রাজনীতিতে আবারও ভারত বিরোধিতা

সবচেয়ে সরব বিএনপি

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও ভারত বিরোধিতা প্রকাশ্যে জোরালভাবে দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ সময় পর বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছে। দলটির নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলো বাদ দিয়ে একতরফা কিছু সিদ্ধান্ত হওয়ায় বিএনপি তার প্রতিবাদ করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বা সরকারের পক্ষ থেকে ভারতের সঙ্গে সিদ্ধান্ত বা চুক্তিগুলো নিয়ে বারবার ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও কেন ভারত বিরোধিতা, এ প্রশ্নে দলগুলোর পাশাপাশি বিশ্লেষকরাও বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরছেন। বিএনপি তিনদিন আগে ঢাকায় যে সমাবেশ করেছে, এর মূল বিষয়ই ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিবাদ করা। সমাবেশে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যেই ছিল ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কড়া সমালোচনা। সাত-আট বছর পর বিএনপি আবার প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে এ সমাবেশ করে। ২০১২ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সে সময় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিলিস্ন সফর করেছিলেন। এরপর থেকে জেলে যাওয়া পর্যন্ত বিএনপি নেত্রী ভারতের বিরোধিতা বা সমালোচনা করে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি। এমনকি চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর নিয়ে বিএনপি আগে রক্ষণশীল অবস্থানে থাকলেও গত বছর যখন এই বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেওয়ার ব্যাপারে চুক্তি হয়, তখন দলটি সতর্ক বক্তব্য তুলে ধরেছিল বিবৃতির মাধ্যমে। কিন্তু এখন আবার ভারতবিরোধী অবস্থান নিয়ে মাঠে নামার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর দিলিস্ন সফরে ভারতের স্বার্থে একতরফা সব চুক্তি হয়েছে, সে কারণে তারা প্রতিবাদ করছেন। 'একতরফাভাবে তো বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব হচ্ছে টু ওয়ে ট্রাফিক। দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রেতো একটা সমতা থাকতে হবে, একটা ন্যায্যতা থাকতে হবে। সেখানে আমরা দেখছি একটা বড় ধরনের অভাব বা ঘাটতি থাকছে।' 'তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে কিছু করা হলো না। কিন্তু হঠাৎ করে ফেনী নদী থেকে পানি দিয়ে দেওয়া হলো। এখানেই মানুষের মধ্যে সন্দেহ ঘনীভূত হয়েছে।' বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, 'বাংলাদেশের জনগণ মনে করে, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব নয়, বরং একটি রাজনৈতিক দলকে তারা আস্থায় নিয়ে তাদের দিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী বিষয়গুলো করিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের যে প্রতিক্রিয়া, সেই প্রতিক্রিয়াই আমরা তুলে ধরছি।' প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের ভারত সফরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইসু্যসহ বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এর বিরোধিতা করে ইসলামপন্থি কয়েকটি দল মাঠে নামে। এর মধ্যে ভারত ইসু্যতে দীর্ঘসময় সতর্ক থাকা বিএনপি আবার মাঠে নামায় তাদের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কারণ দলটির পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ভারতের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি চেষ্টা অনেক সময় দৃশ্যমান হয়েছে। বিএনপি সিনিয়র কয়েকজন নেতা গত বছর ভারত সফরেও গিয়েছিলেন। দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, তাদের সম্পর্ক তৈরির চেষ্টায় ভারতে সেভাবে সাড়া দেয়নি, সে কারণে দলটির এমন চেষ্টার সঙ্গে জড়িত অংশটি কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ফলে বিএনপিতে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি আবার মাথা চাড়া দিয়েছে। বিশ্লেষকদের অনেকে আবার বলছেন, ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যও এটি বিএনপির একটি কৌশল হতে পারে। আওয়ামী লীগ কেন বারবার ব্যাখ্যা দিচ্ছে? আওয়ামী লীগ বা সরকারও ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলো নিয়ে যুক্তি বা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছে। দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেন, 'বিএনপি বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ইসু্য পাচ্ছে না। সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। এটা তাদের সস্তা রাজনীতি।' পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে বিএনপি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সেজন্য সরকার সঠিক তথ্য তুলে ধরছে। তবে দলটির অন্য একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, আওয়ামী লীগ এবং সরকার ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বহাল রাখছে। একই সঙ্গে মানুষের মধ্যে আবার ভারতবিরোধী মনোভাব জোরাল হচ্ছে কি না, সেটাও তারা নজরে রাখছে। বিশ্লেষকদের বক্তব্য বড় প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরির বিষয়টি বিএনপিও বিবেচনায় নিয়েছিল। সেকারণে লম্বা সময় বাংলাদেশে রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা সেভাবে ছিল না। কিন্তু বিএনপির সেই কৌশলে ফল তারা পাচ্ছে না। সে কারণে এখন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের বিষয়গুলোর সুযোগ নিয়ে বিএনপি মাঠে নেমেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রুকসানা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে ভারতের উদাসীনতার কারণে ভারত বিরোধিতা পুরনো পরিবেশ ফিরে আসছে। তিনি বলেন, 'আমাদের প্রধানমন্ত্রী যে ভারত সফর করলেন, তারপর রাজনৈতিক একটা ইসু্য তৈরি হয়ে গেছে। একটা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ বাংলাদেশের বিষয়গুলোতে সমাধান আসেনি। এখন এটা রাজনীতি। এগুলো এখন যে যেভাবে পারবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। বিবিসি বাংলা