আজ সোহরাওয়ার্দীতে সপ্তম কংগ্রেস

যুবলীগের শীর্ষ পদের আশা ছাড়েননি জ্যেষ্ঠ নেতারা

প্রকাশ | ২৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

ফয়সাল খান
যুবলীগের বয়সসীমা ৫৫ নির্ধারণ করা হলেও শীর্ষ পদ পাওয়ার আশা ছাড়েননি জ্যেষ্ঠ নেতারা। সদ্যসমাপ্ত আওয়ামী লীগের অন্য তিনটি সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বও সদ্য বিদায়ী কমিটির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্য থেকেই নির্বাচিত করা হয়েছে। যদিও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩-৪ জন নেতা বাদে সবার বয়সই ৫৫ ছাড়িয়েছে। তবে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে আজ। বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল অধিবেশন শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশনে যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের নাম ঘোষণা করা হবে। মূল অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০ অক্টোবর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুবলীগের সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে বয়সসীমা ৫৫ বছর নির্ধারণ করা হয়। এরই মধ্যে সংগঠনটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্যসহ বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় নেতার বয়সই ৬০ পেরিয়েছে। তখন পদ পাওয়ার আশা ছেড়ে দিলেও কংগ্রেসের আগ মুহূর্তে শীর্ষ পদ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন অনেকেই। বিশেষ করে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদকে ঘিরে তৎপর রয়েছেন ডজন খানেক নেতা। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, বিতর্কের মুখে যুবলীগের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সংগঠনের বাইরে থেকে ক্লিন ইমেজের কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। তবে কাদের শীর্ষ পদে আনা হবে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্ধারণ করবেন। অপর একটি সূত্র বলছে, ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জর্জরিত যুবলীগকে সাংগঠনিকভাবে গোছাতে অভিজ্ঞ নেতৃত্বের বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে শীর্ষ পদের জন্য বয়সসীমা কিছুটা শিথিল করা হতে পারে। এই আশায় সভাপতিমন্ডলীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা মুখিয়ে আছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য যায়যায়দিনকে বলেন, অন্য সংগঠন থেকে এনে নেতৃত্ব দেয়ার ইতিহাস খুব কম। নেত্রী চাইলে বয়সসীমা কিছুটা শিথিল করে অন্তত এক মেয়াদের জন্য হলেও যুবলীগ থেকে সিনিয়র কাউকে দায়িত্ব দিতে পারেন। তবে কাকে যুবলীগের দায়িত্ব দেয়া হবে তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আগ্রহের সীমা নেই। কারো মতে, আওয়ামী লীগের অন্য তিনটি সহযোগী সংগঠনের সদ্য সমাপ্ত সম্মেলনের মতো কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দু'জনকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। আবার কেউ বলছেন বয়সের কারণে বর্তমান কমিটির বেশিরভাগ নেতাই বাদ পড়বেন। সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখ আসতে পারে। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটি থেকেই কাউকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। যুবলীগের গত ছয়টি কংগ্রেসের মধ্যে চারটিতেই চেয়ারম্যান পদে আসেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার নিকটাত্মীয়রা। এবারও আলোচনায় আছেন শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ। তাছাড়া যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের দুই ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাইমের নামও শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে বয়সসীমা শিথিল করে হলে চেয়ারম্যান করা হতে পারে পার্টির সপ্তম কংগ্রেস বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মজিবুর রহমান, ফারুক হোসেন ও অ্যাডভোকেট বেলাল হোসেনসহ সিনিয়রদের মধ্য থেকে কাউকে। এর মধ্যে মুজিবুর রহমান চৌধুরী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সংগঠনটির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১/১১ সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ফারুক হোসেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এক-এগারো সরকারসহ জিয়া, এরশাদের সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাত বছরের বেশি কারাভোগ করেছেন। এর আগে যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ (মহি), মামুন অর রশীদ, সুব্রত পাল এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউজ্জমান বদি। তাছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে ইসহাক আলী খান (পান্না), বাহাদুর বেপারী, অজয় কর খোকনের নামও আলোচনা করছেন নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে বেশি আলোচিত হচ্ছে মহিউদ্দিন আহমেদ (মহি) ও বাহাদুর বেপারীর নাম। ১৯৯৮ সাল থেকে চার বছর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বাহাদুর বেপারী। মহি ২০০৩ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে প্রায় ৯ বছর ঢাকা মহানগর যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এদিকে আজ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কংগ্রেস বাস্তবায়নের জন্য ১১টি উপ-কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত উপ-কমিটিগুলো নিজ নিজ বিভাগের কাজ প্রায় শেষ করেছে। মঞ্চ ও গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে নানা ধরনের ব্যতিক্রমী পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। নির্মাণাধীন স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আদলে তৈরি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মূল মঞ্চ। ওই মঞ্চে প্রধান অতিথিসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বর্ণিল সাজে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশ সাজানো হয়েছে। মনিটরের মাধ্যমে আগত সব কাউন্সিলর এবং ডেলিগেটদের সামনে দেখানো হবে। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠনের প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪। তখন মাত্র ৩৩ বছর বয়সে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল হক মণি। ওই সময় যুবলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সসীমা ছিল ৪০ বছর। ১৯৭৮ সালে দ্বিতীয় কংগ্রেসে ওই বিধানটি বাতিল করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ৬৪ বছর বয়সী ওমর ফারুক চৌধুরী, বর্তমানে তার বয়স ৭১। তা ছাড়া সংগঠনে সিনিয়র নেতাদের বেশিরভাগেরই বয়স ৬০ পার হয়েছে।