ধাপে ধাপে জরিমানা আদায় করবে ট্রাফিক পুলিশ

প্রকাশ | ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ট্রাফিক আইন অমান্যে নতুন 'সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮'তে মামলা দেবে পুলিশ। ইতিমধ্যে মামলা দেওয়ার কিছু প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে সার্জেন্ট ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের। ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ট্রাফিক সার্জেন্টরা সব ধরনের মামলা দেওয়ার কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন। নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে নতুন আইনের মাধ্যমে মামলা দেওয়া হবে। তবে এখন কাগজে লিখে মামলা দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে কাগজে মামলা দেওয়ার ফরম তৈরি করেছে ট্রাফিক বিভাগ। নতুন এ ফরমে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর, অভিযুক্তের নাম, স্থায়ী ঠিকানা এবং মোবাইল নম্বর থাকবে। এছাড়া অপরাধ সংগঠনের সাক্ষীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর থাকবে। এই ফরমে ৯ ধরনের অপরাধের জরিমানার পরিমাণ (সাময়িকভাবে) উলেস্নখ করা হয়েছে। ফরমে আইনের ধারা ৬৬ অমান্য করলে প্রথমবার পাঁচ হাজার এবং দ্বিতীয়বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা দেওয়ার ঘর রাখা হয়েছে। এই ধারাটি ড্রাইভিং লাইন্সেন্স না থাকা, মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স ব্যবহার, ভিন্ন শ্রেণির লাইসেন্স ও 'পেশাদার' লাইসেন্স না নিয়ে গণপরিবহণ চালালে প্রয়োগ হবে। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ও ছয় মাসের কারাদন্ড। ফরমে আইনের ধারা ৭২ ও ৭৫ অমান্য করলে প্রথমবার ১০ হাজার ও দ্বিতীয়বার ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা উলেস্নখ রয়েছে। ৭২ ধারায় রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালালে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ও ছয় মাসের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। ৭৫ ধারায় ফিটনেস না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ থাকাকে অপরাধ বলে গণ্য করা হয়েছে। এ ধারায়ও সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ও ছয় মাসের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। ৮৪ ধারায় মোটরযানের কারিগরি ত্রম্নটি থাকলে প্রথমবার ১৫ এবং দ্বিতীয়বার ৩০ হাজার টাকা জরিমানা নেবে পুলিশ। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন বছরের কারাদন্ড। গাড়িতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত লোড নিলে ৮৬ ধারায় সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা, এক বছরের জেল ও দুই পয়েন্ট কর্তন করার বিধান রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে প্রথমবার এ অপরাধে ডিএমপি ১০ হাজার ও দ্বিতীয়বারের জন্য ২০ হাজার টাকা আদায় করবে। ৮৭ ধারায় বেপরোয়া গাড়ি চালালে ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও তিন মাসের কারাদন্ডের বিধান উলেস্নখ থাকলেও এ অপরাধে ডিএমপি ২,৫০০ এবং দ্বিতীয়বারের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করবে। ৮৯ ধারায় ঝুঁকিপূর্ণ যান চালিয়ে পরিবেশ দূষিত করলে প্রথমবার ছোট গাড়ি ২,৫০০ এবং বড় গাড়ির জন্য পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে ছোট গাড়িকে পাঁচ হাজার ও বড় গাড়িকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হবে। ৯২ ধারায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পান করে ছোট গাড়ি চালালে প্রথমবার এক হাজার ও দ্বিতীয়বার দুই হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। একই অপরাধে বড় গাড়ির চালককে যথাক্রমে তিন হাজার ও ছয় হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে। ৯৫ ধারায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে চালক বা কন্ডাক্টর যদি থাকে ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর না দেয় এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে, তাহলে প্রথমে তাকে পাঁচ হাজার ও দ্বিতীয়বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া নির্ধারিত ফরমে অভিযুক্তের স্বাক্ষর নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনে শুনানির জন্য ডিসি অফিসে হাজির হওয়ার তারিখ দেওয়া হবে। আইনে প্রথম দু'বারের জরিমানা উলেস্নখ করা থাকলেও তৃতীয়বারের কথা উলেস্নখ নেই। সূত্র জানায়, তৃতীয়বার একই অপরাধ করলে নিজ নিজ বিভাগের ডিসি কার্যালয়ে শুনানি অনুষ্ঠানের পর তাকে মামলা, জরিমানা কিংবা সাজা দেওয়া হতে পারে। নতুন ট্রাফিক আইন প্রয়োগের বিষয়ে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রবীর কুমার রায় বলেন, 'নতুন আইন সম্পর্কে ডিএমপি থেকে যে ধরনের নির্দেশনা আসবে আমরা সেগুলো পালন করব। আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে ইতিমধ্যে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এছাড়া সার্জেন্টসহ কর্মকর্তাদের আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।'