বেসিকের টাকার হদিস না মেলায় আটকে অভিযোগপত্র

দুদক সচিবের ব্যাখ্যা

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের লোপাট হওয়া অর্থের একটা বড় অংশ কোথায় গেছে, তা নয় বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়েও বের করতে পারেনি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে আলোচিত এই ঋণ কেলেংকারির ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৬ মামলায় অভিযোগপত্র দিতেও দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। 'বেসিককান্ড' নিয়ে দুদক ব্যর্থ হয়েছে বলে সরকারদলীয় সাংসদ ফজলে নূর তাপসের ক্ষোভ প্রকাশের একদিন পর মঙ্গলবার সাংবাদিকদের মুখোমখি হন সংস্থাটির সচিব। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাপস সোমবার বলেন, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ছাড় পাওয়ায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে দুদক চেয়ারম্যানের সরে যাওয়া উচিত। মঙ্গলবার দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সচিব দিলোয়ার বখত বলেন, "আপনারা যে মামলার কথা বলেছেন সেগুলো জটিল প্রকৃতির মামলা। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে বেশিরভাগ টাকাই নগদ উত্তোলন হয়েছে, এ টাকাগুলো কোথায় ব্যবহার হয়েছে কিংবা জমা হয়েছে আমাদের কর্মকর্তারা তা বের করতে পারেননি।" "তদন্ত কর্মকর্তারা টাকার লিংক খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা কোথায় গেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে, তার লিংক বের করা সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।" ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের পর দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিলেন, বেসিক ব্যাংকের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। বাকি অনেক টাকা উদ্ধার হওয়ার পথে। দুদক সচিব বলেন, "এ টাকাটা যখন চেকে নিয়েছে, উত্তোলন করার পরে টাকা যদি ব্যাংকে রাখা হতো তাহলে উৎস পাওয়া যেত। টাকা নিয়ে একেকজন একেক কাজে ব্যবহার করেছে, সেখানে মানিল্ডারিং হয়েছে। কাজেই অর্থের উৎস খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় বিলম্ব হয়ে থাকে।" ব্যাংকটির তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুকে কেন মামলায় আসামি করা হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, "অর্থের উৎস, অর্থ কোন জায়গায় ব্যবহার হয়েছে, কোথায় সম্পদ হিসেবে কনভার্ট হয়েছে- সেগুলো নিষ্পত্তি শেষে বা যাকে আইনের আওতায় আনার মতো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাবে, তাকে চার্জশিটভুক্ত করা হবে।" দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করে ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সচিব দিলোয়ার বখত বলেন, "আমরা সংবাদে দেখেছি যে কমিশন শপথ ভঙ্গ করেছে এমন বক্তব্য এসেছে। আমাদের কোনো কমিশনার বা চেয়ারম্যান শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। "এগুলো (মামলা) আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। এর দায়দায়িত্ব কমিশন বা চেয়ারম্যানের ওপর বর্তায় না। সুতরাং এক্ষেত্রে পদত্যাগের প্রশ্ন কেন আসছে বুঝতে পারছি না।" ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত সময়ে ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আবদুল হাই বাচ্চু। আর তখনই ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ঋণপত্র যাচাই না করে, জামানত ছাড়া জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া, নিয়ম না মেনে ?ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ২০১০ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে কমিশন। সেসব মামলার আসামির তালিকায় ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা থাকলেও বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে সেখানে না রাখায় প্রশ্ন ওঠে সে সময়। এরপর বিভিন্ন মহলের সমালোচনা এবং উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাঁচ দফা বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা তারা পায়নি। কিন্তু তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য বাচ্চুকে দায়ী করেছিলেন। এক মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টও বাচ্চুকে আসামি না করায় উষ্মা প্রকাশ করেছিল।