সড়কে নৈরাজ্য থামাতে ৩৮ হাজার মামলা

প্রকাশ | ১১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীতে পালিত হচ্ছে ট্রাফিক সপ্তাহ Ñযাযাদি
রাজধানীতে চলছে পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহ। শুক্রবার ছিল ষষ্ঠ দিন। গত পঁাচ দিনে ট্রাফিক আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩২৮টি। আর চার দিনে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৪২ টাকা। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, মানুষ আইন ভাঙছে। তারাও মামলা দিচ্ছেন। মানুষ সচেতন হলে মামলার সংখ্যা কমে আসবে। রাজধানীর মিরপুর, ফামের্গট, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন সাধারণ পুলিশ সদস্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। মামলা দেয়ার পাশাপাশি তারা সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ‘খোকাবাবু যায়, হেলমেট কোথায়?’ ‘অযথা হনর্ বাজাবেন না’, ‘চলন্ত গাড়িতে ওঠানামা করবেন না’, ‘নিধাির্রত স্থান ছাড়া বাস থামাবেন না’, ‘যত্রতত্র রাস্তা পারাপার হবেন না’Ñ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে পথচারী ও যানবাহনের চালকদের উদ্দেশে এসব সচেতনতামূলক বাতার্ প্রচার করা হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সাকর্ ফোয়ারার উল্টো দিকের সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা যানবাহনের নিবন্ধন, লাইসেন্স, ফিটনেস, বীমার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছিলেন। পাশেই পুলিশের রেকার রাখা। দুজন সাজের্ন্ট কাগজপত্র পরীক্ষা করে মামলা দিচ্ছিলেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মোটরসাইকেলের চালকের হেলমেট থাকলেও আরোহীর হেলমেট নেই। এসব ক্ষেত্রে আরোহীর জন্য হেলমেট রাখতে সতকর্ করার পাশাপাশি মামলাও দিচ্ছিলেন সাজের্ন্টরা। দায়িত্বরত ট্রাফিক সাজের্ন্ট রিয়াদ মোশের্দ বলেন, এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ট্রাফিক আইন না মানা, উল্টো দিকে গাড়ি চালানো, লেন অমান্য করাÑ এসব কারণে মামলা হচ্ছে। তিনি জানান, শিক্ষাথীের্দর সড়ক অবরোধ ও কাগজপত্র যাচাই কাযর্ক্রমের পর মানুষ আগের থেকে সচেতন হয়েছে। এখন বৈধ কাগজপত্র নিয়েই রাস্তায় চলাচল করছে। এক ধরনের বদ অভ্যাস থেকে কিছু চালক উল্টো পথে গাড়ি চালান বলে মনে করেন তিনি। তবে নিয়মিত মামলা করার কারণে এসব কমে এসেছে। গাবতলী এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সাজের্ন্ট জসিম উদ্দীন বলেন, ‘শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের কারণে আমরা আগের থেকে বেশি সজাগ আছি। মামলাও হচ্ছে আগের থেকে বেশি। তবে শেষ কথা হচ্ছে, মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে বৈধ কাগজ নিয়ে বাইরে চলাচল করতে হবে। ট্রাফিক আইন মানতে হবে। তাহলে অবস্থার পরিবতর্ন হবে বলে মনে করেন তিনি। কারওয়ান বাজারে একটি মোটরসাইকেল থামিয়ে ট্রাফিক সাজের্ন্ট চালকের কাছে বৈধ কাগজ আছে কিনা, জানতে চাইলেন। চালক আবদুল মান্নান কাগজ বের করে দেখালেন। পরে তার কাগজ যাচাই করে ট্রাফিক সাজের্ন্ট তাকে বললেন, ‘সব ঠিক আছে। আপনি যেতে পারেন। দায়িত্বরত সাজের্ন্ট বললেন, ‘আমরা কাউকে অযথা হয়রানি করছি না। কারও কাগজ ঠিক না থাকলে নিয়মিত মামলা দিচ্ছি।’ সাবির্ক বিষয়ে জানতে চাইলে, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষাথীের্দর আন্দোলনের ফলে পুলিশের নৈতিক ভিত্তি জোরদার হয়েছে। আগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেত না, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হচ্ছে। ট্রাফিক সপ্তাহের মাধ্যমে আমরা জনগণকে সচেতন করতে চাই। জনগণের মধ্যে আইন মানার মানসিকতা গড়ে উঠতে হবে।’ ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথমদিনে মামলা হয় ৭ হাজার ৮১টি, জরিমানা আদায় হয় ৪২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। ওই দিন ৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৭০৮টি গাড়ি রেকার করা হয়। দ্বিতীয় দিন ৭ হাজার ৩১৯টি মামলা হয় ও ৪৬ লাখ ৬৭ হাজার ৭২ টাকা জরিমানা হয়। এ সময় ১৪২টি মোটরসাইকেল আটকসহ ৮৩৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও রেকার করা হয়। তৃতীয় দিনে ৯ হাজার ৪৭০টি মামলা ও ৫৪ লাখ ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করা হয়। ৯৯৯টি গাড়ি ডাম্পিং ও রেকার করা হয়। চতুথর্ দিনে ৯ হাজার ৯৭৪টি মামলা ও ৪৬ লাখ ৩০ হাজার ২০ টাকা জরিমানা হয়। এ সময় ১ হাজার ৫৭টি গাড়ি ডাম্পিং ও রেকার করা হয়। পঞ্চম দিনে ৪ হাজার ৪৮৪টি মামলা হয়।