বুয়েট শিক্ষার্থীদের ১০ দফা দাবি

শোকের ক্যাম্পাসে ক্ষোভের আগুন

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আবরার ফাহাদের হত্যাকারীদের শাস্তিসহ ১০ দফা দাবিতে টানা তৃতীয় দিন বুধবার বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ষ আরও ছবি পৃষ্ঠা-১৬ -যাযাদি
আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শোকাহত শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দিনের আন্দোলনে মঙ্গলবার ক্যাম্পাস ছিল উত্তপ্ত। আগের দিনের মতোই বুধবার সকাল থেকে বুয়েটের শহীদ মিনার চত্বরে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে। আগামীকাল ১১ অক্টোবরের মধ্যে শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, আবরারের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি, জড়িতদের বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কারের পুরনো দাবির সঙ্গে অবিলম্বে আবরার হত্যা মামলার চার্জশিট প্রকাশ এবং ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানান তারা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে তিনজন এসব দাবি সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনান। তাদের একজন প্রতিনিধি বলেন, 'বেঁধে দেওয়া সময়ে দাবি পূরণ না করা হলে ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষাসহ সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।' ১০ দফা দাবি হলো: ১. আবরার ফাহাদের খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুসারে শনাক্ত খুনিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ২. সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জড়িতদের শনাক্ত করে শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কার করতে হবে। ৩. মামলার সব খরচ এবং আবরারের পরিবারের ক্ষতিপূরণ বুয়েট প্রশাসনকে বহন করতে হবে। শুক্রবার বিকাল ৫টার মধ্যে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক নোটিশ জারি করতে হবে। ৪. দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনালে স্বল্পতম সময়ে আবরার হত্যা মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য বুয়েট প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বুয়েট প্রশাসনকে সক্রিয় থেকে সমস্ত প্রক্রিয়া নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং নিয়মিত ছাত্রদের তথ্য দিতে হবে। ৫. আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের কপি অবিলম্বে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে হবে। ৬. বুয়েটে 'সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি' নিষিদ্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক সংগঠনের ব্যানারে দীর্ঘদিন ধরে বুয়েটে হলে হলে 'ত্রাসের রাজনীতি' কায়েম করে রাখা হয়েছে। জুনিয়র ব্যাচকে সবসময় ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে কোনো সময় যে কোনো হল থেকে সাধারণ ছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলে হলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। রাজনৈতিক সংগঠনের এহেন কর্মকান্ডে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা ক্ষুব্ধ। তাই ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েটে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে। ৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কেন ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও ঘটনাস্থলে যাননি এবং ৩৮ ঘণ্টা পরে উপস্থিত হয়ে কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরূপ আচরণ করেছেন, কেন তিনি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্থান ত্যাগ করেছেন, তাকে ক্যাম্পাসে এসে জবাবদিহি করতে হবে। ৮. আবাসিক হলগুলোতের্ যাগের নামে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের ওপর সকল প্রকার শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের সন্ত্রাসে জড়িত সবার ছাত্রত্ব প্রশাসনকে বাতিল করতে হবে। একই সাথে আহসানউলস্নাহ হল এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোতে জড়িত সবার ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে। ৯. আগে ঘটা এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ এবং পরবর্তীতে তথ্য প্রকাশের জন্য একটি কমন পস্ন্যাটফর্ম হিসেবে কোনো ওয়েবসাইট বা ফর্ম থাকতে হবে এবং নিয়মিত প্রকাশিত ঘটনা রিভিউ করে দ্রম্নততম সময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই পস্ন্যাটফর্ম হিসেবে বুয়েটের বিআইআইএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতে হবে। ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি প্রদর্শন করতে হবে এবং পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সবগুলা উইংয়ের দুই পাশে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। ১০. রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে আবাসিক হল থেকে ছাত্র উৎখাতের ব্যাপারে নীরব থাকা এবং ছাত্রদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হওয়ায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টকে ১১ অক্টোবর বিকাল ৫টার মধ্যে প্রত্যাহার করতে হবে। বুয়েট ভিসির পদত্যাগ দাবি শিক্ষক সমিতির এদিকে বুয়েটের হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ব্যর্থতার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। সমিতির সভাপতি একেএম মাসুদ বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে শিক্ষক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুয়েটে আগের বিভিন্ন ঘটনায় ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে এই অবস্থা হয়েছে। 'আমরা উনাকে এসব ঘটনার জন্য দায়ী করছি। উনাকে বুয়েট থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আমরা পদত্যাগ দাবি করছি। উনি যদি পদত্যাগ না করেন, সরকারের কাছে অনুরোধ থাকবে উনাকে যেন অপসারণ করা হয়।' এর আগে সকাল ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত জরুরি সভায় বসে শিক্ষক সমিতি। এদিকে আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ব্যর্থতার দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ পুরো প্রশাসনের অপসারণ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্রদের সমিতি। সকালে বুয়েট খেলার মাঠে জরুরি বৈঠক থেকে হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের জন্য সাত দফা দাবি জানায় বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। বৈঠকের পর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, 'বুয়েট অ্যালামনাই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এই নির্মম হত্যকান্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দীর্ঘদিনের নির্লিপ্ততা, অব্যবস্থাপনা ও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত ব্যর্থতার ফল। অতীতে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমের তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে উপাচার্যসহ বুয়েট প্রশাসনের ধারাবাহিক অবহেলা ও ব্যর্থতা এই নির্মম হত্যাকান্ডে মদদ জুগিয়েছে।' সমিতির ৭ দফা দাবি- ১. অনতিবিলম্বে আবরার ফাহাদ হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে বিশেষ বিচার ট্রাইবু্যনালের আওতায় এনে দ্রম্নত সময়ে বিচার করতে হবে। ২. হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সব ছাত্রকে অনতিবিলম্বে বুয়েট থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করতে হবে। ৩. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠনভিত্তিক ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সব রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করতে হবে। ৪. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ঐতিহ্যের পরিপন্থি যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব ও প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ৫. অবিলম্বে উপাচার্যের অপসারণসহ প্রশাসনের আমূল পরিবর্তন করে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মান অতীতের মতো সমুন্নত রাখতে সুযোগ্য নির্ভীক ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের পদায়ন করতে হবে। ৬.র্ যাগিং এবং অন্যান্য অজুহাতে ছাত্রছাত্রী নির্যাতন নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৭. আবরার হত্যাসহ ইতোপূর্বে সংঘটিত অন্যান্য ছাত্র নির্যাতনের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে অসম্পূর্ণ বিচারকাজ অবিলম্বে সম্পন্ন করতে হবে, উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের প্রভোস্টের পদত্যাগ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট ড. মো. জাফর ইকবাল খান পদত্যাগ করেছেন। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ৩০০ শিক্ষকের সমন্বয়ে এক বৈঠকে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। বৈঠকে হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে বুয়েট ভিসির পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে বুয়েট শিক্ষক সমিতি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থী, সিসিটিভি ফুটেজ ও আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হত্যাকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। সূত্র জানায়, ফাহাদকে জেরা ও পেটানোর সময় হলের ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশাররফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় ফাহাদকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন। তারা সবাই মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী। বুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর ৫ দিনের রিমান্ড বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার বুয়েটের তিন শিক্ষার্থীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বুধবার বিকেলে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জাল হোসেন তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে দুপুরে আসামিদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান। শুনানি শেষে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বুয়েটের ওই তিন শিক্ষার্থী হলেন- শামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১) ও মো. আকাশ (২১)। রাফাত বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। মনির বুয়েটের পানিসম্পদ বিভাগের ১৬তম ব্যাচের এবং আকাশ একই ব্যাচের সিই বিভাগের ছাত্র। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ঝিগাতলা থেকে রাফাতকে, ডেমরা থেকে মনিরকে ও সন্ধ্যা ৬টায় গাজীপুরের বাইপাল থেকে আকাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। আন্দোলনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ক্যাম্পাসে টানা আন্দোলনের উত্তাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ১৪ অক্টোবর এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আবরার হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৮ দফা দাবিতে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি মেনে না নিলে ১৪ অক্টোবরের ভর্তি পরীক্ষা আটকে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রমও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাবিতে ছাত্রদলের মৌন মিছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পদক ইকবাল হোসেন শ্যামল। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে টিএসসি এসে তাদের মিছিল শেষ করে। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, 'সরকার ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তা দেশের স্বার্থবিরোধী। সেগুলোই আবরার ফেসবুকে লিখেছিল। আমরা সেসব দাবি বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি।' ফাহাদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃতু্যদন্ড নিশ্চিত করার দাবিও জানান তিনি। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ কোথাও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নেই। ডাকসু নির্বাচন হলেও ক্যাম্পাসে কার্যকরী সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি প্রশাসন। আমরা ভয়ভীতিহীন ক্যাম্পাস চাই। এদিকে ফাহাদ হত্যার ঘটনায় বুয়েটে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের আল্টিমেটামসহ নতুন করে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলায় আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ফাহাদ বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মিছিল নিয়ে বুয়েটে ভিপি নুর দুপুর দেড়টার দিকে কালো পতাকা মিছিল নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর। এরপর তিনি বুয়েটে আন্দোলনরতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আবরার ফাহাদ প্রথম নয়। ২০০২ সালে বুয়েটে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড হয়েছে, ঢাকা মেডিকেলে রাজীবকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দখলদারিত্ব চলছে। তারা জোর করে শিক্ষার্থীদের মিটিং-মিছিলে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এখন সময় এসেছে ছাত্রসমাজের ঐক্যবদ্ধ থাকার। আমরা অনুভূতির জায়গা থেকে আপনাদের এখানে এসেছি মিছিল নিয়ে। আপনাদের যে দলবাজ প্রশাসন রয়েছে তারা একটি সন্তানের মৃতু্যর পরও ঘটনাস্থলে আসতে পারে না। এর জবাবদিহিতা আপনারা নিশ্চিত করবেন। আমার আহ্‌বান থাকবে, 'আপনাদের দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা যেন এই আন্দোলন বন্ধ না করেন।'