ভারতীয় ঋণের প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি শ্লথ

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট ভারতের সঙ্গে ঋণচুক্তির আওতায় (এলওসি) নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আনতে পারছে না সরকার। ৯ বছরে তিনটি চুক্তির আওতায় ৭৩৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের চুক্তি হলেও ছাড় হয়েছে মাত্র ৫৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। ঋণচুক্তির সমন্বয়ক অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তিনটি ঋণচুক্তির আওতায় ৪৭টি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রথম ঋণচুক্তির আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়ে ১৫টি প্রকল্প নেয়া হয়। এর মধ্যে ৯ বছরে ছাড় হয়েছে ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার; তিনটি প্রকল্প এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি এশিয়া উইংয়ের যুগ্ম সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, প্রথম ঋণচুক্তির আওতায় শেষ না হওয়া প্রকল্পগুলোতে জমি অধিগ্রহণ ও বস্তি উচ্ছেদ নিয়ে জটিলতা ছিল। সেগুলোর সমাধান হয়েছে। দ্বিতীয় ঋণচুক্তির আওতায় ২০০ কোটি ডলারের মধ্যে তিন কোটি ২৮ লাখ ডলার ছাড় হয়েছে। সাড়ে তিন বছর আগের এই ঋণচুক্তির আওতায় নেয়া ১৬টি প্রকল্পের একটিরও কাজ শুরু হয়নি। তবে তৃতীয় ঋণচুক্তির আওতায় কোনো অর্থ ছাড় শুরু হয়নি। প্রায় দুই বছর আগে ৪৫০ কোটি ডলারের এই চুক্তির আওতায় গৃহীত ১৬ প্রকল্পের কোনোটির কাজ শুরু হয়নি। ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, ভারতীয় এলওসির আওতায় নেয়া প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা দূর করে কাজে গতি আনতে ৩-৪ জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দেশের যৌথ পর্যালোচনা সভায় আলোচনা হয়েছে। প্রথম এলওসি: প্রথম এলওসির আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়ে ১৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১২টি প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হয়েছে। বাকি তিনটি প্রকল্প এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি। এগুলো সবই রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন। গত জুলাই পর্যন্ত প্রথম এলওসির মোট অর্থছাড় হয়েছে মাত্র ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা মোট ঋণের ৬২ দশমিক ১৮ শতাংশ। বাস্তবায়ন না হওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণকাজই শুরু হয় ২০১৬ সালে। এটার কাজ ২০১৮ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ সংশোধন করে ২০২১ সালের জুন মাস লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ঢাকা-টঙ্গী তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলতি বছর জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সংশোধন করে নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে জুন ২০১৩ সাল পর্য়ন্ত। এ ছাড়া কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন রেলপথ পুনর্বাসনের কাজও এ বছরের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তা পিছিয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৫৪ শতাংশ। প্রকল্পটিতে এখনো ভূমি অধিগ্রহণ বাকি আছে। এ ছাড়া রূপসা সেতুর কারণে প্রকল্পের নকশায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে; সেতু নির্মাণে পাইলিংয়েও কিছু সমস্যা রয়েছে। আর ঢাকা-টঙ্গী ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতার সঙ্গে ওই রুটে একটি এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় তা বেড়েছে। দ্বিতীয় এলওসি: ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ২০০ কোটি ডলারের দ্বিতীয় এলওসির আওতায় নেয়া ১৬টি প্রকল্পের মধ্যে ১৩টি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দুটি প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ ও মিরসরাইয়ে 'এস্টাবিস্নসমেন্ট অব ঢাকা আইটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) নির্মাণ' প্রকল্পটি যৌথ সভায় বাদ দিয়ে 'ডেভেলপমেন্ট অব ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর' শীর্ষক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তৃতীয় এলসি: ২০১৭ সালের অক্টোবরে তৃতীয় এলওসির আওতায় সড়ক পরিবহন, রেলপথ, নৌপরিবহন, বেসামরিক বিমান পরিবহন, স্থানীয় সরকার ও টেলিটকের ১৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এগুলোর মধ্যে একনেক সভায় চারটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে, পাঁচটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে, আর চারটি প্রকল্পের ডিপিপি প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়া কাটিহার-পার্বতীপুর-বরনগর ৭৬৫ কেভি আন্তঃসংযোগ বিদু্যৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটির তালিকা থেকে বাদ দিয়ে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যৌথ সভায়।