জুয়ার সামগ্রী জব্দ

মতিঝিলের চার ক্লাবে অভিযান

প্রায় দুই ঘণ্টার এই অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে ক্যাসিনো বোর্ডের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ তাস খেলার সামগ্রী, জুয়ার বোর্ড, জুয়া খেলার সামগ্রী এবং মাদকদ্রব্য মদ ও সিসা উদ্ধার করা হয়

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর মতিঝিলে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে রোববার বিকালে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান চালান পুলিশ ও ডিবির সসদ্যরা। এ সময় জুয়ার বোর্ডসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম, নগদ টাকা ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয় ষ ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে অভিযানের ছবি পৃষ্ঠা-১৬ -ফোকাস বাংলা
রাজধানীর মতিঝিলে ক্লাবপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব ও দিলকুশা ক্লাব থেকে অন্তত ১২টি ক্যাসিনোসহ বিপুল পরিমাণ জুয়া খেলার সামগ্রী উদ্ধার করেছে পুলিশ। রোববার বেলা আড়াইটার দিকে এই অভিযান চালায় পুলিশের মতিঝিল বিভাগ। এই তিন ক্লাবের পাশাপাশি আরামবাগ ক্লাবেও অভিযান চালানো হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার এই অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে ক্যাসিনো বোর্ডের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ তাস খেলার সামগ্রী, জুয়ার বোর্ড, জুয়া খেলার সামগ্রী এবং মাদকদ্রব্য (মদ, সিসা) উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযান চালানো এই ক্লাবগুলোতে যে জুয়া খেলা হয়, সে ব্যাপারে আগে থেকে কোনো তথ্য পুলিশের কাছে ছিল না বলে দাবি করেছেন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শিবলী নোমান। তিনি বলেন, এই ক্লাবগুলোর ভেতরে যে ক্যাসিনো আছে বা এখানে যে জুয়া খেলা হতো, এ বিষয়ে পুলিশের কোনো ধারণা ছিল না। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চারটি ক্লাবে একযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। অভিযানে থাকা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে ৯টি ক্যাসিনো পাওয়া গেছে। ক্লাবটির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলরুমে ঢুকে দেখা গেছে, সুসজ্জিত ও অত্যাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন হলরুমে জুয়া খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অভিযানে ৯টি ক্যাসিনোর পাশাপাশি অসংখ্য জুয়া খেলার বোর্ডও পাওয়া গেছে। ক্লাবটি থেকে নগদ ১ লাখ টাকাও জব্দ করা হয়েছে। জুয়া খেলতে আসা ব্যক্তিদের জন্য ক্লাবের ভেতরে আছে আলাদা রন্ধনশালা। সেখানে চাইনিজ-কন্টিনেন্টালসহ সব ধরনের খাবার প্রস্তুত করার ব্যবস্থা আছে। হলরুমের দেয়ালে বেশ কিছু অশ্লীল ছবিও টানানো দেখা গেছে। ভিক্টোরিয়ার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবেও অভিযান চালায় পুলিশ। ক্লাবের ভেতরে অসংখ্য জুয়া খেলার বোর্ড, সরঞ্জাম এবং অন্তত দুটি ক্যাসিনো পাওয়া গেছে। এ ছাড়া টাকা গোনার বেশ কয়েকটি মেশিন ও হাউজি সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে। ভিআইপি ব্যক্তিদের জন্য আছে আলাদা ছোট ছোট কক্ষ। আছে আলাদা টাকা গোনার কক্ষ ও রন্ধনশালা। ক্লাবের ভেতর থেকে ১২টি ওয়াকিটকিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। মোহামেডানের মতো দিলকুশা ক্লাবেও ভিআইপিদের জন্য জুয়া খেলার আলাদা কক্ষ দেখা গেছে। এই ক্লাব থেকে একটি ক্যাসিনো ও ১৩টি জুয়া খেলার বোর্ড পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় যুবলীগ নেতাদের '৬০টি ক্যাসিনো চালানোর' খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই গত বুধবার বিকালে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায়র্ যাব। শাজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনিতে বেড়ে ওঠা খালেদ ফকিরাপুলের ওই ক্লাবের সভাপতি। কয়েক ঘণ্টার অভিযানে ওই ক্লাবে ক্যাসিনো বসিয়ে জুয়ার আড্ডা চালানোর বিপুল আয়োজন পাওয়া যায়। সেখান থেকে ২৪ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়। আর গুলশানের বাসা থেকে খালেদকে গ্রেপ্তারের পর তার বাসায় ৫৮৫টি ইয়াবা, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং অবৈধ অস্ত্র পাওয়ার কথা জানায়র্ যাব। ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবের পাশাপাশি ওই এলাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, বঙ্গবন্ধু এভিনিউর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা একটি ক্যাসিনোতেওর্ যাবের অভিযান চলে। দেশের বিভিন্ন ক্লাবে অবৈধভাবে জুয়ার আসর বসানোর অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশেও যে স্স্নট মেশিন, রুলেট টেবিলের মত সরঞ্জাম নিয়ে পুরোদস্তুর ক্যাসিনো চলে, সে খবর সাধারণ মানুষের কাছে নতুন। পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে এসব ক্যাসিনো এতদিন চলে আসছে সেই প্রশ্ন ওঠে ইয়ংমেনস ক্লাবের্ যাবের অভিযানের পর। এর দুই দিনের মাথায় শুক্রবার ঢাকার কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ও ধানমন্ডি ক্লাবেও অভিযান চালায়র্ যাব। কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকে ক্লাব সভাপতি কৃষক লীগ নেতা সফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। ধানমন্ডি ক্লাবের বারে কী পরিমাণ মদের মজুদ আছে, সেই হিসাব জমা দিতে বলা হয়। শনিবার চট্টগ্রামের পাঁচটি ক্লাবে একযোগে অভিযান শেষে তিনটি ক্লাবে জুয়ার আসর চালানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানো হয়র্ যাবের পক্ষ থেকে।