আজ হানাদারমুক্ত হয় ফুলবাড়ীসহ ৬টি এলাকা

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট আজ ৪ ডিসেম্বর। মহান মুক্তিযুদ্ধের এ দিনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীসহ দেশের আরও ৬টি স্থান পাক হানাদারমুক্ত হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধ এক ভিন্নমাত্রা পেতে শুরু করে। একের পর এক শত্রম্ন ঘাঁটির পতন ঘটিয়ে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে মুক্তাঞ্চলগুলোতে সমবেত হতে শুরু করেন। ছক কষা শুরু করেন চূড়ান্ত বিজয়ের। এই দিনে হানাদারমুক্ত হওয়া অন্য এলাকাগুলো হলো জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর, লক্ষ্ণীপুর, শেরপুরের ঝিনাইগাতী, গাইবান্ধার ফুলছড়ি এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুর। ১৯৭১ সালের এ দিনে চারদিকে ছিল বীর বাঙালির বিজয় আর পাকহানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর। ১৯৭১ \হসালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার এবং রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ দিনাজপুরের ফুলবাড়ী মুক্ত হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পর্যদস্তু হতে থাকে উর্দুভাষী হানাদাররা। ইতিহাসের সাক্ষ্য মতে, ভারতীয় মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ফুলবাড়ী উপজেলার জলপাইতলি, রুদ্রানী, পানিকাটা, দেশমা, জলেশ্বরী, মিরপুর, রানীনগর এবং আমড়াসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে এসে পাক-হানাদার ও রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের ওপর চতুর্মুখী আক্রমণ চালায়। আক্রমণের মুখে পাক সেনারা নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে ফুলবাড়ীর শাখা যমুনা নদীর লোহার সেতু ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে রেলপথে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায়। ট্রেনটি ধ্বংসের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকটি মর্টার ও সেল নিক্ষেপ করলে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে ট্রেনটি বেঁচে যায় এবং সৈয়দপুরে গিয়ে পৌঁছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সময় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ২০ নম্বর সেতু উড়িয়ে দেওয়ার জন্য; কিন্তু নানা কারণে সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ীকে হানাদারমুক্ত ঘোষণা দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে উলস্নাস করেন। যমুনার সেই সেতুর ধ্বংস হওয়া অংশ প্রায় ২ থেকে ৩ মাইল দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে। সেতুটি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে যমুনা নদীর বুকে। একাত্তর সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর ও বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় পাকিস্তানি পাকবাহিনী হানা দিয়ে হত্যা করে অসংখ্য নিরীহ বাঙালিকে। পরদিন ২৬ মার্চ হত্যাযজ্ঞের খবর বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পেরে ফুলবাড়ীতে বাঙালিদের মধ্যে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে সেদিন সকালে ফুলবাড়ী শহরে বের হয় বিশাল প্রতিবাদ মিছিল। ২ এপ্রিল পাকবাহিনী ফুলবাড়ী আক্রমণ করে পুরো ফুলবাড়ীকে নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর থেকে শুরু হয় বাঙালির ওপর দখলদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার হত্যা, লুট, ধর্ষণসহ নানা নির্যাতন। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে তারা মুক্ত করেন ফুলবাড়ীকে।