সরকারের ২৮ দপ্তরে নজরদারি দুদকের

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দুর্নীতিপ্রবণ ও দুর্নীতির বিষয়ে জনশ্রম্নতি আছে- এমন ২৮টি সরকারি দপ্তরে নজরদারি বাড়িয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সাম্প্রতিক সময় সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখা এসব দপ্তরে তৎপরতা চালাচ্ছে। দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত লোকজনের খোঁজখবর রাখার পাশাপাশি তাদের গতিবিধি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ প্রতিষ্ঠানটির গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধানকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশের পর নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, সরকারের ২৮টি দপ্তরে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত কর্মকর্তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হবে, যাতে তারা ঘুষ খাওয়ার সুযোগ ও সাহস না পান। দুর্নীতি করার ধৃষ্টতা না দেখান। সম্প্রতি শুদ্ধি অভিযান শুরু হওয়ার পর দুদকও নড়েচড়ে বসেছে। গত দেড় মাসে অন্তত ২০ জন সরকারি-কর্মকর্তা কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে প্রতিষ্ঠানটি। দুদক সূত্র বলছে, এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। উচ্চপর্যায়ের রাজনীতিবিদ-আমলাসহ অনেকের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে ২০১২ সালে সরকারের ১১টি প্রতিষ্ঠানে ১১ জন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে ১১টি দল গঠন করেছিল দুদক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), ঢাকা সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, সরকারি আবাসন পরিদপ্তর, সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের দুর্নীতি অনুসন্ধান ও প্রতিরোধে গঠিত দুদকের দলগুলো এসব প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক অনুসন্ধান চালায়। অনেক মামলাও করে। পরে দলগুলো সম্পর্কে নানা অভিযোগ ওঠায় সেগুলো ভেঙে দেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি দুইজন উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে দুটি আলাদা টাস্কফোর্স গঠন করে দুদক। টাস্কফোর্স দুটিও সেভাবে কার্যকর না হওয়ায় সেগুলো বাতিল করা হয়। বর্তমান কমিশন ২০১৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৭ সালের ১৮ জানুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দমনে সংস্থার আট পরিচালকের নেতৃত্বে ১৪টি প্রাতিষ্ঠানিক দল গঠন করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় (ওসিজিএ), বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমান, সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট, আয়কর বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিস্নউটিএ), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ সংস্থা (বিআইডবিস্নউটিসি), ঢাকা ওয়াসা, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ রেলওয়ে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং ঢাকা মহানগরের সব সাবরেজিস্ট্রি অফিস। পরে ২৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, দেশের সব স্থলবন্দর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দুর্নীতি অনুসন্ধানে আরও পাঁচটি দল গঠন করে দুদক। দলগুলোকে কিছু সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি, পরিচালনা পদ্ধতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ-অপচয়ের দিক পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ করা। গত দেড় বছরে দুদকের এসব দল ১৫টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উৎস ও তা বন্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে সেই প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়। এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিআরটিএ, রাজউক, তিতাস গ্যাস, আয়কর বিভাগ, কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, গণপূর্ত অধিদপ্তর, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়, ঢাকা ওয়াসা, বিমান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।