ডেঙ্গু: ৯৪ চিকিৎসকসহ ৩০০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত

প্রকাশ | ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী। ছবিটি বৃহস্পতিবার মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে তোলা -যাযাদি
ঢাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পর রোগীদের সেবায় নিয়োজিত তিনশ স্বাস্থ্যকর্মী মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের ৯৪ জনই চিকিৎসক। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা। একক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী সামলানো এই সরকারি হাসপাতালের ২৫ জন চিকিৎসকসহ ৬২ জন কর্মী এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে। অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুয়ায়ী, বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছয়জন চিকিৎসক এবং ১২ জন নার্স রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের বাইরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দুইজন এবং কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে দুইজন হাসপাতালকর্মী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। এদিকে মশা নিধনে নানা কর্মকান্ডের মধ্যেও সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানাচ্ছে, বছরের শুরু থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯ হাজার ৫৯২ জন রোগী। এ সময়ে রাজধানীতে নতুন ডেঙ্গু রোগী বাড়লেও সারা দেশে কমেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ঢাকায় ৭৬১ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন, ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ৮৩৬ জন। আগের দিন ঢাকায় ৭১১ এবং ঢাকার বাইরে ৯১৫ জন। এক মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যাও অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। ২০০০ সালে দেশে প্রথমবার এ রোগের প্রকোপ দেখা দেয়ার পর থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যেখানে ৫০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন, সেখানে এ বছর শুধু আগস্টের ২২ দিনেই ভর্তি হয়েছেন ৪১ হাজার ১৩১ জন। এ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। যদিও আগস্টের শেষ দিকে এসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৫৯৭ জন ডেঙ্গু নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর আগে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬২৬ জন, মঙ্গলবার এক হাজার ৫৭২ এবং সোমবার এক হাজার ৬১৫ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়ার পর ব্যাপকতা বাড়ে জুলাইয়ে, সরকারি হিসাবেই সে সময় রেকর্ড ১৬ হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি হয়ে ওঠে, ৭ আগস্ট একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪২৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। এই অবস্থা চলতে থাকে সপ্তাহখানেক- প্রতিদিনই দুই হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যার রেখাচিত্রে অবনমন ঘটে ঈদের পরদিন ১৩ আগস্ট। ওইদিন এক হাজার ২০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে তার পরদিন থেকে আবার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এরমধ্যে একদিন এক হাজার ৪৬০ জন হলেও বাকি দিনগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যাটি দেড় হাজারের বেশিই রয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪৭ জনের মৃতু্যর কথা নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬ হাজার ১৪৭ জন। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৬ হাজার ২৭৮ জন, মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ছয় হাজার ৪৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় ৩ হাজার ৩৩২ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ২ হাজার ৮১৫ জন ভর্তি ছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রাজধানীসহ সারা দেশে যত রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তার থেকে বেশি রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। রাজধানীতে ভর্তি হয়েছেন ৭৫০ জন আর সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ৭৫৬ জন। দেশের অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৭৯ জন। রাজধানী বাইরে ঢাকা বিভাগে ২৩৩ জন, খুলনা বিভাগে ১৭৯ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৩৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২২ জন, রংপুর বিভাগে ৩৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ২০ জন নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন হাসপাতালে। ঢামেক হাসপাতালে যুবকের মৃতু্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গিয়াস উদ্দিন (৪০) নামে আরও এক যুবকের মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃতু্য হয়। মৃত গিয়াসের মামা মো. নবী উলস্নাহ জানান, তার বাড়ি চাঁদপুর সদর উপজেলায়। এলাকায় ইট পাথরের ব্যবসা করতেন তিনি। গত দু'দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন গিয়াস। পরে তার রক্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে তার ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে। বুধবার দিনগত রাতে তাকে চাঁদপুর থেকে ঢামেক হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়। ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৬টার দিকে তার মৃতু্য হয়। শেবাচিম হাসপাতালে ডেঙ্গু ?রোগীর মৃতু্য এদিকে ব?রিশাল অফিস জানায়, ব?রিশাল শের ই বাংলা মে?ডি?কেল ক?লেজ হাসপাতা?লে চি?কিৎসাধীন ডেঙ্গু রোগীর মৃতু্যর ঘটনা ঘ?টে?ছে। মৃত ম?নির হো?সেন (৩৪) ব?রিশা?লের মে?হেন্দিগঞ্জ উপ?জেলার রুকুন?দি এলাকার শাহজাহা?ন হোসেনের ছে?লে। বৃহস্প?তিবার সকা?লে বিষয়?টি নি?শ্চিত ক?রে হাসপাতা?লের প?রিচালক ডা. বা?কির হো?সেন ব?লেন, মুমূর্ষু অবস্থায় ম?নির হো?সেন গত ১৮ আগস্ট হাসপাতা?লের মে?ডি?সি?ন ওয়া?র্ডে ভ?র্তি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দিবাগত মধ্যরা?তে তার মৃতু্য হয়। মনিরামপুরে শ্রমিকের মৃতু্য এছাড়া মনিরামপুর (যশোর) সংবাদদাতা জানান, যশোরের মনিরামপুর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল গাফফার (৫২) নামের এক মিল শ্রমিকের মৃতু্য হয়েছে। তিনি যশোরের নওয়াপাড়ার একটি জুট মিলে কাজ করতেন। গাফফার উপজেলার উপজেলার আম্রঝুটা গ্রামের মৃত. আক্কাস সানার ছেলে। মৃতু্যর বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রভাত চ্যাটার্জি নিশ্চিত করেছেন। নিহতের ছোট ভাই মাস্টার মশিয়ার রহমান জানান, বুধবার বেলা ২টার সময় ঢাকা আদ্ব-দ্বীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার ভাই মারা যায়। নিহতর মরদেহ বৃহস্পতিবার ভোরে নিজ গ্রামে এসে পৌঁছলে সকাল সাড়ে ৯টার সময় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিহতের মেয়ে ঢাকা অদ্ব-দ্বীন হাসপাতালের নার্স পাপিয়া সুলতানা জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তার বাবা প্রচন্ড জ্বরে ভুগছিলেন। এ অবস্থায় পরিবারের স্বজনরা তাকে গত রোববার (১৮ আগস্ট) যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তার ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়ে।