়ছে লাল দাগ। এ ছাড়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্টেশনে বসে মশার কামড় খাওয়া, বাচ্চা-বুড়োদের নির্ঘুম রাতযাপন এবং টিকিট কেটেও ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে না পারার মতো ভোগান্তি তো আছেই। এ অবস্থায় জানালা দিয়ে কোনোমতে ট্রেনের ভেতর ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। আর চরম ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও জীবন বাজি রেখে ট্রেনের ছাদে চড়ে রাজধানীতে যান অনেকে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের স্মরণকালের ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়ের পর এই হলো বর্তমান চিত্র। ঈদের আগে থেকে রেলপথে এই অচলাবস্থা চলছে। যার ধকল ঈদের পরও কাটেনি, বরং বেড়েছে। ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে সকাল ৭টার সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়েছে দুপুর ১-৩৫ মিনিটে, শনিবার রাতের ধুমকেতু ছেড়েছে রোববার সকাল সাড়ে ৭টায়। এর আগে শনিবার বিকাল ৪-২০ মিনিটের আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস ছেড়েছে রাত ১০টায়। রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ট্রেনগুলোর সিডিউলের এই অবস্থা। প্রতিটি ট্রেনই প্রায় ৬-১০ ঘণ্টা বিলম্বে চলছে! রোববার সকালে সরেজমিন রাজশাহী স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, রাতের ধুমকেতু ট্রেনটি সকালে পস্ন্যাটফর্মে এলে ট্রেনে কয়েকশ যাত্রী হুড়মুড়িয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। ছোট-বড় ব্যাগ-বস্তা মালামাল নিয়ে নির্ঘুম যাত্রীদের চোখমুখে রাজ্যের ক্লান্তির ছাপ ছিল। সারা রাত মশার কামড় ও গরমে নির্ঘুম রাত কেটেছে অনেকের। ঈদের ছুটি শেষে রাজধানীতে যাচ্ছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেঘলা রহমান। তিনি বলেন, শনিবার রাত ১১-২০ মিনিটে ধুমকেতু এক্সপ্রেসের ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনটি পরদিন সকাল ৭টায় রাজশাহীতে এসে পৌঁছায়। দীর্ঘ আট ঘণ্টা স্টেশনে ভারী ব্যাগ নিয়ে রেলস্টেশনের পস্ন্যাটফর্মেই অপেক্ষা করতে হয়। পদ্মা এক্সপ্রেসে রওনা দেয়া এক যাত্রী জানান, পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাজশাহী থেকে শনিবার বিকাল ৪-২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছাড়ে রাত ১০টায়। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনটি অতিরিক্ত সময় বিলম্ব করতে থাকে। অবশেষে ট্রেনটি রাজধানী কমলাপুরে পৌঁছায় ভোরে। তার পৌঁছানোর কথা ছিল গতকাল রাত ১০টায়। যাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিটি বগিতে ৬০-৬২ জন যাত্রীর সিট থাকলেও বগিতে অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক যাত্রী উঠে পড়ছে। যাদের অধিকাংশেরই টিকিট ছিল না। এই ভিড়ের সুযোগে পকেটমার-মলমপার্টিও তৎপর ছিল। অনেকের মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এ সময় কোনো রেল পুলিশ বা চেকারের সহায়তা চেয়েও পাওয়া যায়নি। আবার কোনো কোনো রেল পুলিশ, আনসার বা চেকারকে টিকিটবিহীন যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে দেখা যায় বলে অভিযোগ করেন অনেক যাত্রী। ট্রেনের ভেতর দাঁড়াতে না পেরে ছাদে চড়েও অনেক যাত্রীকে কর্মস্থলে ফিরতে দেখা যায় রাজধানীতে। রাজশাহী থেকে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাইলে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার এএএম শাহ নেওয়াজ জানান, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছাড়তে হচ্ছে প্রতিটি ট্রেন। ট্রেনের ভেতর যাত্রী উপচে পড়ছে। ছাদও ফাঁকা নেই। তাই গতির চেয়ে এখন যাত্রীদের নিরাপত্তার কথাই আগে ভাবতে হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেনের গতি কমিয়ে আনা হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময় ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না আর নির্ধারিত সময় আসতেও পারছে না। তাই ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সিঙ্গেল লাইন যতদিন ডাবল না হবে, ততদিন ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখা কঠিন। কেননা, একই লাইনে একাধিক ট্রেন চলাচল করে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে একটি ট্রেন ধীরগতিতে চলে যাওয়ার পর অন্যটি সিগন্যাল পায়। এ ছাড়া রাজধানীতে ফেরার পথে যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপে কোথাও কোথাও একেবারেই গতি কমিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। সে কারণে ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় কাটছে না।