ডেঙ্গু: নতুন ভর্তি

রোগীর সংখ্যা কমছে আরও ২ জনের মৃতু্য

প্রকাশ | ২১ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও কিছুটা কমেছে, সেই সঙ্গে কমেছে নতুন ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশনস অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নতুন করে ১ হাজার ৫৭২ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ৭৬০ জন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন মোট ৬ হাজার ৪৭০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। আগের দিন ভর্তি ছিলেন ৬ হাজার ৭৩৩ জন। আর রোববার ভর্তি ছিলেন ৭ হাজার ১৬৮ জন ডেঙ্গু রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ৭ আগস্ট থেকে প্রতিদিনই ভর্তি রোগীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমছে। ৭ আগস্ট সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ৪২৮ জন রোগী একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর থেকে কমা-বাড়ার মধ্যে আছে। তবে গত ১০ দিনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কখনোই দুই হাজার ছাড়ায়নি। 'হয়তো মানুষ সচেতন হয়েছে, সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলোর ফল আসতে শুরু করেছে। তবে আগামী দুই সপ্তাহ যদি কমতে থাকে তাহলে আমরা বলতে পারব যে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমেছে।' এ বছর বর্ষার শুরুতেই ঢাকায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়; তারপর তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরজুড়ে যত ডেঙ্গু রোগী ছিল, এবার আগস্টের আগেই তা ছাড়িয়ে যায়। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদের 'ডেথ রিভিউ' প্রক্রিয়া শেষ করে এ পর্যন্ত ৪০ জনের ডেঙ্গুতে মৃতু্যর খবর নিশ্চিত করেছে। তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৭৩ জনের মৃতু্যর খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদ মাধ্যমে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫৬ হাজার ৩৬৯ জন ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কেবল আগস্ট মাসের ১৯ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ৩৭ হাজার ৯০৮ জন। যারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন, তাদের তথ্য সরকারের পরিসংখ্যানে আসেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় শুধু রাজধানীতে ৭৫০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানী বাদে ঢাকা বিভাগে ২১৮, বরিশাল বিভাগে ১৩৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩০, খুলনা বিভাগে ১৪৪, রাজশাহী বিভাগে ৮৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৭, রংপুর বিভাগে ৪৪ ও সিলেট বিভাগে ১৮ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রিকশাচালকের মৃতু্য হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মৃতু্যবরণকারী ওই রোগীর নাম সাহেব আলী (৩৫)। রাজবাড়ী সদর উপজেলার মাটিকান্দা এলাকার মনসের আলীর ছেলে। তিনি ঢাকা শহরের রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান বুলু বলেন, সাহেব আলী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে মৃতু্যবরণ করেন তিনি। সাহেব আলীসহ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সাতজন রোগীর মৃতু্য হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭০ জন ভর্তি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ফরিদপুরের এ রোগ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ৩৫৭ জন রোগী। ডামুড্যা (শরীয়তপুর) সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরের ডামুড্যায় সুরাইয়া আক্তার নামে এক গৃহবধূ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সুরাইয়া আক্তার (৩২) শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলা সদরের কামাল হোসেন ঢালীর স্ত্রী। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার ভোর রাতে তিনি মারা গেছেন। এ নিয়ে শরীয়তপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিন নারীর মৃতু্য হলো। গত ৩০ জুলাই জাজিরার স্কুল শিক্ষিকা বর্ষা আক্তার (২৭) ও ৫ আগস্ট ভেদরগঞ্জের ইতালি প্রবাসী হাফসা লিপি (৩০) মারা গেছেন। গৃহবধূ সুরাইয়া বেগম ডামুড্যা পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের মো. কামাল হোসেন ঢালীর স্ত্রী। মৃত গৃহবধূর মো. জা?য়েদ (৯) ও মো. নুর (৮) না?মে দুটি ছেলে এবং আদিবা (৫) না?মে এক?টি মে?য়ে র?য়ে?ছে। তার স্বামী একজন ব্যবসায়ী। স্থানীয় ও স্বজনদের সূত্র জানায়, সুরাইয়া আক্তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার হাটখোলা এলাকায় বসবাস করতেন। ঈদ করার জন্য গত ৯ আগস্ট ডামুড্যায় আসেন। গত শুক্রবার রাতে জ্বর অনুভব করলে শনিবার স্থানীয় হাজী আলী আজম জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানে রক্ত পরীক্ষা করলে ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে তার চিকিৎসা চলছিল। সোমবার রাতে অবস্থার অবনতি হলে রাত সাড়ে ৩টার দিকে চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনকে খবর দেয়া হয়। তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে সুরাইয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। সুরাইয়ার স্বামী মো. কামাল হোসেন ঢালী বলেন, আমি ব্যবসার সূত্রে ঢাকায় থাকি। সেখানে তিন সন্তান নিয়ে সুরাইয়া আমার সঙ্গে থাকত। ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলে সে সন্তানদের আলাদা যত্ন নিত, সবসময় সন্তানদের চোখে চোখে রাখত। এখন সে নিজেই চলে গেল। আমি কীভাবে তার সন্তানদের সামনে দাঁড়াব? আলস্নাহ কেন আমার মাসুম বাচ্চাদের এত কষ্ট দিলেন।