চসিককে নিয়ে ৬৯ অভিযোগ

জমা দেন প্রায় দেড় লাখ টাকা, রসিদ পান ৫৫ হাজারের

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও এলাকায় জহির আহমদের পাঁচতলা ভবন। ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এই ভবনের গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ওই বছরের ২৮ জুন করপোরেশনের কর আদায়কারীকে সব টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাকে রসিদ দেওয়া হয় ৫৫ হাজার টাকার। বাকি টাকার কোনো হিসাব নেই। চার বছর ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ধরনা দিয়েও এর সমাধান পাননি প্রবাসী জহির আহমদ। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে এই অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের সেবার মান, পরিচ্ছন্নতা, দরপত্র ও পদোন্নতিতে অনিয়ম, নালা দখলসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৬৯টি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শাহ আলম বীর-উত্তম মিলনায়তনে দুদক ও মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, চট্টগ্রাম এই শুনানির আয়োজন করে। শুনানির আগে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আলম নিজামী ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম। শুনানি উপলক্ষে কিছুদিন আগে থেকে অভিযোগ জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার টানানো হয়। এই সময় অভিযোগগুলো জমা পড়ে। শুনানিতে আবদুল মতিন নামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের লেকসিটি প্রকল্পে পস্নট দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে ৩৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন করপোরেশনের সার্কেল-৫ এর কর কর্মকর্তা (বর্তমানে বরখাস্ত) জানে আলম। শুনানিতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে জানে আলমকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান আছে। দুই মাসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি এবং ভুক্তভোগীর টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে করপোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেন দুদক কমিশনার আমিনুল ইসলাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি দুদকে অভিযোগ করেন, করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ বসাক ৫০ টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি ওয়ে ব্রিজ (গাড়িসহ মালামাল মাপক যন্ত্র) স্থাপন ও সরবরাহের কাজ দিয়েছেন এক চাচাতো ভাইকে। এ ছাড়া জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে সুদীপ বসাককে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার তিন সহকর্মী। এসব অভিযোগ উপস্থাপনের আগে সুদীপ বসাককে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি বলেন, সবকিছু নিয়মনীতি মেনে হয়েছে। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে এক সপ্তাহের মধ্য প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন কমিশনার আমিনুল ইসলাম। শুনানিতে ডা. জাকির হোসেন সিটি করপোরেশন হোমিওপ্যাথিক কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ করেন এক ব্যক্তি। লালখান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ এফ কবির আহমেদ ওরফে মানিকের বিরুদ্ধে মসজিদের জায়গায় জোরপূর্বক দোকান নির্মাণ, রেলওয়ের জায়গা দখলের অভিযোগ করেন সালামত মিয়া নামের এক ব্যক্তি। জেলা প্রশাসককে এই ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেন দুদক কমিশনার। শুনানিতে পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কার্যক্রম এবং রাজস্ব বিভাগের বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্সে অতিরিক্ত টাকা আদায়, হয়রানি, গৃহকর বৃদ্ধির ব্যাপারে অভিযোগ করেন একাধিক ব্যক্তি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।