আবরার হত্যার এক মাস

পরিবারের কান্না এখনো থামেনি

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আবরার ফাহাদ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে আবরার ফাহাদ খুনের ঘটনার এক মাস পূর্ণ হলেও পরিবারের কান্না এখনো থামেনি। বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ছেলে হারানোর কষ্টে মায়ের চোখ অশ্রম্নসজল। বাবা বরকত উলস্নাহ ও ছোটভাই আবরার ফাইয়াজ শোকে কাতর। বাড়িতে ঢুকে দেখা হয় আবরারের বাবার সঙ্গে। তিনি কর্মস্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিন কক্ষের বাড়ির একটি কক্ষ ছিল আবরার ফাহাদের। ওই কক্ষে রাখা হয়েছে আবরারের বুয়েটে ব্যবহৃত বইপত্রসহ যাবতীয় জিনিসপত্র। পাশের কক্ষেই থাকেন মা রোকেয়া খাতুন। ছোটভাই ফাইয়াজ বড় ভাইয়ের ব্যবহৃত বই ও জিনিসপত্রগুলো দেখাচ্ছিল। বলল, 'ভাই ছুটিতে বাড়ি আসার আগে দুটি শার্ট কিনেছিলেন। সেই জামা দুটি এখনো প্যাকেটবন্দি অবস্থায় আছে। এই জামা কোনো দিন আর গায়ে জড়ানো হবে না।' কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে ফাইয়াজ। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বুয়েটে পড়ার ইচ্ছে ছিল এত দিন। তবে ভাইয়ের হত্যাকান্ডের পর সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে ফাইয়াজ। দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে তার। ফাইয়াজ জানাল, আবরার শেরে বাংলা হলের নিচতলার ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। ওই কক্ষের সামনেই সামান্য খোলা জায়গায় স্ট্যাম্প পুতে ক্রিকেট খেলা হতো। ভাই জানালা দিয়ে খেলা দেখতে দেখতে খেলার বিষয়ে কথা বলত। সেই স্ট্যাম্প দিয়েই ভাইকে মেরে ফেলা হলো। বাবা বরকত উলস্নাহ জানান, গত বুধবার আবরারের মামা ও মামাতো ভাই বুয়েটে গিয়েছিলেন। সেখানে বুয়েটের উপাচার্যের কাছে মামলায় আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে আবেদন করা হয়। ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও আরেকজন আইনজীবী নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ মামলা চালানোর ব্যয় বহনের আশ্বাস দিয়েছে। বরকত উলস্নাহর দাবি, ১৯ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। এখনো এজাহারভুক্ত তিন আসামি পলাতক। তাদের যেন দ্রম্নত ধরা হয় এবং মামলাটি যেন দ্রম্নত বিচার ট্রাইবু্যনালে বিচার হয়, সে দাবি জানান তিনি। মা রোকেয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানালেন, 'ব্যাটার সাথে প্রতিদিন কথা হতো। আজ (বৃহস্পতিবার) একটা মাস হয়ে গেল। একটা বার জিজ্ঞেস করে না আম্মু কেমন আছো।' রোকেয়া খাতুন নিজে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পড়েছেন। নিজে নব্বই দশকে বিভিন্ন আন্দোলন, মারামারি দেখেছেন। তবে বুয়েটে তেমন কিছু দেখেননি। সেই আস্থায় ছেলেকে বুয়েটে দিয়ে নিরাপদবোধ করেছিলেন। সেই ছেলেকে বুয়েটে পিটিয়ে হত্যা করা হবে, কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন না তিনি।