নতুন সড়ক আইন রোববার থেকে কার্যকর হয়েছে

হুঁশিয়ারি কাদেরের

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শাস্তির বিধান বাড়িয়ে প্রণীত নতুন সড়ক পরিবহণ আইন রোববার থেকে কার্যকর জানিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন সড়ক পরিবহণমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, 'আইনের বাস্তবায়ন দুই সপ্তাহ আমরা একটু শিথিল করেছিলাম। অনেকে হয়ত জানে না, কোন অপরাধ, কোন বিশৃঙ্খলার জন্য কী শাস্তিটা পেতে হবে। তার জন্য আমি দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছি। এখন থেকে আমাদের এই আইন কার্যকর হবে।' রোববার ঢাকার এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা আইন ও সড়ক পরিবহণ আইন শীর্ষক এক আ?লোচনা সভায় এ কথা ব?লেন তিনি। গত বছর ঢাকার সড়কে দুই কলেজশিক্ষার্থী বাসের নিচে পড়ে মারা যাওয়ার পর নজিরবিহীন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে প্রণীত নতুন সড়ক পরিবহণ আইন চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে কাগজে-কলমে কার্যকর হয়। তবে নতুন আইন সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে দুই সপ্তাহ সময় নিয়েছিলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, 'রাস্তায় চলতে গেলে শৃঙ্খলা মানতে হবে। ছাত্র ছাত্রীদেরও দেখি, রাস্তা এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে। এগুলো মোকাবেলা করে আমাকে চলতে হচ্ছে।' 'এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে, এই কাজটি অসম্ভবের মতো হয়ে গেছে। কিন্ত অসম্ভবকে আমি ভালোবাসি। চ্যালেঞ্জকে ভালোবাসতে হবে। সবাইকে বলব আইন মেনে চলতে।' নতুন আইন কার্যকরের ক্ষেত্রে যাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি, সেই পুলিশ স্পষ্ট নির্দেশনা না পাওয়ার কথা বলছে। এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'মোবাইল কোর্টের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার স্বাক্ষর করেছেন, আশা করছি, আজকেই গেজেট হয়ে যাবে। এর পরে কার্যকর করতে আর অসুবিধা নেই।' আগামী ২৪ নভেম্বর এক বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পুলিশকে আইনের প্রয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন বলে জানান সড়ক পরিবহণমন্ত্রী। আইনে শাস্তির মাত্রা বাড়লেও কার্যকরের ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে শাস্তি বাড়ানোর পক্ষপাতী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, 'যারা রাস্তায় কোনো অপরাধ বা অপকর্ম করবে না, তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা ভয়টা দেখাব যাতে তারা শাস্তির ভয়টা পেয়ে আইন ভঙ্গ করতে নিরুৎসাহিত হয়।' 'এখানে গায়ে পড়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। এখানে শাস্তির বিষয়ে প্রথমবারেই বড় জরিমানা হয়ে যাবে, তা না। এমনও হতে পারে অপরাধ কম হলে জরিমানাটা এক হাজার টাকা হবে। আবার এটা বারবার করলে সেখানে জরিমানাটা বাড়বে।' বিষয়টি পুলিশকেও জানানো হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, '২৪ তারিখে টাস্কফোর্সের মিটিংয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়, যাতে আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়, এখানে পুলিশ যেন কোনো এগ্রেসিভ মোড না নেয়।' আইন করে ফাইন করা মুখ্য \হবিষয় নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, আইন করে জরিমানা আদায় মুখ্য উদ্দেশ্য নয়; বরং সরকার চায় সবাই আইন মেনে চলুক। নতুন সড়ক পরিবহণ আইনের মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই প্রধান উদ্দেশ্য। রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দৈনিক সমকাল কার্যালয়ে 'সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের করণীয়' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। নতুন সড়ক পরিবহণ আইনে অধিক জরিমানার প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন সমালোচনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ফাইন করার উদ্দেশ্য আমাদের নয়, সরকার চায় সবাই আইন মেনে চলুক। কাজেই আইন করে ফাইন করা মুখ্য বিষয় নয়, আমাদের উদ্দেশ্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। নতুন আইনের বিষয়ে পরিবহণ সেক্টর সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে সমালোচনা এলেও সর্বত্র আইন মানার প্রস্তুতি চলছে। গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষায় কিংবা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ-তে এখন প্রচন্ড ভিড়। সবার মধ্যেই আইন মানার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে।' সড়ক দুর্ঘটনা পৃথিবীর সর্বত্রই হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'কিন্তু আমরা দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। আমরা চাই, কোনো চালক বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাবেন না, সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি থাকবে না, লাইসেন্স ছাড়া কোনো চালক গাড়ি চালাবেন না এবং সবাই ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। সরকার সবক্ষেত্রেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে। নতুন সড়ক আইন নিয়ে যতই প্রশ্ন উঠে আসুক, আমরা চাই পরিবহণ সেক্টরের সংশ্লিষ্টরা এ আইন মেনে চলবেন। আজকে যারা বিভিন্ন কথা বলছেন, কালকেই তারা সেটি মেনে চলবেন। আমরা সেই অপেক্ষায় থাকব।' বৈঠকে পরিবহণ সেক্টরের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, 'নতুন সড়ক পরিবহণ আইন সংসদে পাস হয়ে গেছে, এটি নিয়ে এখন কিছুই করার নেই। কিছু করতে হলে আবার সংসদে যেতে হবে। আইনটি করার সময় আমরা বহু দেশের সড়ক আইনের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। চালক ইচ্ছা করে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটান তাহলে ৩০২ ধারায় মামলা হবে। জামিনের এখতিয়ারে আমাদের নেই, এটি আদালতে বিচারক দেখবেন। আমরা শুধু আইন করে দিয়েছি। চালকের ভূমিকা পর্যালোচনা করে বিচারক জামিন দেওয়ার বিষয়টি দেখবেন। তবে কোনো কিছুই অপরিবর্তনযোগ্য নয়। আইনে কোনো অসঙ্গতি থাকলে আমরা পরীক্ষা করে দেখব। পরিবর্তনের বিষয়টি যদি যুক্তিসঙ্গত মনে হয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের সড়ক পরিবহণ আইনের সঙ্গে যুক্তিযুক্ত না হয়। তাহলে বিষয়গুলো আমরা বিবেচনা করে দেখব।'