ছাত্রদলের কাউন্সিল সহসা হচ্ছে না, সতর্ক বিএনপি

আইনি সব নিয়ম মেনেই ছাত্রদলের কাউন্সিল হবে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী কাউন্সিল প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ থাকবে না বিএনপির। কাউন্সিলরদের মধ্য থেকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠিত হবে এবং ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশ সময় লাগবে

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
হাসান মোলস্না এবার আইনি সব নিয়ম মেনেই ছাত্রদলের কাউন্সিল হবে। আইন অনুয়ায়ী পরবর্তী কাউন্সিল প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ থাকবে না বিএনপির। কাউন্সিলদের মধ্যে থেকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠিত হবে এবং ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে বেশ সময় লাগবে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১৪ সেপ্টেম্বর সংগঠনটির জাতীয় কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্মেলন প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক আমান উলস্নাহর এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতের একটি কারণ দর্শানোর নোটিশে বিএনপি সম্মেলন কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রাখেন। তবে এর পরদিন শুক্রবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে দলের আইনজীবী ও সম্মেলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে আইনি সব দিক নিয়ে আলোচনা হয়। চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় বিএনপির ত্রম্নটি কোথায়। দলের গঠনতন্ত্র ও আরপিও বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু ত্রম্নটি শনাক্তও করা হয়। এগুলো হচ্ছে- ছাত্রদলের কাউন্সিল প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ভুল করেছে বিএনপি। বিশেষ করে ৩ জুন রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের কমিটির বিলুপ্ত করা, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের ক্ষুব্ধ ১২ নেতাকে বহিষ্কার, কাউন্সিল করতে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন না করে বিএনপি নেতাদের সমন্বয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, যাচাই-বাছাই কমিটি ও আপিল কমিটি গঠন এবং এসব কমিটির নেতাদের কার্যক্রম কোনোটাই বিধিসম্মত হয়নি। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রদল হচ্ছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন। সংগঠনটি নিজস্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে। লিখিতভাবে বিএনপির কোনো নেতা ছাত্রদলের কর্মকান্ডে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বিএনপির গঠনতন্ত্রের ১৩ ধারায় বলা আছে, ছাত্রদল ও শ্রমিকদল স্ব-স্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হবে। আইনজীবীরা বলছেন, কাউন্সিল প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বিএনপি নেতাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং তাদের স্বাক্ষরে সব কার্যক্রম হয়েছে, যা আইনত গঠনতন্ত্র বিরোধী। আবার ছাত্রদলের চূড়ান্ত গঠনতন্ত্রও নেই। যা আছে তাও খসড়া। এই অবস্থায় ছাত্রদলের কাউন্সিলে বিএনপির হস্তক্ষেপ দূর করতে যা যা করণীয় সেই উদ্যোগ নিতে হবে। কাউন্সিল প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হলেও গত দুইদিন ধরে বিএনপি ও ছাত্র দলের মধ্যে আলোচনার মূল বিষয় হচ্ছে কবে হবে কাউন্সিল। আদালতের স্থগিতাদেশের বিষয়টা সঠিক ছিল না- এমন আলোচনা হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। এরপরেও কেন কাউন্সিল হলো না এমন- প্রশ্ন সিনিয়র নেতাদের কাছে ছিল ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। এর জবাবে সিনিয়র নেতারা বলেছেন, কারণ দর্শানোর নোটিশ যে সেব নেতাদের বিরুদ্ধে দেয়া হয়েছে তারা কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই এই নোটিশের পরে কাউন্সিল করলে জটিলতা আরও বাড়ত। এজন্য নির্ধারিত সময়ে কাউন্সিল করা থেকে বিরত থাকা হয়েছে। এর বাইরে কত দ্রম্নত সময়ে মধ্যে কাউন্সিল হবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ১৮ সেপ্টেম্বর কাউন্সিল হবে এমন গুজব ছিল। কিন্তু স্থগিত হওয়া কাউন্সিলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, বিএনপি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সব ধরনের নিয়ম মেনেই কাজ করতে চায়। আদালত নেতাদের বিরুদ্ধে যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়েছে তার জবাব দেয়া হবে। ভবিষ্যতে আইন অনুযায়ী ছাত্রদলের কাউন্সিলের বিষয়ে বিএনপির কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। ছাত্রদলের কাউন্সিলররাই তাদের সংগঠনের সম্মেলন করে নেতা নির্বাচন করবে। জানা গেছে, কাউন্সিলরদের সভা ডেকে বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন অথবা কাউন্সিলরদের কয়েকজনকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করে বর্তমান সমস্যার সমাধান করার বিষয়ে বিএনপিতে মত আছে। এ ছাড়া আরও আলোচনা আছে, ইউনিট কমিটির কাউন্সিলর (ভোটার) কাউকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া এবং প্রয়োজনে কয়েকজন কাউন্সিলরকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়। ছাত্রদলের এক নেতা জানান, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। তবে তারা জানতে পেরেছেন ছাত্রদলের নেতাদের সমন্বয়েই নির্বাচন পরিচালনা কমিটিসহ সমস্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার দায়িত্ব দেয়া হবে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বেশ সময় লাগতে পারে। সে ক্ষেত্রে চলতি মাসে কাউন্সিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২৭ বছর পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তাতে সভাপতি পদে ৯ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল।