ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়

বাবরি মসজিদের জায়গায় নির্মিত হবে রামমন্দির

মসজিদ বানানোর জন্য অযোধ্যারই কোনো উলেস্নখযোগ্য স্থানে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে হবে

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
তখনো অক্ষত ছিল বাবরি মসজিদ। অক্টোবর ১৯৯০ -বিবিসি
ভারতের অযোধ্যাতে যে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি নিয়ে বহু বছর ধরে সংঘাত, সেখানে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষেই রায় দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। এর পাশাপাশি মুসলিমদের মসজিদ বানানোর জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে অযোধ্যাতেই অন্য কোনো 'বিকল্প' স্থান। বলা হয়েছে, মসজিদ বানানোর জন্য অযোধ্যারই কোনো উলেস্নখযোগ্য স্থানে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে হবে। এই মন্দির ও মসজিদ বানানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি ট্রাস্ট গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অযোধ্যার যে ২.৭৭ একর জমিকে বিরোধের মূল কেন্দ্র বলে গণ্য করা হয়, তার মালিকানা দেওয়া হয়েছে 'রামলালা বিরাজমান' বা হিন্দুদের ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের শিশুরূপের বিগ্রহকে। যার অর্থ সেখানে রামমন্দিরই তৈরি হবে। ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ শনিবার সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় দেয়। এর আগে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপির শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতেই উগ্র কট্টরপন্থী বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের সদস্যরা অযোধ্যার ওই বিতর্কিত জমির ওপর অবস্থিত বাবরি মসজিদের স্থাপনাটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। বাবরি মসজিদ ভাঙার পর ভারতের নানা প্রান্তে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল তাতে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়। গতকাল রায় ঘোষণার সময় বিচারপতিরা ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া) একটি রিপোর্টও উলেস্নখ করেছেন, যাতে বলা হয়েছিল বাবরি মসজিদের নিচে একটি স্থাপনা ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। তবে সেই কাঠামোটি ঠিক কীসের তা স্পষ্ট নয়। ভারতে ঐতিহাসিকরা মোটামুটি একমত যে, মোগল আমলে বাবরের একজন সেনাপতি মীর বাঁকি ১৫২৮ সাল নাগাদ অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তবে সে দেশের হিন্দু সমাজের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করেন, তাদের আরাধ্য দেবতা শ্রীরামচন্দ্রের জন্মস্থানের ওপরই ওই মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। ভারতের ধর্মীয়-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে বহু দশক ধরে সবচেয়ে বিতর্কিত ও রক্তক্ষয়ী ইসু্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে এসেছে এই বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমি বিরোধ। শীর্ষ আদালতের মাধ্যমে সেই বিরোধের নিষ্পত্তির লক্ষ্যেই সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ শনিবার এই রায় ঘোষণা করে। এদিন রায় ঘোষণার পর অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সদস্য জাফরিয়াব জিলানি জানিয়েছেন, এই রায়ের মধ্যে অনেক 'স্ববিরোধিতা' ও 'তথ্যগত ভুল' আছে বলে তারা মনে করছেন। তিনি বলেন, 'আমরা এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে স্থির করব আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে। সবাই একমত হলে আমরা রিভিউ পিটিশন দাখিল করব'। এদিকে বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন এই রায়কে 'ঐতিহাসিক' বলে বর্ণনা করে একে স্বাগত জানিয়েছে। রায় ঘোষণার পর এদিন সুপ্রিম কোর্টে 'জয় শ্রীরাম' স্স্নোগান দিয়ে হিন্দু সংগঠনগুলোর সমর্থকদের জয়ধ্বনি দিতেও দেখা গেছে। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও শীর্ষস্থানীয় বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং এই রায়কে 'ল্যান্ডমার্ক জাজমেন্ট' বলে বর্ণনা করেছেন। দেশবাসীকে তিনি শান্তি ও সুস্থিতি বজায় রাখারও আহ্বান জানিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চে এর আগে টানা ৪০ দিন ধরে এই মামলার শুনানি হয়েছে। প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা ছিলেন এস এ বোডবে, ওয়াই ভি চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ ও এস আবদুল নাজির। অযোধ্যার বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি যে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে, সেখানে ইতোমধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ১২ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অযোধ্যায় কারফিউ জারি রয়েছে গত প্রায় দুসপ্তাহ ধরে। রায় ঘোষণার আগে প্রধান বিচারপতি গগৈ শুক্রবার রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উত্তরপ্রদেশের শীর্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন। উত্তরপ্রদেশ, দিলিস্ন, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও রাজস্থানসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে গতকাল স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়। শনিবার হওয়ার কারণে বেশির ভাগ সরকারি অফিসেও ছুটি। রায় ঘোষণার আগের রাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করে বলেছিলেন, 'অযোধ্যার রায় কারও জয় বা কারও পরাজয় সূচিত করবে না। দেশের সামনে এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হলো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা'। বিবিসি বাংলা।