সড়কে পণ্য পরিবহন চাপ কমাতে নগরবাড়ীতে আধুনিক নদীবন্দর

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

কিশোর সরকার
উত্তরাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে সড়ক পথের ওপর চাপ কমাতে কোনো প্রকার বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই প্রায় ৫১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরবাড়ীতে আধুনিক নদী বন্দর নির্মিত হচ্ছে। এ বন্দরের আধুনিকায়ন ও নাব্যতা ঠিক রাখার জন্য ড্রেজিংয়ের কাজ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিস্নউটিএ)। জানা গেছে, পাবনা জেলা বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার নগরবাড়ী ঘাট ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নদীপথে মালামাল ওঠা-নামা করার প্রধান নদীবন্দর। এ বন্দরে বিশেষ করে সার, সিমেন্ট, পাথর, বালি, কয়লা, খাদ্য সামগ্রী ও অন্যান্য বাল্ক মালামাল ওঠা-নামা করা হয়। ১৯৮৩ সালে এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে আধুনিক সুবিধা না থাকায় এ বন্দরের কার্যক্রম নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চলে সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর চাপ বাড়ছে। অথচ নগরবাড়ী নদীবন্দর আধুনিক হলে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর বাল্ক পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমবে, বাড়বে গতি। ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার ম্যানেজমেন্টের (আইডবিস্নউএম) সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কম থাকে। যার ফলে লাইটারেজ জাহাজ থেকে পণ্য খালাসে সমস্যা হয়। এছাড়া নদীতে পানি কম থাকায় তিনশ' মেট্রিক টনের বেশি মালামাল নিয়ে নগরবাড়ী বন্দরে লাইটারেজ জাহাজ আনা সম্ভব হয় না। আইডবিস্নউএম এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে বিদেশ থেকে আনা সার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহের জন্য চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ৫২ হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন, ফেব্রম্নয়ারিতে ৬৬ হাজার ৪৩৬ মেট্রিক টন, মার্চে ৬২ হাজার ২৩৫ মেট্রিক টন, এপ্রিলে ৬৮ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন, মে মাসে ৬১ হাজার ২৩৮ মেট্রিক টন সার এনে খালাস করা হয়। কিন্তু নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে এ বন্দরের সার ওঠা-নামার পরিমাণও বেড়ে যায়। এর মধ্যে ২০১৬ সালেই আগস্টে সার পরিবহন বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৪ হাজার ৫৩২ মেট্রিক টনে। একই বছর সেপ্টেম্বরে এক লাখ ৪৭ হাজার ৮২৭ মেট্রিক টন, অক্টোবরে ২ লাখ ১৯ হাজার ৬০৪ মেট্রিক টন, নভেম্বরে এক লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৫ মেট্রিক টন এবং ডিসেম্বরে এক লাখ ২৩ হাজার ৫৪৫ মেট্রিক টন সার চট্টগ্রাম সমুদ্রর বন্দরের মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজে এনে নগরবাড়ী নদীবন্দরে খালাস করা হয়েছে। আইডবিস্নউএম সমীক্ষা সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাদার ভ্যাসেল থেকে লাইটারেজ জাহাজে এনে তা নগরবাড়ী নদীবন্দরে খালাস করে আবার ট্রাকে করে সেই সার বগুড়ারার গুদাম পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি মেট্রিক টনে খরচ হয় একহাজার ৬০০ টাকা। অন্যদিকে একই সার মাদার ভ্যাসেল থেকে খালাস করে সড়ক পথে বগুড়ার গুদাম পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি মেট্রিক টনে খরচ হয় ২ হাজার ২০০ টাকা। অথচ সমিক্ষায় জানা গেছে, নৌপথ ও সড়ক পথে বগুড়ার গুদাম পর্যন্ত মালামাল পৌঁছাতে ৪দিন সময় লাগে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নগরবাড়ী নদীবন্দর নিয়ে সমীক্ষার দায়িত্বে থাকা আইডবিস্নউএম প্রধান কনসালটেন্ট সৈয়দ মনোয়ার হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামের সমুদ্র বন্দর থেকে প্রতি মেট্রিক টন সার বা কোন পণ্য বগুড়ার গুদাম পর্যন্ত পৌঁছাতে যে খরচ হয়, ড্রেজিং ও বন্দরের আধুনিকায়ন হলে তা থেকে দুই'শ টাকা কমে এক হাজার ৪০০ টাকায় এসে দাঁড়াবে। এছাড়া আগামী বছর নগরবাড়ী নদীবন্দর ব্যবহার করে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টন মালামাল পরিবহন হবে। ২০৩০ সালে তা বেড়ে ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টনে এসে দাঁড়াবে। আর তা ২০৪০ সালে ৮৩ লাখ টনে এসে দাঁড়াবে। যে কারণে ভবিষ্যতে দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে উত্তরবঙ্গে সড়ক পথে পণ্য পরিবহনের জন্য বঙ্গবন্ধু সেতু ব্যবহার করা অসাধ্য হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। নগরবাড়ী বন্দর আধুনিকায়ন বিষয় জানতে চাই বিআইডবিস্নটিএর চেয়ারম্যান কমোডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, সরকার সড়কের উপরে চাপ কমাতে নৌপথকে বহুমত্রিক ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নগরবাড়ী নদীবন্দরে আধুনিকায়নের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে। যা এখন দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদর নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে তিনি জানান। উলেস্নখ্য ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পরে আরিচা-নগরবাড়ী ফেরি পারাপার কিছুটা ভাটা পড়লেও লাইটারেজ জাহাজে বাল্ক পণ্য পরিবহন অব্যাহত ছিল। তবে বন্দরটিতে আধুনিক সুবিধা না থাকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে নাব্য সংকটের কারণে পণ্য পরিবহন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।