ইডেনে বাংলাদেশ-ভারত গোলাপি টেস্ট আজ শুরু

প্রকাশ | ২২ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

সুলতান মাহমুদ রিপন
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শুরু হচ্ছে গোলাপি বলের দিবা-রাত্রির টেস্ট। মুশফিকুর রহিমের কাছে বড় কিছু আশা করছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো -বিসিবি
ইডেন গার্ডেন্স মানেই ক্রিকেটের মহাকাব্য। ইডেন গার্ডেন্স মানেই ক্রিকেটের আভিজাত্য। আজ ঐতিহাসিক ইডেন গার্ডেন্সের মুকুটে যুক্ত হবে নতুন আরেকটি পালক। উপমহাদেশে প্রথমবার দিবা-রাত্রির টেস্ট আয়োজন করতে যাচ্ছে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্স। আর সেখানে ময়দানি লড়াইয়ে মাঠে নামবে মুমিনুল হকের বাংলাদেশ ও বিরাট কোহলির ভারত। ক্রিকেট ইতিহাসে অসংখ্যবার ইডেনে নতুন রেকর্ড ভাঙা-গড়া হয়েছে। হয়েছে বহু ঐতিহাসিক ম্যাচ। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গোলাপি বলের দিবা-রাত্রির টেস্ট। দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলেনি ভারত, খেলেনি বাংলাদেশও, তাই সমস্থানে উভয় পক্ষ-কলকাতা টেস্ট নিয়ে সফরকারী দলের প্রায় সবার একই কথা। হঁ্যা, স্বাগতিক দল গোলাপি বলে খেলেনি ঠিকই, কিন্তু তাদের খেলোয়াড়রা? স্কোয়াডের ১০ জনের আছে এই অভিজ্ঞতা। বাংলাদেশ দলের ক্ষেত্রে যা শূন্য। ভুল ভাবনায় প্রতিপক্ষকে সমতায় দেখছে না তো রাসেল ডমিঙ্গোর দল? কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দিবা-রাত্রির টেস্টে কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে টাইগারদের জন্য। একেতো ইন্দোরের প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল সফরকারীরা। আজ কলকাতা টেস্ট হারলেই হবে সিরিজ হাতছাড়া। সেই সঙ্গে থাকছে ধবলধোলাইয়ের বড় লজ্জাও! পারবে কি মুশফিক-মুমিনুলরা গোলাপি বলের টেস্টে ঘুরে দাঁড়াতে? এমন সমীকরণকে সামনে রেখে আজ দুপুর দেড়টায় কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বিমানে ওঠার দুই দিন আগে হুট করে একটা দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলতে বললে তো আমরা খেলব না'-অস্ট্রেলিয়ায় গোলাপি বলে টেস্ট খেলার প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া নিয়ে বলছিলেন বিরাট কোহলি। এবার বাংলাদেশের বাস্তবতাও একইরকম। অনেকটা আচমকাই দিন-রাতের টেস্ট খেলতে প্রস্তাব দেয় ভারত। সেবার অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাবে ভারত প্রত্যাখ্যান করলেও এবার ভারতের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সম্মতির কথা জানায় দল দেশ ছাড়ার আগের সন্ধ্যায়! সেবার কোহলিদের ভাবনাটা \হছিল পরিষ্কার। গোলাপি বলে টেস্ট খেলার আগে অবশ্যই প্রস্তুতি ম্যাচ থাকা উচিত। অনুশীলনের যথেষ্ট সময়ও থাকতে হবে। ভারত অধিনায়ক তুলে ধরেছেন সেই যুক্তিগুলো। এবার বাংলাদেশেরও নেই কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ। অনুশীলনের সুযোগ তো মোটে কয়েকদিন। তবু গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জে নেমে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ কলকাতায় শুরু হচ্ছে বহু আলোচিত সেই টেস্ট। গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেইড টেস্ট গোলাপি বলে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিল ভারত। সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার পেছনের ভাবনার কথা জানালেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি, অবশ্যই আমরা গোলাপি বলের ক্রিকেটের স্বাদ পেতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত এটা হচ্ছে। হঠাৎ করে একটা সফরের আগে সূচিতে একটা গোলাপি বলের টেস্ট যুক্ত হতে পারে না। সে সময়ে আমরা গোলাপি বলে এমনকি অনুশীলনও করিনি। প্রথম শ্রেণির কোনো ম্যাচও খেলিনি। গোলাপি বলে টেস্টের অভিজ্ঞতা আমরা প্রথম নিতে চেয়েছিলাম নিজেদের কন্ডিশনে। বল কেমন আচরণ করে, এগুলো যাতে বুঝতে পারা যায়। কিন্তু এটি হুট করে হতে পারে না।' এবার সেই তালিকায় যুক্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোলাপি বলের টেস্ট। ইডেনের বাইরের উড়ছে বিশালাকার গোলাপি বল। ইডেনের আশপাশের পার্ক, মনুমেন্টও গোলাপি আলোতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মাঠে দর্শক ও বিশেষ অতিথিদের স্বাগত জানাবে দুটি গোলাপি মাস্কাট। টসের সময় দুই দলের অধিনায়কের হাতে বল তুলে দেবেন প্যারাট্রুপার। টসও হবে বিশেষ কয়েনে। তবে ওই কয়েনে গোলাপি রঙের কোনো আভা পাওয়া গেল না। সোনার প্রলেপ দেওয়া কয়েন নিয়েই ইডেনে টস করবেন মুমিনুল হক ও বিরাট কোহলি। ইডেনের অসংখ্য মণি-মাণিক্যের মধ্যে নিশ্চিতভাবেই থাকবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার গোলাপি বলের টেস্ট। ভারতের ঘরোয়া একটি টুর্নামেন্টই হয় গোলাপি বলে। টেস্ট স্কোয়াডের ১০ জনের আছে সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা। নেই কেবল অধিনায়ক বিরাট কোহলি, সহ-অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে, ব্যাটসম্যান শুভমান গিল, অফ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও পেসার উমেশ যাদবের। আর সেখানে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে স্রেফ একটি ম্যাচ হয়েছে দিবা-রাত্রির। ২০১৩ সালে বিসিএলের ফাইনালের সেই ম্যাচের কোনো খেলোয়াড় নেই ভারত সফরের দলে। এমনকি এই দলের কেউ কেউ আছেন, যারা এবারই প্রথম দেখলেন গোলাপি বল! আর তাই বাংলাদেশ যেমনটা ভাবছে তা মোটেও ঠিক নয়। ভারতের মাটিতে বড় দৈর্ঘ্যের প্রথম দিবা-রাত্রির ম্যাচে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন মোহাম্মদ শামি। সন্দেহ নেই, তিনি হবেন অন্যতম বড় হুমকি। গোলাপি বলে সেঞ্চুরি-ডাবল সেঞ্চুরি, পাঁচ উইকেট-দশ উইকেটের কীর্তিও আছে কোহলির সতীর্থদের। দিবা-রাত্রির টেস্টের আগে দিবা-রাত্রির দুই-তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলারও নজির আছে। বাংলাদেশ এই ম্যাচের আগে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা তো দূরের কথা, পুরো সফরেই পায়নি কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ। একে নেই গোলাপি বলে খেলার অভিজ্ঞতা, সেখানে সবুজ উইকেট বানিয়েছে স্বাগতিকরা। ব্যাটসম্যানদের মনে কাঁপন ধরানোর জন্য যথেষ্ট। বাংলাদেশের পেসার আল আমিন হোসেন মনে করছেন, লড়াইটা মূলত দুই দলের পেসারদের। যারা ভালো করবেন তারাই এগিয়ে থাকবেন কলকাতা টেস্টে। আল আমিনের এই ভাবনাতেই চলে আসছে আরও কিছু বিষয়, যা কলকাতার লড়াইয়ে রাখবে বড় ভূমিকা। ইন্দোরের স্পোর্টিং উইকেটে মোহাম্মদ শামি, উমেশ যাদব ও ইশান্ত শর্মার লাল বলের তোপের সামনেই দাঁড়াতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গোলাপি বলে এমনিতেই পাবেন বাড়তি সুইং, সবুজ ঘাসের উইকেটে তাদের খেলা হবে আরও কঠিন। এখন পর্যন্ত হওয়া দিবা-রাত্রির ১১ টেস্টের মধ্যে পাঁচটি গেছে পঞ্চম দিনে। দুটিতে ফল হয়েছে চার দিনে। তিন টেস্ট শেষ হয়েছে তিন দিনে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ের ম্যাচটি ছিল চার দিনের; শেষ হয়েছিল দুই দিনেই। উপমহাদেশে এটাই হতে যাচ্ছে দিবা-রাত্রির প্রথম টেস্ট। ইন্দোরেই দাঁড়াতে পারেনি মুমিনুলের দল, নতুন চ্যালেঞ্জে কতটা পারবে? সঙ্গে দুই দলের স্কিলের আকাশ-পাতাল পার্থক্য তো আছেই। কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই কঠিন পরীক্ষা অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের সামনে। কলকাতায় নিশ্চিতভাবেই পেসার বাড়াতে হবে। প্রথম টেস্টে একাদশে ছিলেন আবু জায়েদ রাহি ও ইবাদত হোসেন। বাইরে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান ও আল আমিন হোসেন প্রতিদিন গোলাপি বলে অনেকটা সময় ধরে বোলিং করেছেন। আবু জায়েদ ও ইবাদতের চেয়ে গোলাপি বলে তাদের প্রস্তুতি তুলনামূলক ভালো। ইন্দোরে পেস বোলিং নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতোই ছিল আবু জায়েদের পারফরম্যান্স। ইবাদত উইকেট না পেলেও খারাপ করেননি। ২০১৬ সালের পর পরিবর্তন এসেছে ইডেন গার্ডেন্সের উইকেটে। ভারতের প্রথাগত উইকেটের বদলে পিচে রাখা হয়েছে ঘাসের ছোঁয়া। নতুন উইকেট বাংলাদেশের সামনে হাজির হয়েছে বাড়তি চ্যালেঞ্জ নিয়ে। নিজেদের পক্ষে আনতে ইন্দোরে করা অজস্র ভুল ঠিক করে নিতে হবে বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষের বোলিং সামলানোর চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা দেখাতে হবে ব্যাটসম্যানদের। অনেকটাই নিশ্চিত কলকাতায় এর চেয়ে বেশি সুইংয়ের সামনে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে মাহমুদউলস্নাহ-মুশফিকদের। উপলক্ষ রাঙাতে বুক পেতে লড়াই করতে হবে তাদের। আর তাই আজ শুরু হতে যাওয়া ম্যাচটি শুধু সিরিজ বাঁনোর লড়াই নয়, হতে যাচ্ছে অনেকের ক্যারিয়ার বাঁচানোর কঠিন পরীক্ষাও। \হ