পুলিশকে প্রধানমন্ত্রী

উন্নয়নের জন্য শান্তি বজায় রাখুন

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি থানা সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান হওয়া উচিত, যেগুলো হবে সাধারণ মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের স্থান।

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বুধবার কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ক্রেস্ট প্রদান করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পাশে অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল -ফোকাস বাংলা
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তি ও শৃঙ্খলা অপরিহার্য উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, এ অবস্থা বজায় রাখতে পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট অনুমোদিত কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বুধবার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ব্যাংকটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় থাকা অপরিহার্য। আর এ দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই পুলিশ বাহিনীর ওপর বর্তায়। আমি আশাবাদী, পুলিশ এখন যেভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, তেমনি ভবিষ্যতেও করবে।' শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের আন্তরিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সরকার দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাবে, যেখানে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দর ও উন্নত জীবন পাবে। পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'প্রতিটি থানা সুন্দর ও দর্শনীয় স্থান হওয়া উচিত, যেগুলো হবে সাধারণ মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাসের স্থান।' মাদককে সামাজিক সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে আসন্ন দিনগুলোয় পুলিশকে আরও অভিযান চালানোর আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। মাদক পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। এমনকি মাদকের জন্য ছেলে মাকে হত্যা করে, ভাই ভাইকে হত্যা করে, ছেলে বাবাকে হত্যা করে...। এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করতে আরও তীব্র আকারে অভিযান চালাতে হবে। তবে বিশ্বের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এ অপরাধের ধরনও বদলে যাচ্ছে।' পরিবর্তিত বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে সরকার পুলিশের প্রশিক্ষণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটা পুরো বিশ্বের সমস্যা। শেখ হাসিনা বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভূমিকা অনেক প্রশংসনীয়। এ জন্য তাদের জীবনও বিসর্জন দিতে হচ্ছে। পুলিশকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য সরকার অ্যান্টিটেরোরিজম ইউনিট ও সাইবার পুলিশ সেন্টার গঠন করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রেও তারা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যখন বিএনপি-জামায়াত চক্র আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছিল, তখন ২৬ থেকে ২৭ জন পুলিশ সদস্যকে জীবন দিতে হয়েছিল। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব (জননিরাপত্তা বিভাগ) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মাদ জাভেদ পাটোয়ারী। পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইন অডিটোরিয়ামে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে এবং গুলশানের করপোরেট কার্যালয়ে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। বিদু্যৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান বিদু্যৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চারটি বিদু্যৎ কেন্দ্র, আটটি ৩৩/১১ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্র এবং ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদু্যতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার অনুরোধ থাকবে যারা বিদু্যৎ ব্যবহার করবেন তারা সাশ্রয়ী হোন, অতিরিক্ত বিদু্যৎ যেন নষ্ট না হয়। বিদু্যৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে বিলটাও কম আসবে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। কাজেই প্রত্যেকে বিদু্যৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হবেন, সাশ্রয়ী হবেন। 'আমরা কিন্তু যত টাকা দিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করি তার চেয়ে অর্ধেকের কম দামে বিদু্যৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। বিদু্যতে এভাবে ভর্তুকি দেয়া ঠিক নয়। তারপরও মানুষের কল্যাণে, মানুষের সুবিধার জন্য আপনারা বিদু্যৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবেন সেই আশা করছি।' সরকারে আসার পর বেসরকারি খাতে বিদু্যৎ উৎপাদনে আইন করার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। 'আমরা রাস্তাঘাট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি। সাথে সাথে বিদু্যৎটা অত্যন্ত জরুরি। বিদু্যৎ যখন গ্রামে-গঞ্জে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় তখন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। আমাদের লক্ষ্য প্রতিটা গ্রামে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দেয়া আর বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন করা। আমরা কিন্তু সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।' তিনি বলেন, 'প্রতিটা উপজেলা যেন সম্পূর্ণভাবে বিদু্যৎ পায় সেজন্য আমরা ঘোষণা দিয়েছি, যেন মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ আসে। শতভাগ বিদু্যৎ ধীরে ধীরে বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা, উপজেলা থেকে ইউনিয়নে পৌঁছে যাবে, সেটা আমরা পৌঁছাতে পারব।' দেশের বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে গ্যাস বিক্রির জন্য একসময় চাপ আসার কথাও বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'আগে গ্যাসের স্বল্পতা ছিল। গ্যাস বিক্রি করার জন্য ২০০১ এ আমাদের ওপর প্রচন্ড চাপ ছিল। গ্যাস আমাদের। আমরাই ১৯৯৬ সালে সরকারে এসে আন্তর্জাতিক টেন্ডার দিই। বিদেশিরা এসে গ্যাস উত্তোলন কাজ শুরু করে। সেই সময় চাপ আসল যে গ্যাস বিক্রি করতে হবে। 'দেশের মানুষের চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত গ্যাস থাকলে সেটা বিক্রি করব- এই নীতি নিয়ে আমি ছিলাম। কিন্তু বিএনপি তখন এক বাক্যে রাজি হয়ে গেল তারা ক্ষমতায় এলে গ্যাস বিক্রি করবে। যেহেতু আমি রাজি হইনি, তার খেসারত দিতে হয়েছে ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি।' আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে দেশ অন্ধকারে ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, '২০০১ এ যারা ক্ষমতায় এসেছিল তাদের একটাই লক্ষ্য ছিল নিজেরা আর্থিকভাবে কীভাবে লাভবান হবে। নিজেদের অর্থ-সম্পদের দিকেই তারা বেশি ব্যস্ত ছিল। সেই সাথে সাথে দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ সেই দিকেই তাদের নজর ছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশকে পিছিয়ে রেখেছিল।' প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদু্যৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।