পাপনের সংবাদ সম্মেলন

ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করবেন বিসিবি সভাপতি

দু-একজন ক্রিকেটার ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে। তাদের খুঁজে বের করা হবে ক্রিকেটাররা না খেললে না খেলবে আমাদের কিছু করার নেই জাতীয় দলের ক্যাম্প অবশ্যই হবে ভারতের সঙ্গে সিরিজও হবে

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন -যাযাদি
যাযাদি রিপোর্ট মাঠে চলছে জাতীয় লিগ। জাতীয় দল ভারত সফরে যাবে আগামী মাসে। তার আগে হুট করে দেশের ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ডাকাকে ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সোমবার দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের ধর্মঘট ডাকার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি বলেছেন, 'এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ।' সংবাদ সম্মেলনে বেশ উত্তেজিত কণ্ঠেই পাপন বলেন, 'বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। ওরা এখন চায় ভারত সফরে যদি না যায়, তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কিছুদিনের জন্য সময় চাইছি। সবকিছু প্রকাশ করা হবে।' শোরগোলপূর্ণ এ সংবাদ সম্মেলনে সংবাদকর্মীদের প্রশ্নের নির্দিষ্ট জবাব না দিয়ে নানা রকম উদাহরণ ও পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে কথা বলেন বিসিবি সভাপতি। তার ভাষায়, 'আমরা তো মেনে (দাবি) নিতে প্রস্তুত। এ বিষয়গুলো বলল না কেন। বললে তো আমরা মেনে নেব, তাই।' সংবাদকর্মীদের প্রশ্নবাণের একপর্যায়ে নাজমুল হাসান বলেন, 'আপনারা যে কোত্থেকে কই চলে যান, আমি বুঝি না।' খেলোয়াড়দের ধর্মঘট নিয়ে বিসিবি সভাপতি বেশকিছু কথাই বলেছেন। তার ভাষায়, 'বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই জানে না আসল পরিকল্পনাটা কী। ওরা না জেনেই এসেছে। আসল পরিকল্পনা জানে দু-একজন।' খেলোয়াড়দের উদ্দেশে তিনি সরাসরিই বলেছেন, 'এমন ভাব দেখাচ্ছে যে আমরা কিছুই করছি না। তোমরা না খেললে আমাদের কী করার আছে।' এরপর বিসিবির সাম্প্রতিক কিছু কাজের উদাহরণ টানেন নাজমুল হাসান। বিসিবি সভাপতি আরও বলেন, ধর্মঘট ডেকে 'খেলোয়াড়েরা এ পর্যন্ত সফল। দেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে সফল হয়েছে। ওরা কথা বলার কোনো সুযোগই রাখেনি। সবই পরিকল্পনার অংশ।' তবে ধর্মঘটে একাত্মতা ঘোষণা করা সব ক্রিকেটারই যে জেনেশুনে অংশ নিয়েছেন তা মনে করছেন না বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেন, 'সবাই জেনেশুনে অংশ নিয়েছে বলে মনে হয় না। এটা আমাদের খুঁজে বের করা দরকার (ইংরেজিতে বলেন, উই নিড টু ফাইন্ড আউট)।' সংবাদ সম্মেলনে ক্রিকেটারদের ১১ দফা দাবির একটি একটি করে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন সভাপতি। প্রথম দাবির প্রসঙ্গেই বিতর্কিত এক মন্তব্য করে বলেছেন, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা কোয়াবকে কিছুদিন আগ পর্যন্তও তারা স্বীকৃতি দিতেন না। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দাবিগুলোর প্রসঙ্গে তার মন্তব্য তিনি নাকি সিসিডিএমকে আগেই বলে দিয়েছেন, এসব দাবি মেনে নিতে। বিশেষ বিপিএল প্রসঙ্গে তার মন্তব্য ক্রিকেটাররা নিজেরাই সিদ্ধান্তহীন, তারা কী চান। কিন্তু দেশি বা বিদেশি ক্রিকেটারকে টাকা বেশি বা কম দেওয়ার সিদ্ধান্ত ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর। এ ব্যাপারে বিসিবি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের ব্যাপারে তার মন্তব্য বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চুক্তি করানো বোর্ডের মধ্যে বিসিবি আছে। এতটুকু পর্যন্ত নিজের মতামত জানিয়েই সভাপতি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কথা টেনে আনেন। তার দাবি, এসব দাবি বিসিবিকে জানালেই তারা মেনে নিতেন এবং জেনেই নাকি তারা এ কথা বিসিবিকে জানায়নি। কারণ, দাবি মানলে আন্দোলন করা যাবে না। এভাবে মিডিয়ার সামনে দাবি জানিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং সভাপতি বলছেন তাতে নাকি ক্রিকেটাররা সফল। একদম ভারত সফরের আগে এভাবে আন্দোলন করাকে বিশেষ এক বার্তা হিসেবে দেখছেন সভাপতি। ক্রিকেটাররা নাকি বিদেশি ক্রিকেট কোচদের পছন্দ করেন না। তার ধারণা, দেশি কোচই তাঁদের পছন্দ। পারলে কোচ ছাড়াই নাকি ক্রিকেটাররা খেলতেন। ক্রিকেটারদের একাধিক ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি লিগ চালু করার ব্যাপারে তিনি বলেন, চাইলে চারটিও করবেন। তবে জাতীয় দলের সবাইকে খেলতে হবে। তার ভাষায়, 'আদায় করে টুর্নামেন্ট খেলবে না, এসব ভং চলবে না।' মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে বিসিবি প্রধানের লম্বা বক্তব্য দিয়ে শুরু হয় সংবাদ সম্মেলন। শুরুতেই নাজমুল হাসান বলেন, ক্রিকেটারদের ধর্মঘট তার বিশ্বাসই হচ্ছে না। তিনি বলেন, "দাবি ওরা জানাতেই পারে। খুবই ন্যাচারাল। কিন্তু সেটির জন্য তারা স্ট্রাইকে গেছে, এটা এক্সট্রিমলি শকিং। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমাদের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এমন কিছু হতে পারে।" "ওদের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে। আমার চেয়ে বেশি মনে হয় না কেউ যোগাযোগ রাখে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে শুরু করে সবকিছুতে কথা হয়। আমি তো বহুদূর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও ওদের অ্যাকসেস আছে। বলার কিছু থাকলে ওরা বলতে পারত।" নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'ক্রিকেটারদের জন্য আমরা কি করিনি। এ পর্যন্ত ওদের পারফরম্যান্সের জন্য ২৪ কোটি টাকা বোনাস দিয়েছি। এত টাকা কেউ দেয় নাকি! অথচ তারা টাকার জন্য খেলা বন্ধ করে দিবে? এটা আমার বিশ্বাস হয় না।' পাপন বলেন, 'ক্রিকেটাররা দাবি করেছে- বিপিএলের আগামী আসর ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক হতে হবে। কিন্তু আগেই ঘোষণা করা হয়েছে এবার তা হবে না। এ নিয়ে কিছু বলার দেখি না। তারা স্টেডিয়ামে সুযোগ-সুবিধা চেয়েছে। আর কি সুবিধা দেব তাদের। চট্টগ্রামে জিমনেশিয়াম করে দিয়েছি। সিলেটে জিমনেশিয়াম দেয়া হয়েছে। আমরা নিয়মিত ক্রিকেটের উন্নয়ন করছি। সব অযাচিত দাবিতে আন্দোলন তাদের।' নাজমুল হাসান পাপন বলেন, 'জাতীয় দলের ক্যাম্প অবশ্যই হবে। আমাদের এখানে বেশিরভাগ খেলোয়াড় খেলতে চায়, ক্রিকেটের উন্নতি চায়। দুই একজন ক্রিকেটার হয়তো ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে। খুব শিগগিরই তাদের বের করা হবে। আমি নিশ্চিত অনেকেই না জেনে এখানে যোগ দিয়েছে।' দাবি-দাওয়া নিয়ে বিসিবি আলোচনায় বসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবি প্রধান জানান, 'ওদের জন্য দরজা খোলা। ওরা আসুক, দাবি জানাক। কিন্তু দাবিতো দিলই না, ফোন দিলেও ধরছে না। এই অবস্থায় আমাদের কী করা, আমরা অপেক্ষা করছি।'