রাব্বানীর ডাকসুতে থাকা নিয়েও প্রশ্ন

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০১

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার পর এবার তার ডাকসুর জিএস পদে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর মনে করছেন, যে কারণে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ খুইয়েছেন রাব্বানী, সেই কারণে ছাত্র সংসদের জিএস পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকে বলছেন, রাব্বানী যেহেতু ছাত্রলীগের মনোনয়নেই ডাকসুর জিএস নির্বাচিত হয়েছেন এবং সেই ছাত্রলীগ থেকেই বিভিন্ন 'অপকর্মের' কারণে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাই ডাকসুর জিএস থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন তিনি। গত মার্চে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রাব্বানী। ভিপি পদে নির্বাচিত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নেতা নুর। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে শনিবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হলে পদত্যাগ পদত্যাগ করেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক রাব্বানী। শোভন ও রাব্বানীর পদ খোয়ানোর ঘটনাটি ছিল রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার মূল বিষয়। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরমানুল হক বলেন, 'চাঁদাবাজির কারণে তাকে (রাব্বানী) ছাত্রলীগ থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একজন চাঁদাবাজকে সাধারণ ছাত্ররা কখনো আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে মানতে পারি না। আমরা ডাকসু ও সিনেট থেকে রাব্বানীর পদত্যাগ চাই। পাশাপাশি শোভনকেও সিনেট সদস্য থেকে বহিষ্কার করতে হবে।' মনোবিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্র বলেন, 'নৈতিক স্খলনের দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত একজন কী করে ডাকসুর জিএস পদে ছাত্রপ্রতিনিধি হিসেবে থাকতে পারে? ডাকসু থেকে তার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত।' ডাকসুর মনোনয়নে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে রাব্বানীর পাশাপাশি শোভনও রয়েছেন। নির্বাচনে শোভন ভিপি পদে লড়াই করলেও হেরেছিলেন নুরের কাছে। ভিপি নুর বলেন, 'নৈতিক স্খলনজনিত এবং দুর্নীতির দায়ে তিনি নিজের সংগঠন থেকে পদচু্যত হয়েছেন। সেই একই ব্যক্তিকে আমরা ডাকসুর পক্ষ থেকে নৈতিকভাবে সমর্থন করি না। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এটা সমর্থন করে না। 'সেই কারণে আমি মনে করি সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাকে অপমানজনকভাবে ডাকসু থেকে বিতাড়নের আগেই তার পদত্যাগ করা উচিত। কারণ সে তো এই পদে থাকার অধিকার রাখে না।' সিনেট সদস্য শোভনের কথা তুলে নুর বলেন, 'তারা প্রশ্নবিদ্ধ এবং দুর্নীতির সাথে জড়িত। সুতরাং তারা এখানে থাকা মানে সেই প্রতিষ্ঠানকেও কলুষিত করা, বিতর্কিত করা। ডাকসুতে থাকা মানে ডাকসুকে অনৈতিকভাবে তুলে ধরা, সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করা মানে সেই সিনেটকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা।' বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানান ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন, যিনি ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, 'এখানে দুটি বিষয় আছে। একটি হলো ডাকসু একটি স্বতন্ত্র বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এটি পরিচালিত হয়। আরেকটি হলো নীতি নৈতিকতার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা। 'বিষয়টি নিয়ে আমরা ডাকসুর ফোরামে এবং উপাচার্যের সাথে আলোচনা করে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।' নাম প্রকাশ না করে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত এক ডাকসু সম্পাদক বলেন, 'ছাত্রলীগ থেকে পদচু্যতির কারণে ডাকসু থেকে পদ চলে যাওয়ার কোনো বিষয় ডাকসুর গঠনতন্ত্রে নেই। 'তবে ডাকসুতে তিনি (রাব্বানী) থাকবেন কি না, এটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। নৈতিকভাবে তিনি ডাকসুতে থাকবেন, নাকি পদত্যাগ করবেন, এটি তার নিজের সিদ্ধান্ত।' গঠনতন্ত্রের ৫(ক) অনুচ্ছেদে ডাকসুর সর্বোচ্চ কল্যাণের স্বার্থে যে কোনো সদস্যকে পদচু্যত করার ক্ষমতা রাখেন ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। রাব্বানীর বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, 'ছাত্রলীগ ও ডাকসু দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান। দুটির গঠনতন্ত্রও আলাদা। দুটিই নিজস্ব সংস্কৃতিতে চলবে। ডাকসুর গঠনতন্ত্রে যেটা দেয়া আছে, সেই মোতাবেক আমরা চলব।' সাংবাদিকরা উপাচার্যকে গঠনতন্ত্রের ৫ (ক) অনুচ্ছেদটি দেখালে তিনি বলেন, 'গঠনতন্ত্র দেখে বিষয়টি স্পষ্ট হতে হবে।' এদিকে রোববার দুপুরে ডাকসু ভবনের সামনে সমাবেশ করে ডাকসু থেকে রাব্বানীকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করে এক দল শিক্ষার্থী। ছাত্রলীগ নেতা রাব্বানীকে রোববার ক্যাম্পাসে দেখা যায়নি; এ বিষয়ে তার কোনো প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।