শুদ্ধি অভিযান

শুধু চুনোপুঁটি নয়, নজরে অনেক রাঘববোয়ালও

তালিকায় আছেন দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ যুবলীগের শীর্ষ একাধিক নেতাসহ সংগঠনের সাত নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের চার নেতা, কৃষক লীগের দুই নেতা এবং ছাত্রলীগের বহুল পরিচিত সাবেক কয়েকজন নেতা

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সোহেল হায়দার চৌধুরী
অনিয়ম ও অপকর্মের কারণে শুধু যুবলীগের মধ্যম সারির নেতা খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া নন, অনেক রাঘববোয়ালই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে পড়তে পারেন যেকোনো সময়। এদের মধ্যে দক্ষিণ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ যুবলীগের শীর্ষ একাধিক নেতাসহ সংগঠনের সাত নেতা, স্বেচ্ছাসেবক লীগের চার নেতা, কৃষক লীগের দুই নেতা এবং ছাত্রলীগের বহুল পরিচিত সাবেক কয়েকজন নেতা রয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ যেসব সংগঠনের নেতার নামে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এদের গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। বিভিন্ন সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা, সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন নজরদারিতে রয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে এলাকায় জমি দখল, বিভিন্ন সুবিধাবাদী চক্রের স্বার্থরক্ষায় বস্তি দখল, বিরোধী পক্ষের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবসা বাণিজ্য করা, সরকারি বিভিন্ন সিদ্ধান্তকে অমান্য করে বিশেষ গোষ্ঠীকে সহায়তা করা, জামাত-শিবির তোষণ, দলের নেতাকর্মীদের বদলে বিশেষ গোষ্ঠীর মাধ্যমে সংগঠন পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। নজরদারি ও চূড়ান্ত রিপোর্টের পরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। এরা দলীয় পদ থেকেও বাদ পড়বেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তাদের নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকান্ডের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দায়িত্ব দেয়া হবে বিস্তারিত তদন্তের জন্য। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন বলে জানা গেছে। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোটি কোটি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে কয়েকশর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের কেউই কোনো ধরনের ছাড় পাবেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণাকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার আমলনামা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন। ওই সূত্র জানায়, সংগঠনের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে থাকা যুবলীগের শ খানেক নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা বিষয়ে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা রাজধানীতে ক্যাসিনো ব্যবসা বা জুয়ার আসরের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এদের পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন এমন নেতা ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদেরও তালিকা হচ্ছে। সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি গত বুধবার স্পষ্টই বলেছেন, 'আওয়ামী লীগে কেউ দুর্নীতি-অনিয়ম করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা আছে দুর্নীতি দমন কমিশনকে। দুদককে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।' আওয়ামী লীগের আসন্ন সম্মেলন উপলক্ষে দলীয় সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সম্পাদকমন্ডলীর সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি নিজে বিষয়গুলো দেখছেন। দায়িত্বপ্রাপ্তদের গাইডলাইন দিচ্ছেন। একই দিনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ে বলেছেন, সরকারের মন্ত্রী বা সংসদ সদস্যদের মধ্যে কেউ দুর্নীতি-অনিয়ম ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ছাড়া পাবেন না। আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল গত বুধবার বেসরকারি চ্যানেল আরটিভির এক টকশোতে বলেছেন, শুধু চুনোপুঁটি নন, অনেক রাঘববোয়ালও আইনি জালে ধরা পড়বেন। সেদিকে এগোচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে শুদ্ধি অভিযান। এরই অংশ হিসেবে চাঁদাবাজি ও অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুৃল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর। তার আগে এই দুজনের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ঢোকার পাস বাতিল করা হয়। শেখ হাসিনা দলে বা দলের বাইরে থাকা অন্যায়কারী ও দুর্নীতিবাজদের আর ছাড় দিতে রাজি নন বলে দলীয় ফোরামে জানিয়েছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে তিনি ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের নানা অপকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ চৌধুরীকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দল ও সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কারও কারও বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ জানিয়ে আসছিল বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও এমন অভিযোগ দিয়ে আসছিলেন দলপ্রধানের কাছে। তারই সূত্র ধরে দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরসহ পেশাজীবীদের সতর্ক করে আসছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে কাউকে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে এবং সাংগঠনিক নেতার মাধ্যমেও সতর্ক করেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরও কিছু নেতাকর্মীর অনিয়ম-অপকর্ম বন্ধ হয়নি। তারা হয়ে উঠেছিলেন বেপরোয়া। এই পরিস্থিতিতে দলে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর নীতি অবলম্বন করলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।