মা-বাবার লাশের জন্য অপেক্ষা দুই ছেলের

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে রাখা বেঞ্চে বিষণ্নমুখে বসে ছিলেন দুই ভাই কাওসার ও সবুজ। পাশে তিন চাচা কেঁদে চলেছেন। ট্রেন দুর্ঘটনার পরপর এই বিদ্যালয়ে যে ৯ জনের লাশ রাখা হয়েছে, তাদের মধ্য কাওসার (২৮) ও সবুজের (২৪) বাবা-মা রয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে কাওসার বললেন, তার বাবা মুজিবুর রহমান ও মা কুলসুম আরা উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শ্রীমঙ্গল থেকে চাঁদপুরে ফিরছিলেন। মুজিবুর-কুলসুমের তিন ছেলের মধ্যে কাওসার বড়। সবুজ ঢাকায় একটি আইসক্রিম কারখানায় কাজ করেন। আর ছোট ছেলের নাম ইয়াসিন (১৮)। তাদের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার রাজারগাঁও উত্তর ইউনিয়নের রাজারগাঁও গ্রামে। কাওসার বলেন, সোমবার রাত ৮টার সময় মা কুলসুম আরার সঙ্গে সবশেষ মুঠোফোনে কথা হয় তার। মা বলেছিলেন, তারা বাড়ি আসছেন। রওনা হয়েছেন। ছেলেকে দুশ্চিন্তা না করতে বলেছিলেন। এর আগের দিন বাবার সঙ্গেও কথা হয়েছিল তার। বাবা তাকে বলেছিলেন, 'মেজ ছেলে সজীব টাকা-পয়সা বেশি খরচ করে ফেলে। ওকে যেন বুঝিয়ে-শুনিয়ে খরচ কমানো হয়।' আহাজারি করে কাওসার বলেন, 'মা বলছিল, বাড়ি আইতেছি, চিন্তা কইরো না।' বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মুজিবুরের তিন ভাই আইয়ুব, ইউসুফ ও মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন। আইয়ুব বলেন, তাদের চার ভাইয়ের মধ্যে মুজিবুর রহমান সবার বড় ছিলেন। তিনি ঢাকা থেকে প্রসাধনসামগ্রী কিনে শ্রীমঙ্গলে বিক্রি করতেন। ২৫ বছর ধরে শ্রীমঙ্গলে স্টেশন এলাকার কাছে একটি বাসায় ভাড়া থেকে ফেরি করে প্রসাধনসামগ্রী বিক্রির কাজ করছেন। স্ত্রী কুলসুম ও দুই ছেলে চাঁদপুরে গ্রামের বাড়ি থাকতেন। এক সপ্তাহ আগে স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে শ্রীমঙ্গল গিয়েছিলেন কুলসুম। সোমবার তারা দুজন একসঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। আইয়ুব বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভাতিজা শাহাদত হোসেন বায়েক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এসে দুজনের লাশ শনাক্ত করে। তার কাছ থেকে মুঠোফোনে খবর পেয়ে তারা লাশ গ্রহণ করতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসেছেন।