ফারজানা আর শুভ নেই আমার সব শেষ

আইনজীবী আতাউর রহমানের আহাজারি

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
স্ত্রী ও সন্তান হারিয়ে শোকে বিহ্বল আইনজীবী আতাউর রহমান। তার কোলে থাকা আরেক ছেলে বুঝতেই পারছে না কিছুক্ষণ আগে সে মা ও ভাইকে হারিয়েছে -যাযাদি
'আমার সব শেষ, ফারজানা আর শুভ নাই।' আত্মীয়-স্বজনদের মুঠোফোনে ফোন করে মর্মান্তিক এই সংবাদ দিচ্ছিলেন আতাউর রহমান। কিছুক্ষণ আগেও আতাউর রহমানের সব ছিল। স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে তার সুখের সংসার। এখন স্ত্রী ও এক ছেলে হারিয়ে শোকে বিহ্বল তিনি। রোববার সকালে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা এলাকায় একটি ভবনের নিচতলায় গ্যাসের পাইপলাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর দেয়াল ধসে পাশের রাস্তা ও আরেকটি বাড়ির ওপর গিয়ে পড়ে। এতে সাতজন নিহত হন। এদের মধ্যে রয়েছেন আতাউর রহমানের স্ত্রী জুলেখা খানম ওরফে ফারজানা (৩৫) ও বড় ছেলে আতিকুর রহমান ওরফে শুভ (৮)। আতিকুর স্থানীয় সেন্ট ক্ল্যাসিক স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। সকালে তাকে নিয়ে শিক্ষকের বাসায় পড়াতে যাচ্ছিলেন মা জুলেখা। পাথরঘাটা এলাকার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একটি ভবনের নিচতলায় হঠাৎ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভবনের দেয়াল ধসে রাস্তার ওপর পড়ে। এতে মা ও ছেলে নিহত হন। আতাউর রহমান চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী। এই দম্পতির আরেক ছেলের নাম আতিফুর রহমান। সে নার্সারিতে পড়ে। হাসপাতালে এসে বারবার বুক চাপড়াচ্ছিলেন আতাউর। কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, 'আমার সব শেষ হয়ে গেল।' বারবার ছোট ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরছিলেন আতাউর। ফোন করে আত্মীয়-স্বজনদের জানাচ্ছিলেন একসঙ্গে দুই প্রিয়জন হারানোর কথা। আতিফুর রহমানের গৃহশিক্ষিকা অ্যালিনা বিশ্বাস বলেন, ফারজানা ম্যাডাম প্রতিদিন দুই ছেলেকে স্কুলে আনা-নেওয়া করেন। বাসার পাশেই বড় ছেলে আতিকুরকে একজন প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় পড়াতে নিয়ে যেতেন। প্রতিদিনের মতো রোববার সকালে ছোট ছেলে আতিফুরকে স্কুলে দিয়ে এসে বড় ছেলে আতিকুর রহমানকে প্রাইভেট শিক্ষকের বাসায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় মারা যান মা-ছেলে। পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. নোমান বলেন, ছেলের হাত ধরে মা রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ দেয়াল ধসে পড়লে অনেকের সঙ্গে তারা দুজনও নিহত হন। চোখের পলকেই ঘটে গেল এ দুর্ঘটনা। নিহতের স্বামী আতাউর রহমানের বন্ধু লোকমান হোসেন জানান, বাসা থেকে ওই প্রাইভেট শিক্ষকের বাসা কাছাকাছি। তাই হেঁটে ছেলেকে নিয়ে শিক্ষকের বাসায় যান ফারজানা। কিন্তু এটাই যে তাদের শেষ যাত্রা হবে- সেটা কে জানত?