ক্ষুধার সূচকে ভারতের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি ডেস্ক বৈশ্বিক ক্ষুধা ও অপুষ্টির সূচকে ভারতকে পেছনে ফেলে অনেক এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। এই সূচকে শুধু বাংলাদেশ নয়, নেপাল ও পাকিস্তানেরও পেছনে আছে ভারত। মানবিক সহায়তা নিয়ে কাজ করে এমন বৈশ্বিক দুটো সংস্থার তৈরি করা ১১৭টি দেশের তালিকা থেকে এ তথ্য জানা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের সূচকেও ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল। চার বছর ধরে ক্ষুধা দূরীকরণে বাংলাদেশ ধারাবাহিক উন্নতি করেছে। খাদ্যনিরাপত্তাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আয়ারল্যান্ডভিত্তিক কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ও জার্মানিভিত্তিক 'ওয়েলথ হাঙ্গার লাইফ' যৌথভাবে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে ক্ষুধার সংজ্ঞা নির্ধারণে চারটি সূচককে আমলে নেওয়া হয়েছে। অপুষ্টি, খর্বাকৃতি শিশুর সংখ্যা, কৃশকায় বা শীর্ণকায় শিশু ও শিশুমৃতু্যর হার। 'গেস্নাবাল হাঙ্গার ইনডেক্স' (জিএইচআই) নামের এই বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। জিএইচআই বা বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুসারে পাকিস্তান ৯৪, বাংলাদেশ ৮৮ ও নেপাল ৭৩ নম্বর অবস্থানে আছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচক অনুসারে যে ১০০ পয়েন্টের এক 'তীব্রতা স্কেল' রয়েছে, যেখানে শূন্য হলো সেরা স্কোর। শূন্য অর্থে, সে দেশে কোনো মানুষ অনাহারে নেই। এই তালিকা থেকে জানা যাচ্ছে, ভারতের স্কোর ৩০ দশমিক ৩। জানানো হয়েছে, ভারতে এই অনাহারের সমস্যা বেশ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ২০১৪ সালে ভারত তালিকায় ছিল ৫৫ নম্বরে। এবার নেমে ১০২ নম্বরে এসেছে দেশটি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১৭টি দেশের ওপর করা গেস্নাবাল হাঙ্গার ইনডেক্সে বলা হয়েছে, ভারত বর্তমানে অবস্থান করছে ১০২ নম্বরে। ওই সূচকে বলা হয়েছে বাংলাদেশে ক্ষুধা কমেছে উলেস্নখযোগ্যভাবে। সূচকে বাংলাদেশের অর্জন ২৫ দশমিক ৮ পয়েন্ট। এর আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশের এই স্কোর ছিল ৩০ দশমিক ৩। ১০০ পয়েন্টের ওপর ভিত্তি করে এই সূচক প্রণয়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে যে দেশ শূন্য স্কোর করে সেই দেশকে সবচেয়ে উত্তম দেশ ধরা হয়। অর্থাৎ সেই দেশে কোনো ক্ষুধার্ত মানুষের বসবাস নেই। আর ১০০ স্কোর করে যে দেশ সেই দেশ সবচেয়ে খারাপ অবস্থায়। অর্থাৎ সেই দেশে ক্ষুধার্ত মানুষের অবস্থা ভয়াবহ। ভারতে এই অনাহারের সমস্যা বেশ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভারতের পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২০১৪ সালে ৭৬টি দেশের মধ্যে ভারত ৫৫ নম্বরে ছিল। এবার নেমে ১০২ নম্বরে এসেছে দেশটি। ২০১৭ সালে ১১৯টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১০০। ২০১৮ সালে ১১৯টি দেশের মধ্যে ১০৩। এবার ১১৭টি দেশের তালিকায় ভারত ১০২ নম্বরে। জিএইচআই সূচক চারটি সূচককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়। তা হলো অপুষ্টি, শিশু মৃতু্য, শিশুদের অপচয় এবং শিশুদের বাড়তে না দেওয়া। এর মধ্যে শিশুদের অপচয় বলতে বোঝানো হয়েছে ৫ বছর বয়সের নিচের শিশুদের, যারা তাদের উচ্চতার তুলনায় কম ওজনসম্পন্ন। এতে প্রচন্ড অপুষ্টিতে ভোগা বোঝানো হয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহৎ জনসংখ্যার কারণে ভারতের জিএইচআই ওই অঞ্চলের ওপরে প্রভাব ফেলে। ভারতে 'চাইল্ড ওয়েস্টিং রেট' অর্থাৎ পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃতু্য বা শিশুদের অপুষ্টিজনিত দৈহিক উচ্চতা ও ওজন হ্রাসের হিসাব ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। সারা বিশ্বের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, ক্যালরির অভাব এবং কম পুষ্টির দিকটি এর থেকে উঠে আসে। এদিকে বিরোধীদলীয় নেতারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় সরকারকে এজিএইচআই প্রতিবেদন নিয়ে তুলোধোনা করেছে। দক্ষিণের রাজ্য কেরালার অর্থমন্ত্রী থমাস আইসাক টুইট করে জানিয়েছেন, ২০১৯ বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের র?্যাঙ্ক আরও নেমে হয়েছে ১০২। প্রধানমন্ত্রী মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই অবনমন। ২০১৪ সালে ভারত ছিল ৫৫ নম্বরে। ২০১৭ সালে তা হয় ১০০। বিশ্বে অনাহার থাকার মানুষের সংখ্যাধিক্য এখন ভারতে। কর্ণাটকের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা সিদ্দারামাইয়াও এই নিয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে টুইট করেন। টুইটে তিনি প্রশ্ন তোলেন, অনেকেই বিশ্বাস করেন 'আচ্ছে দিন আয়েগা'। প্রশ্ন হলো সেই দিন কবে আসবে?