ট্রেনের টিকিট সোনার হরিণ বিক্রি বেড়েছে বাসের

প্রকাশ | ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
ঈদযাত্রার ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল টিকিটপ্রত্যাশীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রত্যাশিত টিকিট হাতে এক নারীর উচ্ছ¡াস Ñযাযাদি
প্রথম দিনের চেয়ে দ্বিতীয় দিন ট্রেনের আগাম টিকিটের চাহিদা ছিল বেশি। ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা লাইনে দঁাড়িয়ে থেকে অনেকেই কাক্সিক্ষত টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তবে দীঘর্ সময়েও টিকিট পাননি বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাই দুপুরের পর অনেকের চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ। অন্যদিকে গত কয়েকদিনের বাস কাউন্টারে টিকিটপ্রত্যাশীদের কোনো লাইন না থাকলেও বৃহস্পতিবারের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। এদিন সকাল থেকেই কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইন দেখা গেছে। আগের দিন অথার্ৎ বুধবার সন্ধ্যা রাত থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে লাইন ধরেন শত শত মানুষ। কেউ আবার খুব সকালে এসে লাইনে দঁাড়ান। তবে যারা একটু বেলা করে এসেছেন তাদের কপালে ঈদে বাড়ি ফেরার ভরসার টিকিট জোটেনি। সকাল ৯টায় কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় দীঘর্ লাইন কাউন্টার ছাড়িয়ে রাস্তা ছুঁই ছুঁই অবস্থা। সামনে গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতেই বিভিন্ন জন নানান অভিযোগ জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসব অভিযোগের মধ্যে প্রধান অভিযোগ ছিল কালোবাজারি এবং টিকিট বিক্রির ধীর গতির। এমনই একজন অভিযোগকারী দয়াগঞ্জের ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ান। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, ‘সকাল আটটা থেকে টিকিট দেয়া শুরু হলেও এখনো আমরা টিকিট পাইনি। গতকাল রাত সাড়ে বারোটায় এসে লাইনে দঁাড়িয়েছি। এখন নয়টা বাজে। প্রায় ১০ ঘণ্টা দঁাড়িয়েও এখনো কতো পরে টিকিট পাবো তার কোনো হদিস নেই। সামনে যারা টিকিট দেয়ার জন্য বসে আছে তারা যতটানা টিকিট দিচ্ছে তার চেয়ে বেশি আশপাশের লোকজনের সঙ্গে গল্পগুজব আর নাস্তা পানি করাতেই বেশি আগ্রহী। আমাদের যে কষ্ট হচ্ছে সে নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই।’ কাউন্টারে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষার পর কয়েকটি লাইন থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ আসতে শুরু করে। সেখানে গিয়ে জানা যায় এক ঘণ্টা পার না হতেই এসি টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এ সময় লাইনে দঁাড়ানো অনেকেই চিৎকার, চেঁচামেচি করে বলতে থাকে ‘টিকিট সরিয়ে রেখেছে। আমাদেরকে টিকিট দিতে হবে। অন্যত্র বেশি দামে বিক্রির জন্য আমাদেরকে টিকিট দিচ্ছে না।’ পরে অবশ্য তাদের বেশির ভাগই নন-এসির টিকিট নিতে বাধ্য হয়। দুপুর সাড়ে এগারোটার দিকেও আবার লাইনে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে সেখানে গিয়ে জানা যায় নন-এসিরও কয়েকটি রুটের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। আর এ কারণে ওইসব রুটের আর কোনো টিকিট দেয়া সম্ভব নয়। এ সময় ওইসব রুটের যাত্রীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। অনেকে কাউন্টারে গিয়ে চিৎকার, চেঁচামেচি করতে থাকে। আবার অনেকে নীরবে কাউন্টার ছেড়ে চলে যায়। এমন সময়ে চট্টগ্রামগামী মহানগর প্রভাতি ট্রেনের টিকিট নিয়ে আনন্দের সঙ্গে লাইন থেকে বের হওয়া আসলাম মিয়া জানান তার উচ্ছ¡াসের কথা। তিনি এ সময় যায়যায়দিনকে বলেন, ‘অনেক সকালে এসেছি। অনেক রুটেই টিকিট শেষ হয়ে গেছে। ভেবেছিলাম টিকিট পাব না। কিন্তু অবশেষে পেয়েছি। পুরো পরিবারের জন্য চারটি টিকিটই পেয়েছি। ১৮ তারিখে যথাসময়েই বাড়িতে যেতে পারব।’ তার সঙ্গে কথা শেষ করে লাইনের পেছনে এসে একটি জটলা দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে দঁাড়ানোদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা রংপুরে যাওয়ার টিকিট কিনতে এলেও টিকিট শেষ হয়ে গেছে। এদেরই একজন তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘সকাল ৮টায় এসেছি। গতবার এমন সময়ে এসেই টিকিট পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার পেলাম না। কাল আবার আসতে হবে। তা না হলে বাড়ি ফেরা হবে না।’ তোফায়েল হোসেনের মতো অন্য যারা এখানে দঁাড়ানো ছিল তারাও টিকিট পাননি। তাদের ভাষায়, ঈদে বাড়ি ফেরার অগ্রিম টিকিট সোনার হরিণ। যে পায় সে খুবই আনন্দিত হয়। না পেলে পস্তাতে হয়। প্রতিবারের মতো এবারও ১০ দিন আগে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আগামীকাল ১০ আগস্ট শুক্রবার বিক্রি হবে ১৯ আগস্টের টিকিট। এভাবে আগামী ১১ ও ১২ আগস্ট পযার্য়ক্রমে টিকিট মিলবে ২০ এবং ২১ আগস্টের। এই দিনগুলোতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি হবে। জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও মোট টিকিটের ৬৫ শতাংশ দেয়া হচ্ছে কাউন্টার থেকে। বাকি ৩৫ শতাংশের ২৫ শতাংশ অনলাইন ও মোবাইলে। ৫ শতাংশ ভিআইপি। এবং বাকি ৫ শতাংশ রেলের কমর্কতার্-কমর্চারীদের জন্য বরাদ্দ। একজন যাত্রীকে একসঙ্গে সবোর্চ্চ ৪টি টিকিট দেয়া হবে এবং বিক্রীত টিকিট ফেরত নেয়া হবে না। সুষ্ঠু ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধাথের্ ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত রেলওয়ে কমর্কতার্ ও কমর্চারীদের সব ধরনের ছুটি বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবতীর্। আর পবিত্র ঈদুল আজহার ৫ দিন আগে অথার্ৎ ১৮ আগস্ট থেকে ঈদের আগের দিন পযর্ন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেন সাপ্তাহিক বন্ধের দিনও চলাচল করবে বলে জানিয়েছেন কতৃর্পক্ষ। এদিকে গত দুই দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার বাস কাউন্টারের চিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। গত কয়েকদিনে বাস কাউন্টারে গিয়ে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের দেখা খুব বেশি পাওয়া যায়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি কাউন্টারেই কমবেশি যাত্রী আছে। কয়েকটি কাউন্টারে আট-দশজন করে লাইনে দঁাড়িয়ে টিকিট কিনছেন। কাউন্টারের কমর্কতার্রা জানান, গত তিনদিনের তুলনায় এ দিন টিকিটপ্রত্যাশী লোকের সংখ্যা বেশি ছিল। তাদের মতে, দিন যতই যাবে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের সংখ্যাও ততই বাড়বে। বাস কাউন্টারগুলো থেকে জানানো হয়- ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ আগস্টের টিকিটের চাহিদা বেশি। এর মধ্যে কিছু পরিবহনের এসব দিনের টিকিট এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অন্যরা জানিয়েছে, তাদেরও এ চারদিনের টিকিট যেভাবে বিক্রি হচ্ছে তাতে আগামী দু-একদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সায়েদাবাদ বাস টামির্নালের টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস-এর কাউন্টারের একজন কমর্চারী অলিফ সাহা যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আজ টিকিট বিক্রি ভালো। গত তিন দিনে খুব বেশি বিক্রি হয়নি। আগামী কয়েক দিনে বিক্রি আরও বাড়বে।’ টিকিট কিনতে আসা একজন দোকানের কমর্চারী জাহিদুল বলেন, ‘চার-পঁাচজনের একটা লাইনে দঁাড়াতে হয়েছে। খুববেশি সমস্যা হয়নি। তবে সিট একটু বেশি পেছনে পড়েছে। সামনে বসতে পারলে কম ঝঁাকা লাগে। এখন একটু বেশি ঝঁাকা খেয়েই বাড়ি ফিরতে হবে।’