ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে খুন, নৃশংসতার পাঁচ অভিযোগ

প্রকাশ | ০৯ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। তাদের কর্মীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন ও নির্যাতনের অনেক ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। যারা এরকম ঘটনার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে সাধারণ শিক্ষার্থী, সাধারণ মানুষ যেমন আছেন, তেমনি নিজের দলের অনেক নেতাকর্মীও রয়েছেন। গণমাধ্যমে সমালোচনা-বিতর্কের ঝড় উঠলেও এসব ঘটনায় দায়ীদের খুব কম ক্ষেত্রেই বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সব আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করেন কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে বারবার। আওয়ামী লীগের নেতারাও এখন প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন যে, ছাত্রলীগের বেপরোয়া কাজকর্মে তারাও বিব্রত। সাম্প্রতিক সময়ের চাঞ্চল্যকর পাঁচটি ঘটনা যেগুলোর জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়: ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় চোখ জখম গত বছরের ফেব্রম্নয়ারির শুরুর দিকের ঘটনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এহসান রফিক নিজের সলিমুলস্নাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগের এক নেতাকে একটি ক্যালকুলেটর ধার দিয়েছিলেন। মাস কয়েক হয়ে গিয়েছিল সেটি ফেরত পাননি। সেটি ফেরত চাইলে শুরুতে কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। এ ঘটনার জের পরে তাকে হলের একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। এহসান রফিকের একটি চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়েছিল। তার সেই ফুলে ওঠা চোখ আর কালশিটে পড়া চেহারাসহ ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। পরের দিকে তিনি চোখের দৃষ্টি প্রায় হারিয়ে ফেলছিলেন। চোখে অস্ত্রোপচারের দরকার হয়েছিল। ওই ঘটনায় একজনকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও সাতজনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনেই বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে দিনদুপুরে খুন হন ওই এলাকার একটি দর্জি দোকানের কর্মী বিশ্বজিৎ দাস। সেদিন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলের অবরোধ কর্মসূচি চলছিল। ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে তাদের একটি মিছিল পৌঁছালে সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীদের হামলার শিকার হয় মিছিলটি। সেখানে ছিলেন পথচারী বিশ্বজিৎ দাস। ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা তাকে ধারাল অস্ত্র ও রড দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সংবাদ মাধ্যমের অনেক ক্যামেরার সামনেই। সে সময় তাকে নির্মমভাবে হত্যার দৃশ্য, রক্তাক্ত শার্ট পরা বিশ্বজিতের নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টার ছবিসহ খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছিল। হত্যাকান্ডের এক বছর পর একটি দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনাল ওই ঘটনার মামলার রায় দেয়। যাতে ২১ জনের মধ্যে আট জনের মৃতু্যদন্ড এবং ১৩ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল। তবে বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে মৃতু্যদন্ড থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। জুবায়ের হত্যাকান্ড : নিজের দলের কর্মীকেই হত্যা ওই একই বছরের শুরুর দিকের ঘটনা ছিল জুবায়ের হত্যাকান্ড। জুবায়ের আহমেদ ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র। তিনি নিজেও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কলহের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন তিনি মারা যান। জুবায়ের আহমেদের হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসময় ব্যাপক আন্দোলন হয়েছিল। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জনের কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। আন্দোলনের চাপে সে সময়কার উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। এই ঘটনায় মামলা আপিল পর্যন্ত গড়িয়েছিল। গত বছর ৫ জনকে মৃতু্যদন্ড এবং দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। দন্ডপ্রাপ্তরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন দিয়াজ ইরফান চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই একটি ভাড়া বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। প্রথমদিকে তাকে হত্যা করার আলামত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মেলেনি। তার বাবার করা নতুন হত্যা মামলায় তার মরদেহ আবার ময়না তদন্ত করা হয়। যাতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার ভাড়া বাসা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দিয়াজের মরদেহের প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর। দু'দিন পর পুলিশ জানায়, তাকে হত্যা করার আলামত ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মেলেনি। ছেলে হত্যার বিচার না পেয়ে দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মা জাহেদা আমিন চৌধুরী একাই ব্যানার-পোস্টার নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন অনেকবার। এ বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা চলাকালে ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি। মামলাটি এখনো সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ। এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে আগুন আবারও ২০১২ সালেরই একটি ঘটনা। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। যাতে পুড়ে গিয়েছিল ছাত্রাবাসের ৪০টির বেশি কক্ষ। সেদিন ছাত্র শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। ঘটনার পাঁচ বছর পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। যাতে বলা হয়েছে, সংঘর্ষের জের ধরে ছাত্রলীগের কর্মীরাই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে যাদের চিহ্নিত করা হয়েছিল তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ওই ছাত্রলীগ কর্মীদের অবশ্য তার আগেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। সেগুলো বিচারাধীন রয়েছে। বিবিসি বাংলা