বিএনপির সাড়া না পেয়ে পিছু হটল ঐক্যফ্রন্ট

আজ সোহরাওয়ার্দীতে শোক সমাবেশ হচ্ছে না খালেদার দেখা পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
হাসান মোলস্না যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পাওয়ার কারণে পূর্বঘোষিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আজকের গণশোক সমাবেশ স্থগিত করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত ১৬ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে অনুমতি না পেলেও সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন ফ্রন্ট নেতারা। এ ব্যাপারে বিএনপির সায় থাকলে অনুমতি না দিলেও সমাবেশ করার ঝুঁকি নিতেন তারা। কিন্তু কর্মসূচি সফল করতে বিপুল জনসমর্থন থাকা জোটের একমাত্র দল বিএনপির কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে পিছু হটেছে ঐক্যফ্রন্ট। গত ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐকফ্রন্টকে বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে নাগরিক শোকর্ যালি করতে দেয়নি পুলিশ। এরপরেও ১৬ আক্টোবর সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ২২ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশ ও আবরার হত্যার বিচার চেয়ে দেশে ও দেশের বাইরে গণস্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযানও করার কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা। এর আগে ১২ অক্টোবর বিএনপি সমাবেশের অনুমতি না পেলেও রাজধানীতে সমাবেশ করে। সংগতকারণে জোটের কর্মসূচিতে বিএনপি একই ধরনের আন্তরিকতা দেখাবে ভেবেছিলেন ফ্রন্ট নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় ফ্রন্টের কয়েকজন শীর্ষ নেতা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অনুমতি না পেলেও সমাবেশ করার ঘোষণা দেন। এরমধ্যে এক অনুষ্ঠানে ফ্রন্ট নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না অনুমতি না পেলেও কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু সোমবার বিকেল পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে তার বেইলি রোডস্থ বাসভবনে স্টিয়ারিং কমিটির জরুরি সভা হয়। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেএসডির সভাপতি আ. স. ম. আব্দুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিকল্পধারার আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মোশতাক আহমেদ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দপ্তর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ। সভাশেষে ফ্রন্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার অনুমতি না দেয়ার কারণে মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় গণশোক সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। তবে আগামীতে আন্দোলন প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির নেতৃবৃন্দ দ্রম্নত আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোটের নেতৃত্বে মাঠের রাজনীতি নিয়ে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার তেমন আগ্রহ নেই। তাই ঐক্যফ্রন্টের রাজনীতির সঙ্গে বেশির ভাগ নেতাই সম্পৃক্ত হতে চান না। মূলত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির হয়ে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে থাকেন। বর্তমানে তিনি দেশের বাইরে থাকায় অন্য নেতারা ফ্রন্ট ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে তেমন আন্তরিকতা দেখাননি। সংগত কারণে হুঁশিয়ারি দিয়েও কর্মসূচি স্থগিতে বাধ্য হয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের এক সিনিয়র নেতা জানান, বিএনপি নেতারা আন্তরিকভাবে কাজ না করায় সমাবেশ করা সম্ভব হলো না। তবে বিএনপি মহাসচিব দেশে ফেরার পরে এই সমস্যা কেটে যাবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আগামী ২৪ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এরপরেই সমাবেশ করার চিন্তা করছেন ফ্রন্ট নেতারা। খালেদার সঙ্গে দেখা করবেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এদিকে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সচিবালয়ে দেখা করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ নেতা। সোমবার সাক্ষাৎ শেষে ফ্রন্ট নেতা ও জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সাক্ষাতের অনুমতি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে ফ্রন্টের ৭ নেতা সোমবার বিকাল ৩টায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চতুর্থতলায় মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কক্ষে প্রবেশ করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, জেএসডির যুগ্ম সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুলস্নাহ চৌধুরী, বিকল্পধারার সভাপতি নুরুল আমিন ব্যাপারী এই বৈঠকে আ স ম আবদুর রবের সঙ্গে ছিলেন। সাক্ষাতের পর আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে তার সাথে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সাক্ষাৎ করতে চান। বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা দেখা করতে পারবেন। একসঙ্গে অথবা দুই ভাগে সাক্ষাতের জন্য তিনি আইজি প্রিজনকে বলে দেবেন। রব বলেন, এখন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা আইজি প্রিজনের থেকে অনুমতির অপেক্ষায় থাকবেন। এদিকে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সচিবালয়ে নিজ কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়াকে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবর জানতে ও তার সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বে কয়েকজন এ বিষয়ে কথা বলতে এসেছিলেন। আইজি প্রিজন জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদের জানানো হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকরা জেলকোড অনুসরণ করলে আত্মীয়-স্বজনের বাইরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে অন্যদের দেখা করার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অনেকেই তো উনার (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করেছেন, এ বিষয়টি আইজি প্রিজন দেখবেন। প্রসঙ্গত, গত রোববার মতিঝিলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোটের শীর্ষনেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই সাক্ষাতের অনুমতি নিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ফ্রন্ট নেতারা।