কালো বিড়াল বেরিয়ে আসায় আ'লীগে অস্বস্তি

দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে দলীয় অবস্থান কঠোর হলেও এ নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ির বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না নীতিনির্ধারকরা। তাদের ধারণা দলের নেতাকর্মীদের একজনের বিরুদ্ধে অপরজনের অভিযোগ চালাচালির বিষয়টি এক পর্যায়ে সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেবে

প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সাখাওয়াত হোসেন
কাউন্সিলের আগেই গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে দুর্নীতিবাজ নেতাদের সরিয়ে দিতে দলীয় সভানেত্রীর কঠোর নির্দেশনার পর ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি এর সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনে অভিযোগ চালাচালির হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের যেসব নেতাকর্মী এতদিন দাপুটে গডফাদারদের অনৈতিক প্রভাবে নিস্ক্রিয় হয়ে ছিলেন, তারা এখন অনেকেই দুর্নীতিবাজ নেতার অপকর্মের তথ্য-প্রমাণ নিয়ে সরাসরি বিভিন্ন গোয়েন্দা কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার অফিসে গিয়ে হাজির হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার প্রভাবশালী নেতার অনিয়ম-দুর্নীতির ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও আবার দুর্নীতিবাজ নেতার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা ধরনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। ফলে ক্ষমতাসীন দল এবং এর সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের পদধারী নেতার পাশাপাশি বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের থলের কালো বিড়াল জনসম্মুখে বেরিয়ে আসছে। এতে দলীয় হাইকমান্ড চরম অস্বস্তিতে পড়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে দলীয় অবস্থান কঠোর হলেও এ নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ির বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না নীতিনির্ধারকরা। তাদের ধারণা, দলের নেতাকর্মীদের একজনের বিরুদ্ধে অপরজনের অভিযোগ চালাচালির বিষয়টি এক পর্যায়ে সংঘাত-সংঘর্ষে রূপ নেবে। এছাড়া এভাবে নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি চলতে থাকলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এসব ইসু্যতেই তাদের ঘায়েল করার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে অভিযোগ চালাচালির হিড়িক অব্যাহত থাকলে প্রকৃত দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন হবে। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির এক নেতা জানান, গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সমন্বয়ে মূল দলের পাশাপাশি সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনে পৃথক 'অভিযোগ সেল' গঠন করে নেতাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা যায় কি না তা ভেবে দেখা হচ্ছে। কেননা এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারকৃত কিছু দুর্নীতি-সন্ত্রাসের অভিযোগে গরমিল পাওয়া গেছে। অথচ নেতাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত এসব অভিযোগে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এতে শুধু অভিযুক্ত নেতারই মর্যাদাহানি ঘটেনি, পাশাপাশি দলীয় ইমেজও ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই দলীয় হাইকমান্ড এ ব্যাপারে এখনই লাগাম টেনে ধরা জরুরি বলে মনে করছে। এ প্রসঙ্গে দলের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা যায়যায়দিনকে বলেন, দলে সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজ নেতার সংখ্যা খুবই নগণ্য। অথচ ঢালাওভাবে এদের অপকর্মের চিত্র বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ায় দলের নিষ্ঠাবান নেতাকর্মীরা বিব্রত হচ্ছেন। বিভিন্ন মহল দলের অন্য নেতাদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানেও এ নিয়ে কথা উঠছে। তাই দুর্নীতিবাজ নেতাদের বিরুদ্ধে দ্রম্নত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করা উচিত। তা না হলে এ নিয়ে দলীয় কোন্দল ভয়াবহ রূপ নেবে। আর এতে দুর্নীতিবাজ নেতারাই লাভবান হবেন। কেননা সংঘাত-সংঘর্ষের ডামাডোলে দুর্নীতিবাজ নেতাদের পদচু্যত এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ ধামাচাপা পড়বে। এদিকে নিজেদের মধ্যে অভিযোগ চালাচালি এবং দুর্নীতিবাজ নেতাকর্মীদের অপকর্মের ফিরিস্তি জনসম্মুখে প্রকাশ হওয়ায় দল কী ধরনের অস্বস্তিতে পড়েছে- একথা জানতে চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির ৬ নেতাকে ফোন করা হলে তাদের কেউই এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ও দুদকের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্যে আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে অন্য নেতার অভিযোগ চালাচালির ব্যাপক প্রমাণ পাওয়া গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা যায়যায়দিনকে বলেন, মহানগরীর ৮টি ক্রাইম জোনে বেশকিছু মাদক ও জুয়ার আস্তানা থাকার তথ্য তাদের কাছে ছিল। কিন্তু এর প্রকৃত সংখ্যা কত এবং এর পরিচালনাকারীরা ক্ষমতাসীন দলের কোন পর্যায়ের নেতা- তা মাঠপর্যায়ে পুলিশ জানলেও শীর্ষ প্রশাসনের কাছে ছিল অজানা। এছাড়া এসব আস্তানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার গোপন পথের কথাও তারা জানত না। এ কারণে বিভিন্ন সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে রেট দিয়েও মাদকসেবী কিংবা জুয়াড়িদের তেমন ধরতে পারেনি। তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড দলে শুদ্ধি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়ার পর খোদ দলীয় নেতারাই এসব মাদক ও জুয়াড়ির আস্তানা সম্পর্কে গোয়েন্দাদের তথ্য দিতে শুরু করেছেন। এমনকি দুর্নীতিবাজ কোন নেতা কীভাবে এসব ঘাঁটি পরিচালনা করছেন, এ জন্য মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের কাকে কত টাকা দিচ্ছেন, গোয়েন্দারা এসব আস্তানায় হানা দিলে তারা কোন পথে কীভাবে পালাচ্ছেন তার সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে গোয়েন্দা অফিসে এসে দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ফোন কিংবা অনলাইনে এসব তথ্য তাদের হাতে পৌঁছাচ্ছেন। যদিও এসব নেতা তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করছেন। এ সংক্রান্ত বেশকিছু অভিযোগে গরমিল থাকলেও এর বেশিরভাগই সঠিক। যা গত সোম-মঙ্গল ও বুধবারের ক্লাবপাড়ার অভিযান চালানোর পর প্রমাণ পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তারা গত ৭২ ঘণ্টায় আরামবাগ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, খিলগাঁও, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ নগরীর প্রায় তিন ডজন স্পটে হানা দিয়ে বিপুল সংখ্যক জুয়াড়ি ও মাদকসেবী আটক করেছে। যাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী কিংবা পেশাজীবী। তবে এসব স্পটের পরিচালনাকারী হিসেবে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের বেশ ক'জন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম বেরিয়ে এসেছে। এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ-পরিচালক পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা গত কয়েকদিনে ক্ষমতাসীন দলের অর্ধশতাধিক নেতার দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তারা জানান, প্রায় প্রতিদিনই দুদক কার্যালয়ে শত শত দুর্নীতির অভিযোগ জমা পড়ে। যার বেশির ভাগই সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। অথচ গত কয়েকদিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দুদক কার্যালয়ে যেসব অভিযোগ জমা পড়েছে, তার একটি উলেস্নখযোগ্য অংশে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের নাম রয়েছে। বেশিরভাগ অভিযোগপত্রে অভিযোগকারীর নাম-ঠিকানা না থাকলেও তাদের পাঠানো এ সংক্রান্ত দলিলাদিতে অভিযুক্ত নেতাদের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দুদক কর্মকর্তাদের ধারণা, দলে দীর্ঘদিন ধরে কোণঠাসা নেতারা শুদ্ধি অভিযানের সুফল কাজে লাগাতেই দুর্নীতিবাজ গডফাদারদের অপকর্মের ফিরিস্তি তাদের কাছে তুলে ধরেছেন। এদিকে নেতাকর্মীদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়িতে দলীয় ইমেজ সংকটের আশঙ্কার কথা আওয়ামী লীগ নেতারা স্বীকার না করলেও গত মঙ্গলবার যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে কোনো অভিযোগ সরাসরি তাকে জানানোর আহ্বান জানান। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যুবলীগের কোনো নেতা বা শাখার বিরুদ্ধে নূ্যনতম অভিযোগেরও যদি সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যদি এ অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগটি পাঠানো হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। তবে এর একদিন পরই যুবলীগের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো পরিচালনা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম হাতেনাতে প্রমাণিত হওয়ার পর তিনি তার সুর পাল্টে দুর্নীতিবাজ নেতাদের পাশাপাশি এসব ঘটনায় প্রশ্রয়দাতা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও শাস্তি দাবি করেন, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নতুন করে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এদিকে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কথা ঘোষণা করলেও এ সংগঠনের কোণঠাসা থাকা অনেক নেতাই এখন দুর্নীতিবাজ ছাত্রলীগ নেতাদের অপকর্মের ফিরিস্তি নানা মাধ্যমে তুলে ধরছেন। গত বুধবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করেছে দলের অন্য একটি গ্রম্নপ। এর আগে নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এসময় তারা '৪০ লাখের কমিটি, মানি না মানব না'সহ বিভিন্ন স্স্নোগান দেন। সম্প্রতি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের 'টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার' কথোপকথনসহ একটি অডিও ফাঁস হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গস্নাস অ্যান্ড সিরামিকস ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতার একটি ভিডিও এবং অন্য এক নেতার একটি স্থিরচিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। স্বল্প সময়ের ওই ভিডিওতে ছাত্রলীগ নেতাকে ইয়াবা সেবন করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে স্থিরচিত্রে প্রদর্শিত অপর ছাত্রলীগ নেতাকে ছাত্রদলের একটি মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার দৃশ্য রয়েছে। মিডিয়া কর্মীরা জানান, শুধু ঢাকার দু-একজন নেতার বিরুদ্ধেই নয়, সারাদেশেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অভিযোগ চালাচালি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে কিছু অভিযোগ সত্য হলেও, অধিকাংশ অভিযোগে মাত্রাতিরিক্ত রঙ ছড়িয়ে ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভেতরে এ ধরনের অভিযোগ চালাচালি, তাদের নানা দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ ফাঁস, অভিযুক্ত কয়েকজনের বিরুদ্ধে দলের কঠোর অবস্থান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদককে অস্ত্র-মাদকসহ গ্রেপ্তারের ঘটনা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না তা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড এ ব্যাপারে সাফ 'না' সূচক জবাব দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ক্ষেত্রের আগাছা পরিষ্কার করলে ফসলের ফলন যেমন বাড়ে, তেমনি দল থেকে দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে দিলে সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিক আহমেদ যায়যায়দিনকে বলেন, 'যেসব অভিযোগে ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে- এগুলো অনেক আগ থেকেই হয়ে আসছে। কিন্তু সরকারকে এতদিন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। বর্তমান এবং সামনের সময়কে সরকার সম্ভবত অতটা প্রতিকূল মনে করছে না। কারণ বিরোধী দলগুলো এরই মধ্যে ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাই তাদের মোকাবিলা করতে সরকার হয়তোবা এখন প্রশাসনকেই যথেষ্ট মনে করছে। আর এ কারণে হয়তো সরকার তার দলীয় ক্যাডার বাহিনী, বিশেষ করে ক্যাডারদের মধ্য থেকে যে অংশ চাঁদাবাজি এবং মাদকে আসক্ত তাদের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দেশের মানুষ কিছু বিষয় লক্ষ্য করেছে যে, প্রায় প্রতিদিনই চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, গ্যাং বাহিনীর কর্মকান্ড পত্রিকা-টেলিভিশনের নিয়মিত খবরে পরিণত হয়েছে এবং প্রায় প্রতিটি ঘটনার পেছনেই আওয়ামী লীগের নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। অতীতে দুর্নীতি, মাদক এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের খবর এত বেশি আলোড়ন তোলেনি। এগুলো ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণেও হয়তোবা সরকারপ্রধান এর লাগাম টেনে ধরার প্রয়োজন বোধ করছেন।' শফিক আহমেদ আরও বলেন, 'অনেকের কাছে মনে হতে পারে ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিরুদ্ধে এসব ব্যবস্থা ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে দুর্বল করে ফেলতে পারে বা অন্তঃমুখী করতে পারে। কিন্তু তারা ভুল ভাবছেন। কাউকে দুর্নীতির সুযোগ দেয়া, মাদকের কারবার করতে দিয়ে রাজনীতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করা যায় না। বরং এগুলো অন্তঃকোন্দলকে বাড়িয়ে দেয়। আমাদের অভিজ্ঞতাবলে এগুলোতে আসক্তরা প্রতিপক্ষকে নয়, বরং নিজেদের মধ্যে বেশি সংঘাতে লিপ্ত হয়। ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সারাক্ষণ দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকে, যা সাম্প্রতিক সময়ের সংবাদের ধারাবাহিক শিরোনাম হচ্ছে। বরং স্বচ্ছ রাজনীতিবিদরাই দুঃসময়ে পাশে থাকেন। এটি পরীক্ষিত। ফলে যারা মনে করছেন, এসব ব্যবস্থা দলকে দুর্বল করবে বা নেতাকর্মীদের রাজনীতিবিমুখ করবে তারা ভুল ভাবছেন।' পরিচ্ছন্ন রাজনীতিকরাই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এবং নিজেদের পক্ষে সঠিক অবস্থানটি নিতে পারেন বলে মনে করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।