ভোলার ঘটনায় জড়িতদের কাউকে ছাড় নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ভোলায় জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, 'যারাই এ ঘটনায় জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় যারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।' রোববার গণভবনে যুবলীগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ভোলার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটি মহল উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে দেশে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এমন ঘটনা ঘটাতে পারে।' তিনি বলেন, 'দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, তখনই দেখা যাচ্ছে, কিছু ব্যক্তি জল ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। যারা অপরাধী, তাদের কোনো ক্ষমা নেই। আমরা কোনো অন্যায়-অবিচার বরদাশত করব না। দেশকে জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করতে যে অভিযান শুরু হয়েছে, তা চালিয়ে যাওয়া হবে।' সরকার প্রধান বলেন, 'ভোলায় আইডি হ্যাক করা হয়েছে, তিনি জিডি করেছেন। আর যিনি আইডি হ্যাক করেছিলেন, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমার কথা হলো, আইডি হ্যাক করে যিনি নোংরা কথা লিখেছেন, তিনি তো মুসলমান। সত্যি যদি তার ধর্মে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা থাকত, তাহলে রাসুল (সা.) সম্পর্কে তিনি এসব কথা লিখতে পারতেন না। তার পেছনে কারা আছে, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। নবীর বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলে তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।' এ সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নিয়মিত সম্মেলন করার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, 'নিয়মিত সম্মেলন করলে দলে গতি আসে। যুবলীগের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করা হবে।' যুবলীগের নেতাকর্মীদের সবাইকে বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' পড়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ''বঙ্গবন্ধুর 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী', 'কারাগারের রোজনামচা'র পর তাকে নিয়ে গোয়েন্দা রিপোর্টের ওপরে বই বের করা হচ্ছে। ১৯৪৭ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর নামে যত রিপোর্ট আছে, সেগুলোও সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্টগুলোয় প্রায় ৪০ হাজার পাতা ছিল। সব পড়ে মূল কথা দিয়ে মোট ১৪টি খন্ড ছাপানো হবে। এখন পর্যন্ত ৪টি খন্ড ছাপানো হয়েছে।' এই রিপোর্টগুলো থেকে সবাই সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।' তিন বই প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর রুশ ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত 'শেখ মুজিবুর রহমান অ্যান্ড বার্থ অব বাংলাদেশ' এবং 'বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী' গ্রন্থের কপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বই দুটির অনুবাদক ও প্রকাশক রাশিয়ান একাডেমি অব সাইন্সেসের অধীন ইনস্টিটিউট অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের অধ্যাপক ভি নমকিন। রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা করে বইয়ের কপি তার হাতে তুলে দেন অধ্যাপক নমকিন। এ ছাড়া রুশ, বাংলা, ইংরেজি এবং আরবি ভাষায় প্রকাশিত 'কনভারসেশন অব প্রফেসর ড. ভি নমকিন উইথ শেখ হাসিনা' বইয়ের কপিও প্রধানমন্ত্রীকে দেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে সামনে রেখে তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটির ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে শেখ হাসিনাকে অবহিত করেন অধ্যাপক ভি নমকিন। এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি প্রসঙ্গে ড. নমকিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভূতপূর্ব নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নে তিনি অভিভূত। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং রাশিয়ার মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ্র স্থাপনে রাশিয়ার সহযোগিতার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ধরনের বিদু্যৎকেন্দ্র চালনায় বাংলাদেশের প্রশিক্ষিত প্রকৌশলী ও জনবল তৈরিতে রাশিয়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুশ ভাষায় বইগুলো অনুবাদ ও প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়ায় ড. ভি নমকিনকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার সরকার ও জনগণের সমর্থন এবং সহযোগিতা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দরে মাইন অপসারণ করতে গিয়ে রাশিয়ার অনেক সার্ভিসম্যান জীবন উৎসর্গ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের বর্তমান লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে দেশকে উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ করা। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান।