রাজধানীর চিত্র

চুক্তিতে গাড়ি চলছে আগের মতোই

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজপথে দুই বাসের রেষারেষি Ñফাইল ছবি
বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি ঢাকঢোল পিটিয়ে চালকদের সঙ্গে চুক্তিতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিলেও কাযর্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। বৃহস্পতিবার নগরীর অধিকাংশ বাস মালিক আগের মতোই নিধাির্রত চুক্তিতে চালকের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিয়েছেন। ফলে নগরীর রাস্তায় দিনভর পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো এবং যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি আগের মতোই চলেছে। যদিও ঢাকা পরিবহন সমিতির শীষর্ নেতারা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের ভাষ্য, প্রথমদিনেই তারা এ নিয়ম শতভাগ কাযর্কর করতে না পারলেও তা অনেকাংশেই বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে দেখা গেছে, একই পথের ভিন্ন কোম্পানির বাসের মধ্যে যাত্রী তোলা নিয়ে রেষারেষি হচ্ছে। প্রতিটি বাসেই আসন সংখ্যার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী তোলা হয়েছে। এমনকি পাদানি ও গেটে হ্যান্ডেলে ঝুলে অনেকে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। অথচ তারপরও গাড়িগুলো স্টপেজ ছাড়াই বিভিন্নস্থানে থামিয়ে গাড়িতে যাত্রী তুলেছে। ট্রাফিক সপ্তাহ এবং বিআরটিএর বিশেষ অভিযানের কারণে সড়কে বাসের সংখ্যা কম থাকায় যাত্রীরাও বাদুর ঝোলা হয়ে গন্তব্যে পেঁৗছতে তাতে ওঠার চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রামপুরা এলাকায় দেখা যায়, ছালছাবিল পরিবহনের দুটি বাস পাল্লা দিয়ে চলছে। অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা সড়কের মাঝামাঝি চলে এসেছেন। তারা সামনের বাসে চড়তে না চড়তেই পেছন থেকে অন্য বাসটি রং সাইড দিয়ে ওভারটেক করে সামনে চলে আসার চেষ্টা করছে। কেউ কেউ চলন্ত অবস্থাতেই সে বাসে চড়ছে। প্রায় একই সময় ভিন্ন কোম্পানির একটি বাস পেছন থেকে দ্রæত গতিতে এসে বিকট শব্দে হনর্ বাজিয়ে সবার আগে যাওয়ার পাল্লায় মেতে ওঠে। আয়াত পরিবহনের একটি বাসকে দেখা যায় চলন্ত অবস্থাতেই যাত্রীদের নামাচ্ছে, আবার চলন্ত বাসেই যাত্রীরা লাফিয়ে উঠছেন। এর মধ্যে পেছনে এসে দঁাড়ায় ল্যাম্পস পরিবহনের একটি বাস। ল্যাম্পস পরিবহনের চালক বিপজ্জনকভাবে আয়াত পরিবহনের বাসটি ওভারটেক করে। আয়াত পরিবহনের সামনে এসে কয়েকজন যাত্রী তুলেই দ্রæতগতিতে চলে যায় ল্যাম্পস পরিবহনের বাসটি। সকালে মালিবাগেও আগের মতো একই কোম্পানির দুটি মিনিবাসের যাত্রী তোলার রেষারেষির চিত্র দেখা গেছে। গণপরিবহনের যাত্রীরা জানান, শুধু মালিবাগ, ফামের্গট কিংবা রামপুরাতেই নয় রাজধানীর বাড্ডা, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, পল্লবী ও কাফরুলসহ সব জায়গাতেই গণপরিবহনের একই ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। নগর সাভিের্সর একাধিক বাস চালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা মালিক সমিতি বৃহস্পতিবার ঢাকঢোল পিটিয়ে চুক্তিতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিলেও বাস্তবে কেউ তার ধারকাছ দিয়েও যাননি। এ অবস্থায় তারা বাধ্য হয়ে মালিকের কাছ থেকে চুক্তিতে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। তাদের নিধাির্রত ভাড়া পরিশোধের পর অতিরিক্ত টাকা তারা (চালক-হেলপার) মুজুরি হিসেবে পাবেন। তাই আগের মতো প্রতিযোগিতা রয়েই গেছে। নাম প্রকাশ না করার শতের্ একাধিক বাস মালিক যায়যায়দিনকে বলেন, যেসব নেতারা বৈঠক করে চুক্তিতে রাস্তায় বাস নামানোর ঘোষণা দিয়েছেন, তারাও কেউ এ নিয়ম মানেননি। এমনকি তাদেরও এ ব্যাপারে কোনো কড়াকড়ি আরোপ করেননি। তাই তারা আগের মতোই চুক্তিতে ড্রাইভারের হাতে গাড়ি তুলে দিয়েছেন। নেতারা সবাই মানলে সাধারণ বাস মালিকরাও চালক-হেলপারদের দৈনিক মুজুরির ভিত্তিতে গাড়ি চালাবেন বলে জানান তারা। তবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছেন, রাজধানীতে চুক্তিতে গাড়ি চালানোর অপরাধে পঁাচটি পরিবহন কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করেছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। বৃহস্পতিবার বিকেলে এসব পরিবহন কোম্পানির নিবন্ধন বাতিল করা হয়। নিবন্ধন বাতিল করা পরিবহন কোম্পানিগুলো হচ্ছে আজমেরী পরিবহন, সুপ্রভাত পরিবহন, স্কাই লাইন পরিবহন, ডিএমকে পরিবহন ও গাবতলী-সদরঘাট (সাত নম্বর রোড) পরিবহন। ঢাকায় এসব কোম্পানির প্রায় ৫০০ বাস ও মিনিবাস চলাচল করে। খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, তদন্তে দেখা যায় এসব কোম্পানি মালিকের কাছ থেকে গাড়ি নিয়ে চুক্তিতে চালাচ্ছে। এ জন্য সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। সায়েদাবাদ, ফুলবাড়িয়া, মিরপুর ও মহাখালী এলাকায় মালিক-শ্রমিকদের চারটি দল পাহারা দিচ্ছে। যেসব পরিবহন চুক্তিতে গাড়ি চালাচ্ছে এবং ফিটনেস সনদ নেই, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রসঙ্গত, বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ করতে বৃহস্পতিবার থেকে চালকদের সঙ্গে চুক্তিতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দেয় ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতি। ফিটনেসবিহীন গাড়িও না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এ সিদ্ধান্ত অমান্য করা হলে সমিতির সদস্যপদ বাতিল করার কথাও বলা হয়।