পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫-২০ টাকা কমেছে

খুচরা-পাইকারিতে দামের ব্যবধান ৭০-৮০ টাকা

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
টিসিবির ট্রাকের সামনে পেঁয়াজ কেনার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন। ছবিটি রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবসংলগ্ন সচিবালয়ের সামনে থেকে তোলা -যাযাদি
দেশে পেঁয়াজ নিয়ে চলছে তুলকালাম কান্ড। অবস্থা বেগতিক দেখে ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে সরকার। কিছুদিনের মধ্যেই দেশে পৌঁছানোর অপেক্ষায় সেসব পেঁয়াজ। এটি আশার খবর। তবে হতাশার বিষয় হচ্ছে বর্তমানে দামি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি থেকে অসাধু ব্যবসায়ীদের মর্জি মতোই দাম রাখা হচ্ছে ক্রেতার কাছ থেকে। বর্তমানে খুচরা ও পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দামের ব্যবধান ৭০ থেকে ৮০ টাকা। দুই বাজারে দামের বিস্তর পার্থক্য নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তবে বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের পাইকারি বাজার এখনো চড়া। সেখানে দাম কমলে খুচরা বাজারেও দাম কমে আসবে। আর আমদানিকারকরা বলছেন, পেস্ননযোগে মঙ্গলবারের মধ্যেই পেঁয়াজ আসলে দাম কমবে, নাহলে আরও বাড়তে পারে। তবে, দেশি পেঁয়াজ আসায় সপ্তাহের শেষদিকে বাজার পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন তারা। রোববার রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে এচিত্র উঠে এসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে দেশি পেঁয়াজ ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি চলছে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ থেকে ১৩০ টাকা আর মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। বিপরীতে, রাজধানীর খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি চলছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ২০০ থেকে ২১০ টাকা ও মিশরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম রাখায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। তাদের মতে, নিয়মিত বাজার মনিটরিং আর সরকারি উদ্যোগ নিলে পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতা থাকত না। দাম ক্রেতার নাগালেই থাকত। শান্তিনগর বাজারে জান্নাতুন নাঈম নামে এক ক্রেতা বলেন, গত চার-পাঁচ মাস ধরেই পেঁয়াজের বাজার চড়া। কখনো দাম ১০ টাকা কমছে তো পরের দিন আবার ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়া-কমা নিয়ন্ত্রণ করলেও সরকারিভাবে বাজার মনিটরিং করা হয়নি। তিনি বলেন, যেদিন ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করল, পরের দিনই দাম ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা হয়ে যায়। অথচ, তখন বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি ছিল না। সরকারিভাবে তখন থেকেই উদ্যোগ নিলে বাজার অস্বাভাবিক হতো না। শরিফুল ইসলাম নামে কারওয়ান বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারে এখনো পেঁয়াজের দাম চড়া। সেখানে বাজার স্বাভাবিক হলে খুচরাতেও দাম কমে আসবে। তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন আমদানিকারকরা। শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক শংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, পেস্ননযোগে মঙ্গলবারের (১৯ নভেম্বর) মধ্যেই পেঁয়াজ আসার কথা রয়েছে। এলে বাজার অনেকটাই স্বাভাবিক হবে। এসময়ের মধ্যে পেঁয়াজ না পৌঁছালে দাম আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে, চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে বলে আশা করছেন তিনি। তার মতে, দেশি নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠছে, এ কারণে দাম কমে আসবে। কেজিতে কমেছে ১৫-২০ টাকা এদিকে রোববার ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি। দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ ২০০ টাকা এবং মিশরের পেঁয়াজ ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। গতকাল রাজধানীর জিগাতলা, কারওয়ান বাজার এবং রায়েরবাজার ঘুরে পেঁয়াজের দামে এমন চিত্র দেখা গেছে। জিগাতলা কাঁচাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রেতা আইনাল হক বলেন, দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২৪০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। শনিবার যার দাম ছিল ২৬০ টাকা। মিশরের বড় আকারের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, যা শনিবার বিক্রি করেছেন প্রতিকেজি ২০০ টাকায়। তিনি বলেন, 'গতকাল ভোরে শ্যামবাজার থেকে প্রতিকেজি ১৮ টাকা কমে পেঁয়াজ কিনতে পেরেছি, তাই ২০ কমে বিক্রি করতে পারছি।' তবে এতেও তিনিসহ ক্রেতারা কেউ সন্তুষ্ট নন। কারণ ৩০-৪০ টাকার পেঁয়াজ এখনো বিক্রি করতে হচ্ছে ২৪০ টাকায়। কারওয়ান বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা সামিউল হক বলেন, শনিবারের তুলনায় রোববার সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমেছে। তিনি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ২৩০ টাকায়। শনিবার যা বিক্রি করেছিলেন ২৫০ টাকায়। দেশি হাইব্রিড পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ২০০ টাকায়, শনিবার যা ছিল ২২০ টাকা; পাকিস্তানি প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়, শনিবার ছিল ২০০ টাকা। কারওয়ান বাজারের আড়তদার মেসার্স মাতৃভান্ডারের মালিক কালাম শেখ বলেন, সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা কম। তাই এর প্রভাব খুচরা বাজারেও পড়েছে। কারওয়ান বাজারের আড়তদার মমতাজ এন্টারপ্রাইজের মালিক কাজী মো. মোস্তফা বলেন, 'আমি পাবনা, ফরিদপুর আর রাজবাড়ীর পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকি। এসব দেশি পেঁয়াজের দাম একটু বেশি থাকে। আজ পাবনার বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম।' তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে পাতা পেঁয়াজ ওঠা শুরু করেছে। আর এ মাসের শেষের দিকেই পেঁয়াজ ওঠা শুরু করবে। তখন প্রতিদিন কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমতে শুরু করবে।'