ফের একই কথা বললেন সিইসি নুরুল হুদা

ভোটে অনিয়ম হবে না, এমন নিশ্চয়তা দিতে পারি না

‘আমি তো বাস্তব কথাটা বলেছি। সত্য কথা বলেছি। যদি কোথাও অনিয়ম হবে না বলি-মিথ্যা বলা হবে; আমি তো মিথ্যা কথা বলি না।’ ‘আমার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা বা মন্তব্য করা সবারই ‘গণতান্ত্রিক অধিকার।’ তবে নিবার্চনে অনিয়ম নিয়ে আমার বক্তব্যের কারণে জনমনে শঙ্কা তৈরি হওয়ারও কোনো কারণ নেই।’

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
কে এম নুরুল হুদা
একাদশ সংসদ নিবার্চনে সব দলের অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্ব›িদ্বতা নিশ্চিত করা গেলে অনিয়মও প্রতিরোধ হবে বলে মনে করেন প্রধান নিবার্চন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তবে বাংলাদেশের ‘বাস্তবতায়’ বড় নিবার্চনে (পাবলিক) অনিয়ম ‘একেবারেই হবে না’- এমন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব বলে তিনি মনে করছেন না। বৃহস্পতিবার টেলিফোনে এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সংসদ নিবার্চনে ৪০ হাজার ভোটকেন্দ্র, প্রায় তিন লাখ ভোটকক্ষÑ এত বড় নিবার্চনে কোথাও অনিয়ম হবে না- এমন কথা বললেও মিথ্যা কথা বলা হবে। আমি বাস্তবতার কথা বলছি; অনিয়ম হবে না- এমন নিশ্চয়তা আমি তো দিতে পারি না।’ আসছে ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নিবার্চন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বতর্মান ইসির সামনে। সব দলকে সেই নিবার্চনে অংশগ্রহণে আশা করলেও তফসিল ঘোষণার আগে আর কোনো সংলাপ করা হবে না বলে জানিয়েছেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘ভোটের আগে আর সংলাপ করব না। নভেম্বরের শুরুতে তফসিল হতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক ও প্রতিদ্ব›িদ্বতামূলক নিবার্চন হলে অনিয়ম করার সুযোগও পায় না কেউ।’ ২০১৭ সালের ফেব্রæয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর কুমিল্লা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের ভোট করে প্রশংসিত হয় নুরুল হুদার কমিশন। তবে এরপর খুলনা, গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটির ভোটে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় বতর্মান ইসিকে। এ অবস্থায় বুধবার ভোটের অনিয়ম নিয়ে সিইসির একটি বক্তব্য আলোচনার জন্ম দেয়। সেদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, বড় নিবার্চনে অনিয়ম হবে না- এমন নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়। কোনো নিবার্চনে যদি অনিয়ম হয়, তাহলে নিবার্চন কমিশন নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়। সিইসির এমন মন্তব্যের পর তাকে ‘সংযত’ হওয়ার পরামশর্ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশের বাস্তবতায় সিইসি হয়তো মনে করেছেন- এটাই সত্যি। কিন্তু তার বক্তব্যে আরও সংযত হওয়া দরকার, একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে মূল দায়িত্বে তিনি আছেন। কথাবাতার্ অবশ্য তিনি ভালোই বলেন, তবে ¯িøপ হতেই পারে। আমি আশা করি, তিনি ভবিষ্যতে এ ধরনের বক্তব্য দেবেন না।’ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকষর্ণ করা হলে সিইসি বলেন, ‘আমি তো বাস্তব কথাটা বলেছি। সত্য কথা বলেছি। যদি কোথাও অনিয়ম হবে না বলি-মিথ্যা বলা হবে; আমি তো মিথ্যা কথা বলি না। এখন এ নিয়ে কেউ কিছু বললে বলতে পারে।’ সিইসির বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা বা মন্তব্য করা সবারই ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ বলে মনে করেন কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, নিবার্চনে অনিয়ম নিয়ে তার ওই বক্তব্যের কারণে জনমনে শঙ্কা তৈরি হওয়ারও কোনো কারণ নেই। ‘সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আমাদের যা যা ব্যবস্থা নেয়ার তা নেব আমরা।’ নিবার্চনকালীন সরকারের সময় শুরুর পর সাবির্ক পরিস্থিতি পযাের্লাচনা করে কমিশন ভোটের তারিখ চ‚ড়ান্ত করবে বলে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘অক্টোবর থেকে তো সময় শুরু হবে। নভেম্বরের শুরুতে তফসিল দেয়া হতে পারে। শিক্ষাথীের্দর বাষির্ক পরীক্ষা, বিশ্ব ইজতেমাসহ পরিস্থিতি পযাের্লাচনা করে আমরা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব।’ দলভিত্তিক সিটি নিবার্চনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে নুরুল হুদা বলেন, প্রতিদ্ব›দ্বীরা মাঠে থাকলে ‘যেকোনো অনিয়ম’ প্রতিরোধ হবে। ‘আশা করি, সংসদ নিবার্চন প্রতিযোগিতামূলক হবে। কেউ যদি মাঠেই না থাকে তাহলে তো যারা মাঠে থাকে তাদের অবস্থান বেশি দেখা যায়। প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীর্রা যত বেশি শক্তভাবে মাঠে থাকবে, উপস্থিতি থাকবে; অনিয়ম প্রতিরোধ করবে তারাই।’ নুরুল হুদা বলেন, সিটি নিবার্চনে যেখানে প্রতিদ্ব›িদ্বতা হয়েছে সেখানে অনিয়মও ছিল না। যেখানে প্রতিদ্ব›দ্বীরা মাঠে নেইÑ সেখানে ‘সুযোগ নেয়ার চেষ্টা’ হয়েছে।