দুর্নীতির টাকা দিয়ে ফুটানি চলবে না: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে উত্তরীয় পরিয়ে দেন সংগঠনের দুই নেত্রী -ফোকাস বাংলা
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে, অভিযান অব্যাহত থাকবে। দেশে আর কোনো দুর্নীতি সন্ত্রাস চাঁদাবাজি চলবে না। দুর্নীতির টাকা দিয়ে ফুটানি-ফাটানি চলবে না। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের নীতি হচ্ছে কেউ যেন পেছনে না পড়ে থাকে। সবাই সুন্দরভাবে জীবনযাপন যেন করতে পারে। এজন্য প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চ ডিগ্রি নেয়া পর্যন্ত আমরা উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছি। যাতে অসচ্ছলরাও এগিয়ে যেতে পারে। এছাড়া গ্রামের বিধবা, অসচ্ছল, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা, বয়স্কদের ভাতাসহ নানা সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তরুণ-যুবকরা যাতে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে সেজন্য যুব উন্নয়ন ট্রেনিংসহ নানা সুযোগ দেয়া হচ্ছে।' প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তৃণমূল পর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকার ওষুধ দিয়ে সেবা করছি।' তিনি বলেন, 'দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। এখন নজর দিয়েছি পুষ্টিকর খাবারের দিকে। নারী পুরুষ সমানভাবে যেন তাদের অধিকার এবং সুবিধা পায় সে ব্যবস্থা করেছি। যে যতভাবে বাধা সৃষ্টি করুক না কেন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ এগিয়ে যাওয়ার গতি অব্যাহত থাকবে। মুজিব আদর্শে যারা বিশ্বাসী, দেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব তাদের। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে মর্যাদা দিয়েছেন তা ধরে রাখতে হবে।' তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের অনেক উন্নয়ন করতে পেরেছি। আজকে দেশ হয়েছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। গ্রামীণ মানুষের উন্নয়নে আমার বাড়ি আমার খামার কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। তারা যেন নিজেরা পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে সে পরিকল্পনা নিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি।' স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সেবাদানের মূলমন্ত্র নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করেছিলেন। পরে দলের সঙ্গে মিলিয়ে নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেছি। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন নেতৃত্বে আসবে তারা যেন সেবাদান ও সুশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করে। তাদের দেখে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন একটি সুশৃঙ্খল জীবন গড়তে পারে- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।' শেখ হাসিনা বলেন, যারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি- তারাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর তারা দেশে খুনের রাজত্ব কায়েম করেছে। খুন-ধর্ষণ ছিল তখন নিত্যদিনের ঘটনা। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছে। রাজাকার-আলবদরদের মন্ত্রী বানিয়ে এ দেশের পতাকার অসম্মান করেছে। ১৯ বার কু্য হয়েছে। হাজার হাজার আর্মি অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের যারা মন্ত্রী বানিয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছে সেই বিএনপি এবং রাজাকাররা আর যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশের মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। কারণ তারা ক্ষমতায় এলে আবার জঙ্গিবাদ, খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন শুরু হবে। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নির্মল গুহের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং কৃষিবিদ আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সম্মেলনে সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গাজী মেজবাউল হক সাচ্ছু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মতিউর রহমান মতি, সম্মেলনে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক সালেহ মো. টুটুল। মুক্তিযুদ্ধসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর আগে সম্মেলনের শুরুতেই জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করা হয়। পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে চিন্তার কারণ নেই পেয়াজের ঊর্ধ্বমুখী বাজারদরের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, চিন্তার কারণ নেই। প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পেছনে কোনো চক্রান্ত আছে কি না, সরকার তা খুঁজে দেখতে চায়। শেখ হাসিনা বলেছেন, 'পেঁয়াজের দাম এখন একটা সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। এটা সত্য যে বিভিন্ন দেশে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু আমি জানি না আমাদের দেশে কেন অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারও চক্রান্ত আছে কি না, তা খুঁজে দেখতে চাই।' প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার দেশে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে আনতে বিদেশ থেকে কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করছে। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, 'এ সমস্যার সমাধান করতে আমরা কার্গো বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করছি। পেঁয়াজ ভর্তি বিমান আগামীকাল বা তার পরের দিন দেশে এসে পৌঁছাতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। পেঁয়াজ বিমানে উঠে গেছে, চিন্তার কারণ নেই।' আবহাওয়ার কারণে পণ্যের উৎপাদন বাড়তে বা কমতে পারে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কেউ কেউ আছেন, যাঁরা পেঁয়াজ মজুত করে দাম বাড়ানোর মাধ্যমে দ্রম্নত টাকা উপার্জন করতে চান। কিন্তু তাদের মাথায় রাখা উচিত পেঁয়াজ বেশি দিন মজুত রাখা যায় না, এগুলো পচে যায়। প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, 'দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে ও মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে, তখন কিছু স্বার্থান্বেষী মহল সমস্যা তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি মানুষকে বিভ্রান্ত না হওয়ার ও আসল কারণ খুঁজে বের করার অনুরোধ জানাচ্ছি।' শেখ হাসিনা বলেন, ভারতেও পেঁয়াজের দাম এখন খুব বেশি এবং বর্তমানে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সে দেশে এমন একটি রাজ্য রয়েছে, যেখান থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি নেই... সেই রাজ্যে পেঁয়াজের দাম কম। দুবাই গেলেন প্রধানমন্ত্রী এদিকে দুবাই এয়ার শোসহ আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চারদিনের সরকারি সফরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসক মোহাম্মদ বিন রাশেদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে উপসাগরীয় এ দেশটি সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী সফরসঙ্গীদের নিয়ে দুবাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যর্থনার পর আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে দুবাইয়ের হোটেল শাংরি-লায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুবাই সফরকালে এই হোটেলেই অবস্থান করবেন তিনি। ১৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও সফল এবং এশিয়া ও আফ্রিকার বৃহত্তম এয়ারোস্পেস ইভেন্ট দুবাই এয়ার শো-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ উপলক্ষে সারা বিশ্বের ৮৭ হাজার অংশগ্রহণকারী এবং ১ হাজার ৩০০ এক্সিবিটর দুবাইয়ের ভবিষ্যৎ বিমানবন্দর দুবাই ওয়ার্ল্ড সেন্টারে সমবেত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ১৭ থেকে ২১ নভেম্বর দুবাইয়ের আকাশে দ্বিবার্ষিক এই এয়ারশোটি অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দুবাই সফরে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। এগুলোর দুটি হচ্ছে- দুই দেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি ও দুই দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি এবং আরব আমিরাতের দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাসের স্থায়ী ভবন নির্মাণে জমি বরাদ্দ সংক্রান্ত প্রটোকল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১৮ নভেম্বর আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকাভুক্ত ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণে নির্বাচন কমিশনের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী দুবাইয়ের শাসক ছাড়াও আবুধাবির যুবরাজ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মুহাম্মদ বিন জায়ের আল নাহিয়ান এবং ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের সুপ্রিম চেয়ারওমেন শেখ ফাতিমা বিনতে মোবারকের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সফরকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আরব আমিরাতের বড় বিনিয়োগকারী গ্রম্নপ ও ব্যবসায়ীদের বৈঠকের কথা রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ সফর বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগের ওপর ইতিবাচক প্রভাব রাখবে এবং দুই দেশের বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চার দিনের আমিরাত সফর শেষে ১৯ নভেম্বর রাতে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।