শুদ্ধি অভিযান

ক্ষুব্ধ হলেও শাসকদলের সবার মুখে কুলুপ

প্রকাশ | ১০ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

সোহেল হায়দার চৌধুরী
সম্প্রতি ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে জব্দকৃত জুয়ার সরঞ্জাম -ফাইল ছবি
দেশে চলমান শুদ্ধি অভিযান নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ক্ষুব্ধ হলেও মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে নারাজ। দল ও সংগঠনের আসন্ন কাউন্সিলে বাদপড়া বা সংযুক্ত না হওয়ার আশঙ্কায় সবাই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তারা এখন নিজেদের পদ-পদবি রক্ষা বা পদ-পদবিতে আসার লক্ষ্যে ব্যস্ত। ফলে দল বা সংগঠনে থাকা বন্ধু-প্রিয়জন কারো পক্ষে সামান্যতম কথা নেই কারো মুখে। বরং শুদ্ধি অভিযান নিয়ে আলাপ-আলোচনা উঠলেই স্থান ত্যাগ করছেন অনেক নেতা। এ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দলপ্রধান শেখ হাসিনার রোষানলে পড়ার আশঙ্কায় প্রকাশ্যে বা গোপনে কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাইছেন না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর ২ জন সদস্য, ১ জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ৩ জন সাংগঠনিক সম্পাদক, কার্যনির্বাহী সংসদের ১২ জন সদস্যের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো কথা বলতে চাননি। গত ৩ দিনে মুখোমুখি বা সেলফোনে অভিযান নিয়ে তাদের মন্তব্য জানতে চাইলে কেউ এড়িয়ে গেছেন, কেউবা সেলফোনের লাইন কেটে দিয়েছেন। দলের 'বিবেক' বলে পরিচিত নেতারাও চুপসে গেছেন। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের এই নেতাদের মধ্যে দুই জন সাবেক মন্ত্রী, একজন বর্তমান মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, দুই জন অতি পরিচিত রাজনীতিবিদ এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে অনিয়ম, অপকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে চলমান অভিযান নিয়ে প্রশাসনেও নানারকম দোদুল্যমানতা লক্ষ্য করা গেছে। বিভিন্ন সংস্থার তদন্ত ও তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় এমন অনেক বাঘা বাঘা ব্যক্তির নাম যুক্ত হচ্ছে- যাদের আইনের আওতায় আনা যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী আবারও দল-মত নির্বিশেষে অভিযান চালিয়ে যাবার বিষয়ে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের একজন জানান, শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে নিয়মিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি সব জানছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন। ওই নেতা জানান, রাজধানীর দুই সংসদ সদস্যসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, প্রশাসনের কয়েকজন পরিচিত ব্যক্তি নজরদারিতে রয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ আপাতত গ্রেপ্তার হচ্ছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের 'বিবেক' বলে পরিচিত একজন নেতা তার বাসভবনে গেলে বলেন, শুদ্ধি অভিযান নিয়ে যা হচ্ছে তা দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের সাধারণ মানুষ মনে করছে দুর্র্নীতি, অপকর্ম ও অনিয়মের সঙ্গে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা জড়িত। তার মতে, চলমান অভিযান আরও বিস্তৃত করে দল-মত-নির্বিশেষে পরিচালিত হওয়া দরকার এবং প্রশাসনসহ সর্বস্তরের অপকর্মকারীদের আইনের আওতায় আনা উচিত। তাতে দলের নেতা-কর্মীরা কিছুটা হলেও আতঙ্কমুক্ত হবে। এ কথাগুলো দলপ্রধান শেখ হাসিনাকে বলছেন না কেন জানতে চাইলে ওই নেতা বলেন, অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর অবস্থানের মধ্যে কথা বলতে গিয়ে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামনে দলের কাউন্সিল। তাই কথা বলতে হচ্ছে অনেক ভেবে-চিন্তে। তিনি জানান, তার সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ নেতারা শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানালেও এখন হতাশায় ভুগছেন নেতাকর্মীরা। অন্য দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ যেভাবে সমালোচনা করছে আওয়ামী লীগকে নিয়ে তাতে করে কমবেশি ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে দলপ্রেমী নেতাকর্মীদের মাঝে। আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অবস্থিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ অফিসে মঙ্গলবার বিকালে গিয়ে দেখা যায়, শুদ্ধি অভিযান নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই একজন শীর্ষ নেতা স্থান ত্যাগ করেন। সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলে পরিচিত যুবলীগের এক প্রভাবশালী নেতার কাছে কথাচ্ছলে সম্রাট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সেলফোনের লাইন কেটে দিয়ে তা বন্ধ করে দেন। পরে তাকে অন্তত ১৫ বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। যুবলীগের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে এড়িয়ে চলছেন অনেকে। সংগঠনের শীর্ষ পদে থাকা একাধিক ব্যক্তি তার সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগ রাখছেন না।