গ্যাসলাইনে দুর্ঘটনা

চট্টগ্রামে বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত

রোববার সকালে পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলার গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আহত অবস্থায় চমেক হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে ৭ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার একটি বাড়িতে গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণে দেয়ালধসে স্বামীর মৃতু্যতে সন্তান কোলে স্ত্রীর আহাজারি ষ আরও ছবি -পৃষ্ঠা-১৬ -ফোকাস বাংলা
চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকার এক বাড়িতে গ্যাসলাইনে বিস্ফোরণে সাতজনের মৃতু্য হয়েছে। রোববার সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ওই বিস্ফোরণ ঘটে বলে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মোহসিন জানান। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জনকে আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পর সেখানে সাতজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বিস্ফোরণে ওই ভবনের নিচতলার দেয়াল ও সীমানাপ্রাচীর ধসে রাস্তার ওপর পড়লে পথচারী ও চলতিপথের যাত্রীরাও হতাহত হন। বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের পাশাপাশি উল্টো দিকের জসীম বিল্ডিংয়ের নিচতলার দোকানও বিস্ফোরণের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দী বলেন, বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলায় সীমানা প্রাচীরের পাশেই ওই বাড়ির গ্যাসরাইজার। বিস্ফোরণটি নিচতলাতেই হয়েছে। তিনি বলেন, 'হয়তো রাইজারে কোনো সমস্যা ছিল, হয়তো লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে জমে গিয়েছিল। সকালে বাসায় কেউ আগুন ধরালে তাতে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে।' নিচতলার বাসিন্দা আহত সন্ধ্যা নাথ ও অর্পিতা নাথের বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, সকালে পূজার ঘরে ম্যাচ জ্বালানোর সময় বিস্ফোরণ ঘটে বলে তারা জানিয়েছেন। পাঁচতলা বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের বর্তমান মালিক অমল বড়ুয়া ও টিটু বড়ুয়া থাকেন ভবনের পঞ্চম তলায়। পৈতৃক সূত্রে তারা ওই বাড়ি পেয়েছেন। ভবনের চতুর্থ তলার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক অঞ্জন কান্তি দাশ জানান, সকালে বিকট বিস্ফোরণের সঙ্গে পুরো বাড়ি কেঁপে ওঠে। তার বাসার জানালার কাচ ভেঙে যায় এবং অনেক জিনিসপত্র মেঝেতে পড়ে যায়। কী ঘটেছে বোঝার জন্য তিনি নিচে নামার সময় দেখেন দোতলার দরজা-জানালাও ভেঙে গেছে বিস্ফোরণের ধাক্কায়। ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইসমাইল বালি বলেন, ব্রিক ফিল্ড রোড সকাল থেকেই ব্যস্ত থাকে। বড়ুয়া বিল্ডিংয়ে যখন বিস্ফোরণ হলো তখন ১৬ ফুট চওড়া ওই রাস্তায় প্রচুর মানুষ আর রিকশা ছিল। বিস্ফোরণের পর ভবনের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে রাস্তায় মানুষের ওপর পড়ে। তারা পিকআপ ভ্যানে করে বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন, তাদের মধ্যে পথচারীও ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত রিকশা এখনো রাস্তায় পড়ে আছে। বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের পাশের দোতলা ভবনের নিচতলার বাসিন্দা প্রিয়া দাশ ও তার তিন বছরের মেয়েও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, 'সকালে মেয়ের সঙ্গে শুয়েছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলো। তারপর জানালা দিয়ে ইটের টুকরো আর আবর্জনা এসে ঢুকল ঘরে। আমার মেয়ের মাথা কেটে গেছে। আমিও আঘাত পেয়েছি।' নিহতদের মধ্যে দুজন নারী, একজন শিশু ও চারজন পুরুষ। তাদের মধ্যে চারজনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত করতে পেরেছে পুলিশ। বড়ুয়া বিল্ডিয়ের কাছেই আরেকটি ভবনে পরিবার নিয়ে থাকতেন পটিয়ার মেহের আটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অ্যানি বড়ুয়া। সকালে ছিল প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ডিউটি। কিন্তু বাসা থেকে বেরিয়ে পথে নামতেই বিস্ফোরণে দেয়ালচাপায় তার মৃতু্য হয়। তার স্বামী শিকলবাহা তাপবিদু্যৎকেন্দ্রের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার পলাশ বড়ুয়াকে হাসপাতালে দেখা যায় হতবিহ্বল অবস্থায়। নজু মিয়া লেইনের বাসিন্দা জুলেখা খানম ফারজানা (৩২) ব্রিক ফিল্ড রোডে গিয়েছিলেন ৭ বছরের ছেলে আতিকুর রহমান শুভকে 'প্রাইভেট' শিক্ষকের বাড়িতে দিয়ে আসতে। বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের দেয়ালচাপায় মা-ছেলে দুজনেরেই মৃতু্য হয়। নিহত নুরুল ইসলাম (৩১) পেশায় একজন রং মিস্ত্রি। তিনি থাকতেন নগরীর শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বাস্তুহারা কলোনিতে। পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডে একটি নির্মাণাধীন ভবনে তিনি রঙের কাজ করছিলেন। সকালে কাজে যওয়ার সময় বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের উল্টো দিকের টং দোকান থেকে তিনি পান-বিড়ি কেনার সময় বিস্ফোরণটি ঘটে। বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলার বাসিন্দা অর্পিতা নাথ ও সন্ধ্যা নাথ ভর্তি রয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির জানান, আহত ১০ জনের মধ্যে ক্যাজুয়ালটিতে ৫ জন, কার্ডিওলজি বিভাগে দুজন এবং অর্থোপেডিক, নিউরো ও বার্ন ইউনিটে একজন করে ভর্তি আছেন। বিস্ফোরণে হতাহতের খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার সিটি করপোরেশন থেকে বহন করা হবে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, বিস্ফোরণের কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জে এম শরিফুল হাসানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরও ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে, যার নেতৃত্বে আছেন উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান।