বিকল্প বিনিয়োগের বড় বাধা অপসারণ

স্ট্যাম্প ডিউটি ২ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ সারা বিশ্বে এ খাতে জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে দেশে ৮-৯টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছে

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী 'উদ্যোক্তা' হতে চান। কিন্তু তাদের প্রধান সমস্যা মূলধন বা পুঁজি। এ সমস্যার সমাধান হচ্ছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল বা বিকল্প বিনিয়োগ। আর্থিক খাতে ব্যাংক ও পুঁজিবাজারের পরে বিনিয়োগের এ নতুন উদ্যোগই হলো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল। বিভিন্ন দেশে পুঁজিবাজারের পরিধিভুক্ত বিকল্প বিনিয়োগ ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিছুদিন হলো বাংলাদেশে এর পথচলা। এত দিন ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ওপর স্ট্যাম্প ডিউটি ছিল বিনিয়োকারীদের জন্য বড় বাধা। এ বাধা দূর করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত মঙ্গলবার ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ওপর স্ট্যাম্প ডিউটি ২ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করে অফিস আদেশ জারি করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। সংস্থার সিনিয়র সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ১৮৯৯ তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ট্রাস্ট চুক্তিপত্র নিবন্ধনের ওপর আরোপিত স্ট্যাম্প ডিউটি ২ শতাংশের পরিবর্তে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। তবে এটি অনধিক ১০ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকের বিকল্প যে বিনিয়োগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, সেটিকেই বিকল্প বিনিয়োগ বলা হচ্ছে। ধারণা ও চর্চা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এটা মূলত নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে একটি সর্বোত্তম বিনিয়োগ পদ্ধতি। কেউ ব্যবসা বা নতুন কিছু শুরু করতে চাইলে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল হতে পারে তার প্রথম পছন্দ। একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করেন বিকল্প বিনিয়োগ ব্যবস্থাপকরা। উদ্যোক্তাকে বিনা সুদে মূলধন সরবরাহের পাশাপাশি নতুন প্রতিষ্ঠানকে দক্ষতা ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান তৈরির আগ পর্যন্ত সঙ্গে থাকেন তারা। উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠানের ভালো আইডিয়া আছে, সামর্থ্য ও ইচ্ছা আছে; কিন্তু বিনিয়োগের অভাবে তারা আইডিয়াটাকে বাস্তরে রূপ দিতে পারছেন না। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তাদের পাশে দাঁড়ায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদ্যোক্তারা তাদের আইডিয়া, সামর্থ্য, ইচ্ছা, সততা, মেধা ও শ্রম বিনিয়োগ করেন, আর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান অর্থ বিনিয়োগ করে। আইডিয়া স্টেজ, গ্রোথ স্টেজ ও এক্সপানশন স্টেজে এসব বিনিয়োগ করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি। তবে সারা বিশ্বে এ খাতে বর্তমানে ১ হাজার ৬০০ কোম্পানি রয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানির বর্তমান বিনিয়োগ ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে দেড়-দুই বছর আগে আইন পাস হলেও এর জন্য সার্বিক পরিবেশটি এখনো গড়ে ওঠেনি। সারা বিশ্বে এ ধরনের বিনিয়োগ পদ্ধতি প্রচলিত থাকলেও, দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অভ্যস্ততা গড়ে উঠতে সময় লাগবে। দেশের শেয়ারবাজারে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের (ইটিএফ) মতো প্রডাক্টের নীতিমালা প্রণীত হলেও এক্ষেত্রে কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে অল্প সময়ের মধ্যে ভেঞ্চার ক্যাপিটালে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা এগিয়ে এসেছেন। সর্বশেষ তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৮-৯টি প্রতিষ্ঠান বিকল্প বিনিয়োগ তহবিল পরিচালনার নিবন্ধন নিয়ে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ভেঞ্চার ক্যাপিটেলের সূতিকাগার। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৫৮ সালে 'ক্ষুদ্র ব্যবসা বিনিয়োগ আইন' প্রণয়ন করে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ব্যবসা শুরু করে। ভারতে ১৯৯৬ সালে, পাকিস্তানে ২০০১ সালে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল আইন প্রণীত হয়েছে। সিলিকন ভ্যালির ডটকম বিপস্নবের পেছনে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের অবদান অনস্বীকার্য। আমেরিকা উদ্যোক্তার জাতি। ভেঞ্চার ক্যাপিটালের তাই সেখানে রমরমা অবস্থা। অথবা ভেঞ্চার ক্যাপিটালের কারণেই আমেরিকা এত উদ্যোক্তার মুখ দেখতে পেয়েছে। মাইক্রোসফট, স্টারবাক্স, অ্যাপল, ইন্টেল, ফেসবুক, গুগল, ই-বে, আমাজন এ রকম অনেক জগদ্বিখ্যাত কোম্পানির বেড়ে ওঠার পেছনে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের সহায়ক হাত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের ২০১৩ সালে আইটি সেক্টরে ২৩৬০টি কোম্পানিতে ২৭৮৪ ডিলে ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। যার মধ্যে নতুন কোম্পানি ১০০৯টি, যাতে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। মোট বিনিয়োগের ৩৭% সফটওয়্যার, ১৫% বায়োটেকনোলজি, ১০% মিডিয়া এন্টারটেইনমেন্টে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এগুলো নতুন ও উদ্ভাবনী উদ্যোগ। ভারতে ২০১১ সালে ৫৩১টি ডিলে ১৪.৮ বিলিয়ন ডলার ও ২০১২ সালে ৫৫১টি ডিলে ১০.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। তম্মধ্যে আইটি ও আইটি উদ্ভূত সেবা খাতে ২০১১ সালে ২৭% ও ২০১২ সালে ৪০% বিনিয়োগ করা হয়েছে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি দ্রম্নত বর্ধনশীল ব্যবসায় বিনিয়োগ করে বিধায় প্রচুর চাকরি তৈরি হয়েছে।