টিআইবির প্রতিবেদন

ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে দুর্নীতির মহোৎসব

বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ঘুষ নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে হয়রানি, জিম্মি করে অর্থ আদায় করা হচ্ছে

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সোমবার ধানমন্ডিস্থ মাইডাস সেন্টারে টিআইবি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। পাশে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল -যাযাদি
যাযাদি রিপোর্ট দলিলের নকল তোলার জন্য সেবাগ্রহীতাদের ১ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। দলিল নিবন্ধনের জন্য প্রতিটি দলিলে দলিল লেখক সমিতিকে ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। জমির দাম, দলিল ও দলিলের নকলের ধরন ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র থাকা না থাকার ওপর এবং এলাকাভেদে নিয়মবহির্ভূত অর্থ লেনদেনের পরিমাণ কমবেশি হয়। ভূমি দলিল নিবন্ধন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গুণগত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে 'ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, ভূমি নিবন্ধন সেবার প্রতিটি পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূতভাবে লেনদেন হয়। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবায় সুশাসনের ঘাটতি ব্যাপক, এ খাত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিভিন্নভাবে সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে অর্থ আদায় ও ঘুষ নেয়া হচ্ছে। দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হচ্ছে। এখানে কিছু ব্যতিক্রম বাদে হয়রানি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। ভূমি নিবন্ধন আর দুর্নীতি সমার্থক হয়ে গেছে। এখানে নিয়োগ-পদোন্নতিতেও দুর্নীতি ব্যাপকতা পেয়েছে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অন্য প্রায় সকল খাতের মতোই আইনি দুর্বলতা, সেবার মানোন্নয়নে ও নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে, জনবল, \হঅবকাঠামোগত, পরিকল্পনা ও উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে ডিজিটালাইজেশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে। অবকাঠামোগত দিক থেকে অধিকাংশ ভূমি অফিস জরাজীর্ণ। সুশাসনের ঘাটতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত করছে। তিনি বলেন, কোনো ভূমি দলিল নিবন্ধন অফিস ব্যতিক্রমও পেয়েছেন। অনেক কর্মকর্তা জবাবদিহিতার সঙ্গে স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু সে সংখ্যা তুলনায় খুবই কম। মোটাদাগে এ খাতে যে জবাবদিহিতা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা রয়েছে তা সম্পূর্ণভাবে কাজ করছে না। এর কারণ হচ্ছে এই সেবাখাতে যে দুর্নীতি-অনিয়ম হচ্ছে তা অংশীদারিত্বের ও যোগসাজশের মাধ্যমে দুর্নীতি হচ্ছে। সেখানে সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অংশীদারিত্বের দুর্নীতি হচ্ছে। যা কি না প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখায় রূপ নিয়েছে। সার্বিক চিত্রানুযায়ী, অন্য খাতের মতোই ভূমি দলিল নিবন্ধন অফিসে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা দেখতে পাই। যা কি না সুশাসনের ঘাটতিকে জটিল ও দুর্নীতিকে আরও উগ্রতর করে। সেবাখাত মানেই সুশাসনের ঘাটতি ও দুর্নীতিপ্রবণ। দলিল নিবন্ধন ও দুর্নীতি যেন অনেকটা সমার্থক হয়ে গেছে। এই খাতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি ও ঘুষ লেনদেনের চিত্র বিরাজ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত আছে যে, একজন সাব-রেজিস্ট্রারকে বদলি করতে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়েছে। ভূমি দলিল নিবন্ধন সেবাখাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করতে দুটি জিনিসকে গুরুত্ব দেয়া উচিত উলেস্নখ করে ড. ইফতেখার বলেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। কর্তৃপক্ষের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব। দুর্নীতির অংশীজনদের নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করা, দুর্নীতিপরায়ণদের শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সেবাগ্রহীতারা হয়রানি থেকে রক্ষা পাবেন, সরকারের রাজস্ব আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতি ও আধুনিকায়নকে গুরুত্ব দেয়া। যদিও সরকার এই কার্যক্রম গ্রহণ করলেও অগ্রগতি নেই। এক্ষেত্রে ই-নিবন্ধনসহ পুরো প্রক্রিয়াকে ডিজিটালাইজেশন করতে হবে। এটা সম্ভব হলে এই খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম কমে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সুলতানা কামাল, উপদেষ্টা (নির্বাহী) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। গবেষণা পরিচালনা ও প্রতিবেদন উপস্থাপন করে প্রোগ্রাম ডেপুটি ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) শাম্মী লায়লা ইসলাম ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) নিহার রঞ্জন রায়।